মহাকাশ ও চাঁদ

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পস্নুটো গ্রহের এ চাঁদগুলো সৌরজগতে গতিশীল থাকা অবস্থায় বড় কোনো গ্রহ বা গ্রহসদৃশ বস্তুর সঙ্গে পস্নুটোর সংঘর্ষের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে...

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মো. তৌহিদুল ইসলাম তুরাগ
আমাদের এ পৃথিবীটা অদ্ভুত সুন্দর। আর এ সৌন্দর্যের মাঝে রয়েছে প্রকৃতির আশ্চর্য প্রভাব। কখনো কি মনে হয় না পৃথিবীর বাইরে কী রয়েছে? হয়তো কৌতূহলবশত জানতে ইচ্ছা হতে পারে। রাতের বেলা আকাশের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় অজস্র তারা জ্বলজ্বল করছে। হঁ্যা, পৃথিবীর বাইরে রয়েছে এক বিশ্ব, যা আমাদের আরো বিস্মিত করে তুলবে। আমাদের পৃথিবীর বাইরে রয়েছে আরো অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র; যা রয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। একেকটি গ্রহ অন্য গ্রহের চেয়ে আকারে-আয়তনে অনেক বড়, তেমনি রহস্যময় সুন্দর। রাতের বেলা টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশের দিকে চোখ রাখলে দেখতে পাওয়া যাবে আমাদের পৃথিবীর বাইরে যে মহাকাশ রয়েছে তা কত অদ্ভুত সৌন্দর্যের ভান্ডার। মহাকাশের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় আমাদের পৃথিবী এত ছোট যে, এটা গাণিতিক পরীক্ষা না করলে বোঝা যাবে না। আরো বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, আমরা যখন কোথাও পড়ে থাকি এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহের দূরত্ব আলোকবর্ষ। এর মানে হলো পৃথিবী থেকে ওই গ্রহে আলো পৌঁছাতে লাগবে ১০০ বছর। মহান সৃষ্টিকর্তার কী অদ্ভুত সৃষ্টি! সত্যিই সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা চিরঋণী। বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন নতুন নতুন গ্রহ আর উপগ্রহ আবিষ্কার করছেন। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে আমাদের পৃথিবীতে আমরা যেমন মানুষ বাস করি তেমনি মহাকাশে কিছু কিছু গ্রহের ভেতর অদ্ভুত প্রাণীর বসবাসের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এদের নাম 'এলিয়েন' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির কারণে বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহের মতো আরেকটি পৃথিবীতে নভোযান পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা রাতের আকাশে যে চাঁদ দেখতে পাই, এ চাঁদও মানুষ জয় করতে সক্ষম হয়েছে। মজার ব্যাপার এই যে, মানুষ এখন চাঁদে বসবাসের কথাও ভাবছে। এ জন্য আমেরিকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে। এতেই বোঝা যায় সভ্যতার আদিম যুগ থেকে এ পর্যায়ে আমাদের পৃথিবী বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে কতটা এগিয়েছে। হয়তো সে দিন আর বেশি দূর নয়, যখন মানুষ মহাকাশে গিয়ে জীবিকা নির্বাহের কাজ শুরু করবে। চাঁদ শব্দটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। আমরা পৃথিবীর মানুষ চাঁদের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত। আমরা পরিচিত চাঁদ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে। চন্দ্রগ্রহণ, জোয়ারভাটা, পূর্ণিমা, অমাবস্যা এগুলো চাঁদ সম্পর্কিত বিষয়বস্তু। পৃথিবী ছাড়াও সূর্যের অন্যান্য গ্রহেরও চাঁদ রয়েছে। যেমন আমাদের পৃথিবীর যেখানে একটি চাঁদ রয়েছে পস্নুটো গ্রহের রয়েছে চার চারটি চাঁদ। পস্নুটো গ্রহের চতুর্থতম চাঁদটি সম্পর্কে আগে বিজ্ঞানীরা জানতেন না। এই তো এই মাসেই হাবল টেলিস্কোপের সহযোগিতায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন এ চাঁদটি সম্পর্কে। পস্নুটো গ্রহের চতুর্থতম চাঁদ বিধায় বিজ্ঞানীরা এ চাঁদটির নাম দিয়েছেন পি-৪। এ পি-৪ চাঁদটি হচ্ছে পস্নুটোর ক্ষুুদ্রতম চাঁদ। পস্নুটোর বৃহত্তম চাঁদের নাম ক্যারন। অপর দুইটি চাঁদ হচ্ছে নিক্স এবং হাইড্রা। চ্যারনের ব্যাস হচ্ছে ৬৪৮ মাইল। নিক্স এবং হাইড্রার ব্যাস হচ্ছে যথাক্রমে ৪৫ মাইল এবং ৭৫ মাইল। আর ক্ষুুদ্রতম চাঁদ পি-৪ এর ব্যাস হচ্ছে ১৫ মাইল। পস্নুটোর প্রথম চাঁদ চ্যারন আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এ আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইউএস নাভাল অবজারভেটরির বিজ্ঞানীরা। নিক্স এবং হাইড্রা চাঁদদ্বয় আবিষ্কৃত হয় ২০০৫ সালে। দুটো চাঁদই হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে আবিষ্কার করা হয়। নতুন পি-৪ চাঁদটির অবস্থান নিক্স এবং হাইড্রা চাঁদদ্বয়ের মাঝখানে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, পস্নুটো গ্রহের এ চাঁদগুলো সৌরজগতে গতিশীল থাকা অবস্থায় বড় কোনো গ্রহ বা গ্রহসদৃশ বস্তুর সঙ্গে পস্নুটোর সংঘর্ষের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। আমেরিকান স্পেস এজেন্সি নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইসার আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট হচ্ছে হাবল প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টেও একটি অংশের নাম হচ্ছে নিউ হরাইজোন মিশন। এ নিউ হরাইজোন মিশনের গবেষণার অংশ হিসেবে এ নতুন চাঁদটি আবিষ্কৃত হলো। নাসা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তবে মাঝে-মধ্যে তাদের কিছু কিছু কার্যক্রম বিতর্কিতও হয়েছে। এ রকম একটি প্রজেক্ট হচ্ছে তাদের আটলান্টিস স্পেস শ্যাটল মিশন। আশার খবর হচ্ছে সম্প্রতি এ আটলান্টিস স্পেস শ্যাটল জটিলতার সমাধান হয়েছে। নিউ হরাইজোন মিশনের বিজ্ঞানী রজার স্যান্টিস বলেন, আটলান্টিস স্পেশ শ্যাটল জটিলতার সমাধান এবং পস্নুটোর নতুন চাঁদ আবিষ্কার নাসার সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে \হউলেস্নখযোগ্য ঘটনা।