গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার মন্ত্রে যারা উজ্জীবিত

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

এম. আতহার নূর
আজকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণার প্রতি অনীহা, নতুন জ্ঞান উদ্ভাবন ও বিচরণের প্রতি অনাগ্রহ একটি ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী অসুস্থ রাজনীতি আর দলমত চর্চায় সোনালি শিক্ষাজীবন নাশ করে দিচ্ছে। ফলে অন্ধকার ভবিষ্যৎ আর অদক্ষ গ্র্যাজুয়েট বের হওয়ার এক অপসংস্কৃৃতি শিক্ষাব্যবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। কথিত আছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নন। এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ নেই, এমন অনেক কথার চাউর আছে। কিন্তু এ পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আগের তুলনায় এখন আরও বেশি গবেষণামুখী হচ্ছে। দৃষ্টান্তে বলা যায়, হাজারো তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও রাহবার হয়ে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্ট্যাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) অগ্রযাত্রার কথা। কয়েকজন উদ্যমী তরুণ শিক্ষার্থীর হাতে গড়া ক্লাবটি সম্প্রতি চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশে তৃণমূল পর্যায়ে গবেষণা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। ইতোমধ্যে পাড়ি দিয়েছে চারটি সোনালি বছর। বিগত বছরগুলোতে নানা প্রভাবশালী উদ্যোগ, কর্মসূচি, অর্জন এবং জাতীয় মঞ্চে পুরস্কার ও স্বীকৃতি নিয়ে একাকার হয়ে উঠেছে তরুণ গবেষকদের এই সংগঠন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কর্তৃপক্ষ একমাত্র সহযোগী হিসেবে সিইউআরএইচএসকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনা মেলা২০২৩। এখানে অংশ নিয়েছে চবির ৪০টি বিভাগ, ৩৫টি ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি-বেসরকারি আরও ২০টি প্রতিষ্ঠান। এবং গবেষণা কর্ম প্রদর্শনীর শেষে চট্টগ্রামের ৪০ জন সেরা গবেষককে পুরস্কৃত করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। এ ছাড়া গতবছর দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী, গবেষক ও গণিতবিদ অধ্যাপক ডক্টর জামাল নজরুল ইসলামের স্মরণে দেশের প্রথমবারের মতো আয়োজিত জামাল নজরুল ইসলাম জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলনের গর্বিত আয়োজক হিসেবে সাড়া বেশ ফেলেছে সিইউআরএইচএস। মূলত, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসম্মত গবেষণা প্রশিক্ষণ, দেশের বাইরে বিভিন্ন স্কলারশিপের তথ্য প্রদান এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে সংগঠনটি। যাত্রা শুরুর পর প্রায় দুই বছরে ৩৫টির বেশি সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে সংগঠনটি। বিদেশের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা ও বৃত্তি সম্পর্কিত নানা তথ্যে ভরপুর ছিল সেসব সভা, সেমিনার। এসব অনুষ্ঠানে হাজির হন হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, টেক্সাস, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বনামধন্য গবেষকরা। এ ছাড়া গত বছরে তরুণ গবেষকদের উন্নয়নে আয়োজন করে শরৎকালীন গবেষণা ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম। এতে আবেদন করেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১২০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সুযোগ পান। বিজ্ঞান, প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা ও পরিবেশ, কলা ও সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন এবং মাল্টিডিসিপিস্ননারি- এ রকম পাঁচটি ক্ষেত্রে ১৮ জন খ্যাতনামা শিক্ষক ও গবেষকদের তত্ত্বাবধানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা মূলত গবেষণার সুযোগ পান। এই বিশাল সংখ্যাই বলে দেয়, শিক্ষার্থীরা এখন গবেষণামুখী বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার সদস্যের পরিবারে পরিণত হয়েছে সিইউআরএইচএস। সংগঠনটি দীর্ঘ ৪ বছরে ক্রমাগত পরিবর্তন ও উন্নয়নের মধ্যদিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। ইতোমধ্যে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক সাক্ষাৎকারে ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা তরুণ গবেষক তাকবীর হোসেন বলেন সামনের দিনগুলোতে আমরা আন্তর্জাতিক গবেষণা সভা করার মানসে এগিয়ে যাচ্ছি। তরুণদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আলোকবর্তিকা হিসেবে বিপস্নব সৃষ্টি করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বে স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ ও প্রজন্ম তৈরি করতে পারব।