প্রোগ্রামিংয়ে সেরাদের গল্প
প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
মতিউর তানিফ
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা ৪৫। ৫ ঘণ্টার লড়াইয়ের দু' ঘণ্টা গত। ১৬২ টিমে ৪৮৬ প্রতিযোগীর চলমান লড়াইয়ে শীর্ষস্থান তখন 'বুয়েট সম্মোহিত'র দখলে। দ্বিতীয় 'ডিইউ ক্রোনোস', তৃতীয় আইওআই-১। পাশার দান উল্টে গেল ঘণ্টাখানেক পরেই। বেলা ১টা ৫০, ফলাফল বোর্ডের শীর্ষে (প্রথম স্থান) তখন ঠিক ৬০ মিনিট আগে তিনে থাকা 'আইওআই-১'; দ্বিতীয় কিছুক্ষণ আগেও চারে থাকা 'ডিইউ নট রেডি ইয়েট' এবং তৃতীয় 'ডিইউ ক্রোনোজ'। এরপরের ধারাক্রম হলো- বুয়েট সম্মোহিত, ব্রাক-ইউ ক্রোস, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাস্ট-মায়েম, আইইউটি স্স্নো ফ্লুরিয়ার ট্রান্সফর্ম। না। শীর্ষ তিন তখনও চূড়ান্ত নয়। যা বুঝতে ও জানতে অপেক্ষা করতে হলো আরও পৌনে দুই ঘণ্টা। ঘড়ি তখন কাটায় কাটায় ৩টা ৪০। চূড়ান্ত বোর্ডে চ্যাম্পিয়ন পাঁচ ঘণ্টার লড়াইয়ের অধিকাংশ সময় শীর্ষে না থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম 'ডিইউ ক্রোনোজ'। দ্বিতীয় একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি 'ডিইউ নট রেডি ইয়েট' এবং তৃতীয় 'বুয়েট সম্মোহিত'।
এগিয়ে থেকে পিছিয়ে পড়া, পেছন থেকে শীর্ষে ওঠা- উত্থান- পতনের এমন প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়েই গত ১১ মার্চ দিনব্যাপী শেষ হলো আন্তর্জাতিক কলিজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট- আইসিপিসি। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত প্রোগ্রামিংয়ের অলিম্পিয়াডখ্যাত এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ১০ স্থান অর্জনকারী অন্য টিমগুলো হলো-
আইওআই ১ (অনারেবল মেনশন), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির টিম ব্রাক-ইউ ক্রোস, আইইউটি স্স্নো ফ্লুরিয়ার ট্রান্সফর্ম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাস্ট বঙ্কক্লাউড, বুয়েট হ্যালোবাইট এবং সাস্ট বার্লেক্যাম্পমেসি ও সাস্ট মায়হেম। কেমন ছিল সেরাদের সেরা হওয়ার এই লড়াই? গল্পচ্ছলে সেই কথাই জানালেন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান, ইয়ামিন কায়সার ও ভোলানাথ দাস। বিজয়ী তিনজনের মধ্যে সাকিব চতুর্থ বর্ষ এবং ইয়ামিন ও ভোলানাথ দাস তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ইয়ামিন কায়সার জানান, গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইসিপিসির রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ার এক মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর মাসে আমাদের টিমটি গঠন হয়।
তখন থেকেই ভালো কিছু করার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেটা যে এত ভালো হবে, ভাবিনি। ইয়ামিন বলেন, প্রতিযোগিতার শুরুর দিকে পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাদের সবার সম্মিলিত চেষ্টায় পরক্ষণেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি জানান, আমরা প্রতি সপ্তাহেই একটি প্রোগ্রামিংয়ে অংশ নিয়ে থাকি। এভাবেই আমরা এবারের আইসিপিসি প্রতিযোগিতায় ভালো করেছি।
বিজয়ী আরেক শিক্ষার্থী ভোলানাথ দাস বলেন, দুই-আড়াই মাস আগে যখন টিমটি গঠন করি, তখন থেকেই একটা স্বপ্ন দেখছি।
প্রত্যাশা ছিল, প্রথম ১০ টিমের মধ্যে থাকব বা থাকা উচিত। কিন্তু সেটা যে প্রথম হবে, সেটা কল্পনায় ছিল না। ভোলানাথ আরও বলেন, বিভাগের উদ্যোগে সপ্তাহে দুই দিন (শনিবার ও সোমবার) পাঁচ ঘণ্টা করে প্র্যাকটিস করেছি। এ ছাড়া ছুটির দিন শুক্রবার আলাদা করে সময় দেওয়া হয়েছে। মূলত এভাবেই প্রথম স্থান অর্জন করেছি।
আয়োজক কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ার ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডক্টর মো. সাইফুল আজাদ বললেন, গোটা বিশ্বে আইসিপিসি এখন জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা। বিষয়টি আরও ভালো অনুধাবন করা যায় এখানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে। তিনি জানান, জানুয়ারিতে যখন প্রিলিমিনারি টেস্টের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়, তখন মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১২৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৪৮ টিমের অধীনে ৬ হাজার ৫৯২ জন প্রতিযোগী ও কোচ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ফেলে। এতেই বোঝা যায়, আমাদের শিক্ষার্থীরা
প্রোগ্রামিং নিয়ে কতটা উৎসুক। রিজিওনাল কনটেস্ট ডিরেক্টর (আরসিডি) ডক্টর আমিনুর রহমান ও এআরডিসি ডক্টর নাজিব আব্দুন নাসির বললেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু প্রোগ্রামিং শিখবে তা নয়; চতুর্থ শিল্প চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও তারা দক্ষ ও যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে।
প্রতিযোগিতার প্রধান বিচারক ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই প্রোগ্রামিংয়ে নৈপুণ্য দেখিয়েছে। বিজয়ী টিম বিশ্ব আসরেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে আমাদের শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশ- যাই বলি না কেন; এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুর সঙ্গে আইসিপিসিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, আইসিপিসির মাধ্যমে বিশ্বের প্রযুক্তি অঙ্গন ইতোমধ্যে বিকশিত হয়েছে, আগামীতে আরও হবে। এ ধরনের বৈশ্বিক আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী চিন্তা ও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন এর আগে প্রতিযোগিতায় প্রিলিমিনারি পর্বের ১১ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৬৪৮টি টিম অংশ নেয়।
যেখান থেকেই প্রিলিমিনারি টেস্টের মাধ্যমে ১৭০টি টিম চূড়ান্ত হয়। যারা মূল পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।