বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আর হাসান
পিএইচডি করতে করতে মাস্টাসর্ ডিগ্রিটা নেয়া বা না নেয়া অনেক জায়গাতেই ছাত্রের ইচ্ছার ওপর নিভর্র করে। যেমনÑ আমার গ্র্যাড স্কুল ইউনিভাসিির্ট অব ইলিনয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টাসর্ করতে হলে ৬টি কোসর্ আর থিসিস লিখতে হতো। অনেক জায়গায় আবার ৬-৭টি কোসর্ করলেই মাস্টাসর্ নেয়ার সুযোগ আছে। আমার কমর্স্থল টঅইতে ৩৬ ক্রেডিটের কোসর্ করলে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টাসর্ পাওয়া যায়। এবারে দেখা যাক, মাস্টাসর্ আর পিএইচডির মধ্যে সুবিধা-অসুবিধা কেমন। মাস্টাসর্ পযাের্য় ফান্ড পাওয়াটা বেশ কঠিন। মাকির্ন অথর্নীতির এ দুদিের্ন মাস্টাসর্ পযাের্য়র ফান্ড প্রায় গায়েব হয়ে গেছে। কাজেই মাস্টাসের্ ভতির্ হলে অন্তত প্রথম সিমেস্টারে ফান্ড পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই নাগালের বাইরের পযাের্য়। স্টেইট ইউনিভাসিির্ট, অথার্ৎ রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় টিউশন কম। যেমনÑ ইউনিভাসিির্ট অব ইলিনয়ে এক সিমেস্টারে খরচ পড়ে ৩ থেকে ৬ হাজার ডলার, তবে বিদেশি ছাত্রদের জন্য বেশি চাজর্সহ মোট ফি ১০-১২ হাজার ডলারের মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলে সে ফির পরিমাণ বেড়ে যাবে অনেকখানি। আমার একসময়ের কমর্স্থল জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দিতে পারি, এখানে মাস্টাসর্ পযাের্য় প্রতি সিমেস্টারের ফি ২২ থেকে ২৫ হাজার ডলার। মাস্টাসের্ প্রথম সিমেস্টারে ভালো কাজ দেখিয়ে প্রফেসরের কাছ থেকে রিসাচর্ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (আরএ) জোগাড় করতে পারলে টিউশন মাফ হতে পারে, আর বেতনও পাওয়া যেতে পারে। পক্ষান্তরে, পিএইচডিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফান্ড দেয়া হয়, টিচিং/রিসাচর্ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ বা ফেলোশিপের মাধ্যমে। এর সঙ্গে টিউশন ফিও মাফ করা হয়। যা বেতন দেয়া হয়, তা খুব বেশি নয়, তবে এদিক-সেদিক করে বিদেশি ছাত্ররা ভালোই থাকতে পারেন। মাস্টাসের্ ফান্ড দেয়া কম হয় বলে ভতির্র কড়াকড়িও কম, অ্যাডমিশন পাওয়া সহজ। পক্ষান্তরে পিএইচডির অ্যাডমিশন পাওয়াটা কঠিন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কয়েকশ মাস্টাসর্ ছাত্র থাকেন, কিন্তু পিএইচডি ছাত্র নেয়া হয় জনা দশেক-বিশেক প্রতি বছরে। মাস্টাসের্ সময় লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। আর পিএইচডিতে জায়গাভেদে ৫ থেকে ৭ বছর। কাজেই ভেবে নিন, আপনার হাতে এতটা সময় আছে কি না। জব মাকেের্টর অবস্থা পাল্টায় নিয়মিত। আর বিষয়ও পাল্টে যায়Ñ আজ যে বিষয়টি একেবারে হট টপিক, ৫ বছর পরে সেটার কথা ভুলে যেতে পারে সবাই। মাস্টাসর্ ও পিএইচডি পযাের্য়র খাটুনির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। মাস্টাসের্র কোসর্ রিকয়ারমেন্ট পিএইচডির প্রায় অধের্ক, আর থিসিসের পাথর্ক্যও বিশাল (অনেক জায়গায় কোসর্ করলেই চলে)। মাস্টাসের্র থিসিস প্রায় ক্ষেত্রেই একটি মাত্র প্রজেক্টনিভর্র, যেখানে পিএইচডি থিসিসে একাধিক রিসাচর্ পেপারের কাজ নিয়ে বেশ বড় আকারের কাজ করতে হয়। এক সিমেস্টার খেটেই এক্সপেরিমেন্টসহ মাস্টাসর্ থিসিস অনেকে লিখে ফেলেন, যেখানে পিএইচডির গবেষণা শেষ হওয়ার পরে থিসিস লিখতেই অনেকের এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। কাজেই কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার মতো উদ্যম বজায় রাখতে পারবেন কি না, তা আগেই ভেবে দেখুন। আপনার লক্ষ্য যদি হয় কোনো মাকির্ন কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া, তাহলে তার জন্য মাস্টাসর্ করাই যথেষ্ট। অধিকাংশ চাকরির জন্য মাস্টাসর্ ডিগ্রি হলেই চলে। আর ২ বছর পড়েই চাকরির বাজারে ঢুকতে পারছেন, যা বড় একটা সুবিধা। অনেক চাকরিতেই পিএইচডি থাকাটা কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয় না। উদাহরণ দিইÑ গুগলে বিএসসি, মাস্টাসর্ বা পিএইচডি সব রকমের লোকজনই নেয়া হয়। মাস্টাসের্র চেয়ে পিএইচডিতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় বেশি লাগে। কাজেই আজ যিনি মাস্টাসর্ নিয়েই ঢুকছেন সেখানে, ৩-৪ বছর পরে স্টক অপশন, বেতন, আর বোনাস সব মিলে কয়েক মিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকবেন। অধিকাংশ টেক কোম্পানিতেই পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে শুরুতে অল্প একটু বেশি বেতন থাকে, কিন্তু ৩-৪ বছর আগে যোগ দেয়া মাস্টাসর্ ডিগ্রিধারীরা সে সময়টাতে তার চেয়ে অনেক বেশিই সুবিধা পেয়ে গেছেন। গুগলে যখন ইন্টানির্শপ করতাম, তখন অনেক গ্রæপের ম্যানেজারকে দেখেছি মাস্টাসর্ বা ব্যাচেলসর্ করা, যেখানে তাদের অধীনে কাজ করা অনেকেই আবার পিএইচডি করা। কাজেই চাকরির বাজারের অনেক জায়গাতেই পিএইচডি বা মাস্টাসের্র কোনো পাথর্ক্য নেই। আমার দুই ছাত্র সম্প্রতি আমার অধীনে টঅই থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টাসর্ করে দুই খ্যাতনামা কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে।