কোয়ান্টাম জগতে পদক্ষেপ

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

রুপেল তানভীর আখন্দ
স্ট্রিং তত্তে¡ গ্র্যাভিটনকে কল্পনা করা হয়েছে প্রান্তবিন্দুহীন লুপের মতো। এদের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এরা কোনো বিশেষ ‘ব্রেনে’ (নৎধহবং) বন্দি হয়ে থাকে না, বরং মুক্তভাবে ব্রেনের মধ্যে চলাচল করে। ‘কেন অভিকষর্ বল এত দুবর্ল’-এর সুন্দর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় গ্র্যাভিটনদের ব্রেন থেকে ব্রেনে এই ‘ভ্রমণ’ (ষবধশধমব)-এর বৈশিষ্ট্যের ভেতরে। শুধু তাই নয়Ñ আমাদের ব্রেনের সন্নিহিত অন্যান্য ব্রেন থেকে আসা গ্র্যাভিটনগুলো ডাকর্ ম্যাটারের অস্তিত্ব সম্পকের্ ধারণা দিতে পারে। কণা পদাথির্বদ্যায় কোয়ান্টামের বলবিদ্যা সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ফোটনের ওপর কোয়ান্টামের সফল প্রয়োগ তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ ও বলকে শক্ত ভিত্তির ওপর দঁাড় করিয়েছে। কিন্তু মহাকষর্ বল বা তরঙ্গ, কোনোটার ওপরই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সফল প্রয়োগ আজ পযর্ন্ত সফল হয়নি। কারণ মাইক্রোস্কপিক কণার ওপরই কেবল কোয়ান্টাম সফল। কারণ বৃহৎ ভরের কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে আজো আমাদের নিভর্র করতে হয় ক্ল্যাসিকাল মেকানিক্সের ওপর। তাই মহাকষের্র মতো মহাবৈশ্বিক বলের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রায় অচল। কিন্তু কোয়ান্টামের প্রয়োগ না করলেই নয়। কেননা মহাকষির্বষয়ক অনেক প্রশ্নের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে মহাকষর্ বলের উৎস কীÑ তা-ই বিজ্ঞানীরা হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া মহাকষর্ বল ও তরঙ্গ উভয়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বস্তুর ভর। কিন্তু ভরের উৎস কী, তা আজো জানা সম্ভব হয়নি। এসবের উত্তর মহাবিশ্বের বিশাল দৃষ্টিকোণ খুঁজলে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই গ্র্যাভিটন কণার অস্তিত্ব কল্পনা করে, তার ওপর কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রয়োগ করলেই কেবল এসব উত্তর পাওয়া সম্ভব। মোট কথা, গ্র্যাভিটনের সাহায্যে ‘কোয়ান্টাম মহাকষর্’ তত্তে¡র অবতারণা করতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত¡ বা শুধু আপেক্ষিক তত্ত¡ দিয়ে কোনোভাবেই গ্র্যাভিটন কণার ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তখন বিজ্ঞানীরা চিন্তা করলেন, এমন একটা তত্তে¡র প্রয়োজন যা দিয়ে একসঙ্গে চার শ্রেণির বলকেই ব্যাখ্যা করা যায়। সেই তত্ত¡টার নাম ‘সুপার স্ট্রিং’ বা ‘অতিতন্তু তত্ত¡’। ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। ১৯৬৮ সাল। গ্যাব্রিয়েল ভেনেজিয়ানো পৃথিবীর সব শক্তিশালী কণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। তিনি পরীক্ষাগুলো করেছিলেন শক্তিশালী সব এক্সিলেটরে। তার উদ্দেশ্য ছিল নিউক্লীয় বলের প্রকৃতি নিণর্য় করা। পরীক্ষা থেকে পাওয়া ডাটাগুলো নিয়ে তিনি হিসাব কষতে বসলেন। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলেন, তিনি যে ডাটাগুলো পেয়েছেন সেগুলো ২০০ বছর আগের সুইস গণিতজ্ঞ লিউনাডর্ অয়লারের বিটা ফাংশনের সঙ্গে মিলে যায়! কিন্তু কীভাবে এটা মিলল তা ব্যাখা করতে পারলেন না তরুণ ভেনেজিয়ানো। ভেনেজিয়ানোকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেন লিওনাডর্ সাসকিন্ড, হলজার নিলসেন আর ইউশিরো নামবু নামে তিন বিজ্ঞানী। চারজন শুরু করলেন যৌথ গবেষণা। অবশেষে ১৯৭০ সালে মিলল বিজ্ঞানের আশ্চযর্ আর আনকোরা তত্ত¡। এতদিন সবাই জানত, যে কোনো বস্তুকে ভাঙলে শেষ পযর্ন্ত মূল-কণিকাগুলো অবশিষ্ট থাকে। কিন্তু ভেনেজিয়ানোর তত্ত¡ থেকে পাওয়া গেল, দুটো কণা যদি সুতোর রিঙের মতো থাকে তবে এদের মধ্যে যে শক্তি বিনিময় হয় তাকে অয়লারের বিটা ফাংশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এর মানে, এই বিশ্বজগতের সবকিছুই গড়ে উঠেছে সূ² তন্তু দ্বারা। আর এ কারণেই এই তত্তে¡র নাম দেয়া হলো স্ট্রিং বা তন্তু। কিন্তু নতুন এই তত্ত¡কে তেমন গুরুত্ব দিল না বিজ্ঞানী সমাজ। বছরচারেক পরে আমেরিকান বিজ্ঞানী জন সোয়াজর্ আবার পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এলেন স্ট্রিং থিওরিকে। তার স্ট্রিং থিওরিতে সফলভাবে প্রয়োগ করলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স। সোয়াজর্ আর তার সহকমীর্রা আবিষ্কার করলেন এক অদ্ভুত ব্যাপার। তাদের তত্ত¡ থেকে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে এক নতুন কণার হদিস মিলল। হিসাব মতে সেই কণা সম্পূণর্ ভরশূন্য এবং সেই কণার স্পিন ২। নাম দিলেন ‘গ্র্যাভিটন’। ভরশূন্য কণার অস্তিত্ব নতুন নয়। কিন্তু কোনো কণার স্পিন ২, এমন কথা আগে কেউ শোনেনি। বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, সোয়াজের্র তত্তে¡ নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। সংক্ষেপে স্ট্রিং তত্তে¡র মূল বিষয়টা জেনে নেয়া যাক। সাধারণত আমরা জানি প্রতিটি বস্তু পরমাণু নামে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। একটা সময় পযর্ন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন পরমাণু বস্তুর ক্ষুদ্রতম কণা। এরপর ১৮৯৭ সালে জে জে থমসন ইলেকট্রন, ১৯১১ সালে আনের্স্ট রাদারফোডর্ প্রোটন এবং ১৯৩২ সালে চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করলেন। ১৯৬৭ সাল পযর্ন্ত এ তিনটি কণাকেই মূল কণিকা বলে মনে করা হতো। ওই বছরই মারে গেলম্যান প্রমাণ করলেন ইলেকট্রন অবিভাজ্য কণা হলেও প্রোটন ও নিউট্রন তা নয়। কোয়াকর্ নামের আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু কণা দিয়ে মূলত প্রোটন-নিউট্রন তৈরি। তখনো পযর্ন্ত বিজ্ঞানীরা মাত্র দুই ধরনের কোয়াকের্র খেঁাজ পেয়েছেন।