স্মৃতি প্রক্রিয়া ও জিনের সম্পকর্

আমরা স্মৃতি নিমাের্ণর প্রক্রিয়ার সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি। স্মৃতির রয়েছে নানা রকম- সকম। প্রথমেই চলে আসে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে তথ্য মানুষ গ্রহণ করে সেই তথ্যের স্মৃতি। এই স্মৃতিকে বলা হয় সেনসরি মেমোরি অল্প কয়েক সেকেন্ডের এই মেমোরি। এই মেমোরি পরে স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি এবং দীঘর্স্থায়ী স্মৃতি প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যায়। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি হচ্ছে তাই যা অল্প কিছুসময় মনে থাকে। যে স্মৃতি নিমাের্ণ নতুন কোনো জিনের প্রয়োজন পড়ে না। দীঘর্স্থায়ী স্মৃতি হচ্ছেÑ সেই স্মৃতি যে স্মৃতি অনেকক্ষণ ধরে মনে থাকে এবং অনেক সময় সারাজীবন ধরে মনে থাকে...

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

পাবর্নী দাস
জেনেটিক মেমোরি বলে আরেক ধরনের স্মৃতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণা করছেন। এই স্মৃতির অস্তিত্বের বিষয়ে তারা একমত হলেও, কিভাবে এই স্মৃতি কাজ করে তা সুস্পষ্ট করতে আরো সময়ের প্রয়োজন হবে। জেনেটিক মেমোরিকে মনোবিজ্ঞানীরা সেই ধরনের স্মৃতি বলছেন যে স্মৃতি নিমাের্ণ ইন্দ্রিয় অনভ‚তির কোনো ইনপুট নেই। জন্মের পর শিশুর মধ্যে ভাষাসহ বেশকিছু স্মৃতি প্রোথিত থাকে। এ স্মৃতি জেগে ওঠে পরিবেশ থেকে ইনপুট এলে। জেনেটিক মেমোরিকে এক ধরনের বায়োলজিক্যাল মেমোরিও বলা যেতে পারে। যাই হোক, স্মৃতি ও শিক্ষার সঙ্গে জড়িত আরেকটি বিষয় খুবই চিত্তাকষর্ক। তো হলো টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার সঙ্গে স্মৃতি ও শিক্ষাকে জড়িত করে ফেলা। প্রতিটি ইন্দ্রিয় এমনকি মটর অঞ্চলে স্নায়ুগুলোর একটি বিশেষ উপস্থাপনা তৈরি হয়। একেক এলাকায় একেকটি উপস্থাপনা। এই উপস্থাপনাগুলোর প্রতিছবি আবার মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় পরিচালনা অঞ্চল প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স সব উপস্থাপনাগুলোর সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা হয়। এই উপস্থাপনাকে বলা যেতে পারে মানসিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় একটি জায়গা। যেখানে চিন্তন ঘটে, ঘটে পরিকল্পনা আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো উচ্চতার কগনিটিভ কাযর্ক্রম। প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্সর এই জায়গাটি চিন্তন পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি স্মৃতি নিমাের্ণর সঙ্গেও রয়েছে এই উপস্থাপনার যোগসূত্র। এই উপস্থাপনায় অন্যান্য অঞ্চলের উপস্থাপনা এবং তথ্য আসে কাযর্করী স্মৃতি হিসেবে। কী কী কাযর্করী স্মৃতি একটি কেন্দ্রীয় উপস্থাপনায় কোনো মুহ‚তের্ আসতে তা নিভর্র করে পরিস্থিতি, পরিবেশ এবং মনোযোগের ওপর। বলা যায়, প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার মাধ্যমে সচেতন দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। স্মৃতির বংশগতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দুটো জিনের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছেন। জিন দুটি হচ্ছে এপিওই (অচঙঊ) অ্যাপিলিপ্রোটিন ই জিন এবং কিবরা জিন। দুটো জিনই প্রোটিন সম্পকির্ত কাযর্ক্রমে সক্রিয় থেকে ভ‚মিকা রাখে স্মৃতি প্রক্রিয়ায়। অথার্ৎ স্নায়ুকে স্মৃতি সংরক্ষণ এবং স্মৃতি ব্যবহারে পারদশীর্ করতে একটি জিনগ্রæপ কাজ করে। সেই জিনগ্রæপের অন্যতম সদস্য হচ্ছে এপিওই ও কিবরা জিন। স্মৃতি সম্পকির্ত রোগ যেমন অ্যালকোইমায়মসহ নানারকম রোগ সেগুলো ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছেÑ এপিওই, কিবরা প্রভৃতি জিনের ত্রæটির মাধ্যমে। স্মৃতিবিষয়ক ধারণার অন্যতম অজর্ন হিসেবে কাযর্করী স্মৃতিকে (ড়িৎশরহম সবসড়ৎু) অনেক বিজ্ঞানী দেখে থাকেন। মস্তিষ্ক কোনো স্মৃতিকেই হারিয়ে ফেলে না। সচেতন মনে হোক, আর অবচেতন মনেই হোক মস্তিষ্ক প্রতিটা স্মৃতিকে ধরে রাখে। সচেতন স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখে অবচেতন স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখে পরিবতির্ত প্রোটিনের মাধ্যমে। তারপর