জিনের পুনর্বিন্যাস

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আলীজা ইভা
মানুষের মাঝে রয়েছে নারী আর পুরুষ এবং অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমন্বিত রূপসহ নানারকম বৈচিত্র্য। এ বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী জিন সার্কিটের ফলাফল। এ সার্কিটের অস্বাভাবিকতা নারী-পুরুষ তথা মানুষের স্বাভাবিক সংগঠনে পরিবর্তন ঘটায়। নারীর সৌন্দর্য এবং মাতৃত্বের অন্যতম গঠন ব্রেস্ট এবং জরায়ু অনেক ক্ষেত্রেই এ জিন সার্কিটের অস্বাভাবিকতার কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট সাঙ্গার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা নারীর ব্রেস্টের অস্বাভাবিকতা বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জিনগত কারণ ও তার সমাধান বিষয়ে উলেস্নখযোগ্য আবিষ্কার করেছেন। এ আবিষ্কারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন ওয়েলকাম ট্রাস্ট সাঙ্গার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানী প্রফেসর মাইক স্ট্রাটোন এবং ড. অ্যান্ডি ফুট্রেয়াল। দুজনই আণবিক জীববিজ্ঞান এবং ক্যান্সার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। মানুষের একটি ক্রোমোজোমে সাধারণত একটি ডিএনএ অণু থাকে। সুনির্দিষ্ট ক্রোমোজোমে এ ডিএনএ অণুর পুনর্বিন্যাস বা ভেঙে যাওয়ার কারণে মানুষের শরীরে নানারকম অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সুনির্দিষ্ট একটি ক্রোমোজোমে ডিএনএ অণুর পুনর্বিন্যাস বা ভেঙে যাওয়ার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে। এ ব্যাপারটি জেনেটিক পর্যায়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সুস্পষ্ট ছিল না। বিজ্ঞানী মাইক স্ট্রাটোন এবং অ্যান্ডি ফুট্রেয়ালের আবিষ্কার জেনেটিক পর্যায়ে কী ধরনের পুনর্বিন্যাস ঘটে তা সুস্পষ্ট করেছে। বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ জিনের পুনর্বিন্যাস এবং হেরাসিপটিন হরমোনের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে এটা বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েক বছর হলো আবিষ্কার করেছেন। এ আবিষ্কারের পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে মাইক স্ট্রাটোন এবং অ্যান্ডি ফুট্রেয়ালের জিনোম পুনর্বিন্যাস বা জিন সার্কিট পুনর্বিন্যাসবিষয়ক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ব্রেকথ্রো ব্রেস্ট ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. জর্জ রেইস ফিলহো এ আবিষ্কারকে অসাধারণ ও উলেস্নখযোগ্য একটি আবিষ্কার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন ডিএনএ অণু কোনো কারণে ভেঙে গেলে তা আবার পুনরায় গঠিত হয়ে যায় জীববৈজ্ঞানিক স্বয়ংক্রিয় মেরামত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এ মেরামত প্রক্রিয়া প্রায় সময়ই পুরনো জেনেটিক বিন্যাস ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিউটেশনের কারণে পুরনো জেনেটিক বিন্যাসে পরিবর্তন হয় তখন দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিকতা। ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২ জিনে ও হেরাসিপটিন হরমোন সংক্রান্ত জিনে মিউটেশনের কারণে পুরনো জেনেটিক বিন্যাসে পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে তৈরি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার। তিনি আরো বলেছেন, বিজ্ঞানীদের এখন কাজ হলো এ মিউটেশনকে বা জেনেটিক পুনর্বিন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করা। তাহলে নারীরা তাদের সৌন্দর্য এবং মাতৃত্বের অন্যতম গঠনকে অক্ষত রাখতে পারবে। বিজ্ঞানী মাইক স্ট্রাটোন এবং অ্যান্ডি ফুট্রেয়াল আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে জিনোম পুনর্বিন্যাস বা জিন সার্কিট পুনর্বিন্যাসবিষয়ক ধারণা আরো উন্নত ও গভীর হবে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এ ধারণা কাজে লাগবে। তারা সম্প্রতি কোরিয়ায় যে বায়োলজিক্যাল সেমিনার হবে সেখানে তাদের এ নতুন গবেষণা তথ্যেও কপি পাঠিয়েছেন।