মহাকাশ ভ্রমণে মহাকাশযান

মহাশূন্যে দীঘর্তম অবস্থান না হলেও কোনো আন্তজাির্তক স্পেস স্টেশনে কারো কাটানো সবচেয়ে বেশি সময় এটা এবং এতে ওজনশূন্যতা, অপ্রশস্ত জায়গা ও ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়ার প্রতি উন্মুক্ত থাকার কারণে মানুষের শরীরে কী ঘটে, তার গবেষণার সুযোগ পেয়েছে নাসা

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ইমরান জামান
মহাশূন্যে আমাদের অভিযানে বিজ্ঞানীরা প্রথম যেসব ব্যাপার আবিষ্কার করেছেন, তার একটা হলো কম মাধ্যাকষের্ণর জীবনযাত্রা শক্তিশালী হৃৎপিÐসহ হাড় ও পেশির জোগান দেয় না। পৃথিবীমুখী থাকা অবস্থায় এসব দৈহিক অঙ্গ আসলে স্রেফ আমাদের সোজা হয়ে দঁাড়িয়ে থাকতে সাহায্য করতেই প্রচুর খেটে থাকে। মাধ্যাকষের্ণর নিম্নমুখী শক্তির অভাবে শরীর উল্লেখযোগ্য কম কাজ করে পেশির ক্ষয় ও হাড়ের পুরুত্ব হ্রাসের কারণ হয়ে দঁাড়ায়। নাসার মতে মহাশূন্যে মাত্র একটি মাস কাটানোর পর নভোচারীরা কোনো ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া নারী এক বছরে যে পরিমাণ অস্থিবস্তু খোয়ান, সেই পরিমাণ অস্থিবস্তু হারাতে পারেন। এ বিস্ময়কর ক্ষয় রক্তে ক্যালসিয়ামের উচ্চহারের কারণ হয়ে দঁাড়ায়, যা কিনা মূত্রাশয়ে পাথর হওয়ার মতো বড় ধরনের ঘটনার দিকে চালিত করতে পারে। এসব সমস্যার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নভোচারীরা স্পেস স্টেশনে বিশেষভাবে নকশা করা মেশিনের সাহায্যে নিবিড় শরীরচচার্ করেন। নাসার ভাষ্যমতে গোটা মিশনের মেয়াদে কেলি মোটামুটি ৭০০ ঘণ্টা ব্যায়াম করেছেন। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সানর্ নিয়ে মনোযোগী। সানর্ সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহের মাত্রাটাও বেশি। কিছুদিন আগে সানের্র একটি পরীক্ষায় আলোর চেয়ে বেশি বেগে গতিশীল কণার ভ্রমণের খবরটি গণমাধ্যমে আলোড়ন তোলে। জনমনে ব্যাপক কৌত‚হল তৈরি করে। জেনেভার সানর্ থেকে ছুড়ে দেয়া নিউট্রিনোগুলো মাটির প্রায় এক হাজার ৪০০ মিটার গভীরে গ্রান সাসো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে (ইতালি) বসে বিজ্ঞানীরা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষাটি বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তবে মিচিওকাকুর মতো পদাথির্বজ্ঞানীদের কথা চিন্তা করলে বোঝা যায় বিষয়টি তারা খুব সতকর্তার সঙ্গে দেখছেন। নিউট্রিনো পরীক্ষাটি লোরেন্স ইনভেরিয়েন্সকে লঙ্ঘন করে। তা ‘হাটর্ অফ ফিজিক্স’ হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই এ ফলের প্রতি সংশয়বাদী হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণই আছে। রাজনৈতিক অবস্থা যাই থাকুক, সামাজিক পরিস্থিতি যত জটিল হোক, শিশু মানসজগৎ কিন্তু ক্রমেই মহাজগতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের ছবিগুলো বলছে সুদূরলোকে পেঁৗছানোর কথা। যার ছেঁায়া এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। এখানকার শিশুরাও আজ মহাজাগতিক চিন্তার ক্ষেত্র থেকে দূরে নয়। তাদের কল্পনাতে ধরা দিচ্ছে চঁাদে বসবাসে আকাক্সক্ষা, মঙ্গলে অভিযান। ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র অধ্যুষিত আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে, কমপক্ষে এক কোটি গ্রহে প্রাযুক্তিকভাবে উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটা অসম্ভব নয়। তিনি বলেন, যত নিচু পযাের্য়রই হোক, বহিজার্গতিক প্রাণ সন্ধানের ক্ষেত্রে সাফল্যের একটি ঘটনা জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির সীমানা বাড়াবে। প্রথমবারের মতো জীববিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবেন আর কী কী ধরনের প্রাণ কাঠামো সম্ভব। যখন বলা হয় বহিজার্গতিক প্রাণের অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূণর্ তখন এ কথা বোঝানো হয় না যে নিশ্চয়তা দেয়া হচ্ছে বহিজার্গতিক প্রাণের ব্যাপারে বরং শুধু এ কথা বলতে চাচ্ছে যে এ অনুসন্ধান মহামূল্যবান। পৃথিবীতে প্রাণের প্রকৃতি এবং গ্রহান্তরের কোনো জায়গায় প্রাণ আছে কিনা তার অনুসন্ধান হলো একই প্রশ্নের দুটি দিক। মঙ্গল অভিযানের যে আগ্রহ তা এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে জড়িত। মহাশূন্যে ৩৪০ দিন কাটানোর পর মাকির্ন মহাকাশচারী স্কট কেলি ও নভোশ্চর মিখাইল করনিয়েনকো কদিন আগে আমাদের ছোট নীল মাবেের্ল নেমে এসেছেন। মহাশূন্যে দীঘর্তম অবস্থান না হলেও কোনো আন্তজাির্তক স্পেস স্টেশনে কারো কাটানো সবচেয়ে বেশি সময় এটা এবং এতে ওজনশূন্যতা, অপ্রশস্ত জায়গা ও ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়ার প্রতি উন্মুক্ত থাকার কারণে মানুষের শরীরে কী ঘটে, তার গবেষণার সুযোগ পেয়েছে নাসা। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পৃথিবীবাসী নিদির্ষ্ট পরিমাণ মাধ্যাকষর্ণ শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হয়ে উঠেছে। তো মহাশূন্য ভ্রমণের গোড়া থেকেই নাসা আমাদের গ্রহের টানে বাইরে থাকা অবস্থায় মানুষের শরীরে কী ঘটে, তা জানার চেষ্টা করে আসছিল। একেবারে প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলো পশুদের সাহায্যে করা হয়েছিলÑ যেমন কুকুর, বঁাদর ও ইঁদুরের কথা বলা যেতে পারে। তারপর ১৯৬২ সালে মহাশূন্যচারী জন গেøন অ্যাপল জুসের একটা টিউবসহ পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী প্রথম আমেরিকানে পরিণত হন। ‘চমৎকার নরম পিচ্ছিল খাবার বাছাই করে একটা টুথপেস্টের টিউবে ভরে দিয়েছিল ওরা। তারপর গিলতে পারে কিনা আর খাবারটা তার পাকস্থলীতে নেমে যায় কিনা, তা দেখতে একটু একটু করে খেতে দিয়েছে’Ñ বলেছেন নিল। কিন্তু এসব যাত্রার স্বল্পমেয়াদ বিজ্ঞানীদের পরীক্ষার বিষয়কে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে এবং অগ্রগামী নভশ্চরদের ধৈযের্র পরীক্ষা নিয়েছে। ‘নভোশ্চররা তাদের দরকারি কাজেই বেশি ব্যস্ত ছিল এবং গিনিপিগের মতো আচরণ পেতেও ইচ্ছুক ছিল না তারা’Ñ যোগ করেছেন নিল। ভ্রমণের মেয়াদ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষার মেয়াদও বেড়েছে। আজকাল আইএসএস নভোচারীরা ফ্লাইটের আগে একগাদা পরীক্ষা, ইনফ্লাইট নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আর কঠিন জমিনে ফিরে আসার পর প্রলম্বিত পুনবার্সনের মুখে পড়েন। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের দিকে নজর রেখে এখনো আরো দীঘর্ যাত্রার ফলাফল সম্পকের্ অনেক কিছু শেখা বাকি রয়ে গেছে নাসার। কেলি ও করনিয়েনকোর পক্ষে তাদের ‘মহাশূন্যে এক বছর’ মিশনটি ছিল মহাশূন্যে অবস্থানের সময় কেবল শারীরবৃত্তীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগের প্রথম প্রয়াসÑ পৃথিবীর বুকে কেলির একজন যমজ ভাই থাকায় প্রকল্পটি আরো বেশি কৌত‚হলোদ্দীপক হয়ে উঠেছিল। তার মানে, বিজ্ঞানীরা দুজন মানুষের দিকেই নজর রাখতে এবং মহাশূন্য সফরকালে কোনো ধরনের জেনেটিক পরিবতর্ন ঘটে থাকলে অনায়াসে শনাক্ত করতে পারবেন। এখানে নাসা যেসব প্রভাবের খেঁাজ করবে, তেমন বড় কয়েকটি প্রভাবের উল্লেখ করা হলেও আসছে মাসগুলোয় কেলি ও করনিয়েনকোর কাছ থেকে আরো বহু কিছু জানতে পারব আমরা। আপনার অন্তঃকণর্ মোটামুটি স্মাটের্ফানের অ্যাকসেলারোমিটারের মতো কাজ করেÑ আপনার শরীরকে তা জানিয়ে দেয়, কখন চলছেন বা থামছেন এবং কখন মাথায় ভর দিয়ে দঁাড়িয়ে কিংবা কাত হয়ে শুয়ে আছেন। কিন্তু মহাশূন্যে এ সামান্য মেকানিজমটা বিগড়ে যায়, মাইক্রো গ্র্যাভিটিতে প্রবেশের পর প্রায়ই এক দিন বা সমান সময়ের জন্য নভোশ্চরদের মোশন সিকনেসে ভোগায়। অনেকে আবার আমাদের গ্রহের টানে ফিরে আসার সময়ও একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েনÑ বলেছেন নিল।