আমরা যদি স্মৃতির অন্য বিভাজনগুলোকেও বিবেচনায় নেই যেমন সেনসরি মেমোরি, জেনেটিক মেমোরি প্রভৃতি (মেমোরি টিকা বক্স দৃষ্টব্য) সব স্মৃতিকেই মস্তিষ্ক ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কাযর্করী স্মৃতিতে রূপান্তর করতে পারে। কাযর্কর স্মৃতির কেন্দ্রীয় পরিচালনা (ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ) হয়ে থাকে উচ্চতর মস্তিষ্কে বা সেরেব্রাল কটেের্ক্স। মূল পরিচালনাটা হয় ফ্রন্টলি লোপে একেবারে সামনে প্রিফ্রন্টাল কটেের্ক্স। প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্সর কাজ পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে সেরেব্রাল কটেের্ক্সর অন্যান্য লোব বা অংশ অথার্ৎ টেমপোরাল লোব, প্যারেইটলি লোব এবং অক্সিপিটাল লোব। কাযর্করী স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে যে ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ তা আসলে পুরগে স্মৃতিকে ঝালিয়ে নেয়া, নতুন স্মৃতি তৈরি করার অন্যতম ধাপ। স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করার জন্য হিপোকাম্পাস আসলে ঈবহঃৎধষ বীবপঁঃরড়হ-এর সহযোগিতা নেয়। তবে ঘুমের মধ্যে যখন হিপোকাম্পাস স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিকে দীঘর্স্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করে তখন ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ ঢ়ৎবপবহং-এর সাহায্য নেয় কিনা তা নিয়ে বিতকর্ রয়েছে। এ সংক্রান্ত গবেষণা এখনো চলমান। আম্পি ডালা ইমোশনাল মেমোরি তৈরির সময় ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হÑএর সাহায্য নেয়। ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-কে অনেক বিজ্ঞানী সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূবর্ ধাপ হিসেবে বলে থাকেন। এই পূবর্ ধাপকে তারা বলার চেষ্টা করছেন চিন্তনের ধাপ বা পরিকল্পনার ধাপ। ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-এর মাধ্যমে চিন্তন বা পরিকল্পনা করে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে বা প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া যেগুলো অবচেতনভাবে হয় মানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় সেগুলো প্রিফ্রন্টলি কটেের্ক্স ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ-এর প্রয়োজন পড়ে না। মধ্য মস্তিষ্ক থেকে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সেগুলো সংঘটিত হয়ে থাক। ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হÑএর সময় একটি একক স্নায়ু প্রতিনিধি আসতে পারে, আবার স্নায়ু দলের মাধ্যমে গঠিত টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা বা লুপ (ঞড়ঢ়ড়মৎধঢ়যরপধষ ঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ ড়হ ষড়ড়ঢ়)-এর প্রতিনিধি আসতে পারে। এই প্রতিনিধি এসে গঠন করে কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা (ঈবহঃৎধষ ঃড়ঢ়ড়মৎধঢ়যরপধষ ঢ়হবংবহঃধঃরড়হ)-এই কেন্দ্রীয় টপোগ্রাফিক্যাল উপস্থাপনাই হচ্ছে মানুষের (অন্য অনেক জীবেরও) মানসিক কাযর্ক্রমের ভিত্তি। এটা যেহেতু মানসিক কাযর্ক্রমের ভিত্তি তাই এটা চিন্তনের ভিত্তি। এটা পরিকল্পনার ভিত্তি। এটা ব্যক্তিত্বেরও ভিত্তি। একজন ব্যক্তি কিরূপ হবে তা নিভর্র করে সে তার অভিজ্ঞতাকে কিভাবে ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ করে। সে কিভাবে ঈবহঃৎধষ ঊীবপঁঃরড়হ করে তা তার কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক উপস্থাপনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়। প্রতিটা মুহ‚তের্র জন্য, আবার প্রতিটা বিষয়ের জন্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিদ উপস্থাপনা তৈরি হয়। তাই একজন মানুষ তার সারাজীবনে অসংখ্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক উপস্থাপনা করে। এই কেন্দ্রীয় স্নায়ুবিক উপস্থাপনাগুলোও মস্তিষ্কেও মেমোরি সিস্টেম স্মৃতি গঠন বা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধরে রাখে। দেখা যায়, পুরনো কেন্দ্রীয় উপস্থাপনাকে স্মৃতি থেকে ধরে নিয়ে এসে নতুন উপস্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।