ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির জোরাল সম্পর্ক

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

আলিজা ইভা
ঘুমের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির খুব জোরাল একটি সম্পর্ক আছে। বিশেষ করে ঘুমের হালকা পর্বটির সঙ্গে। সাধারণত এই সময়টাতেই আমরা বেশির ভাগ স্বপ্ন দেখে থাকি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন করে স্মৃতি তৈরি হওয়ার জন্য ঘুমের এই পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঘুমের এই সময়েই মানুষের সব স্মৃতি তৈরি হয়ে থাকে। ঘুমন্ত ইঁদুরের মস্তিষ্ক এবং তাদের স্মৃতিশক্তির ওপর তার প্রভাব- এ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন যার ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্সে। ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় পার করে আপনি গতকালের রাতটি পার করেছেন। এসময় কখনো আপনি ছিলেন গভীর ঘুমে আবার কখনো আধো ঘুমে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ঘুমের হালকা এই পর্বটিকে বলা হয় আরইএম। এসময় আপনার চোখ সবচেয়ে বেশি নড়তে থাকে আর এসময়েই আমরা সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে থাকি। আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে স্মৃতি জোরালো করতে গভীর ঘুম হওয়া খুবই জরুরি। কারণ এসময়েই মানুষের স্মৃতি সংহত হয়। ওসধমব পড়ঢ়ুৎরমযঃ এবঃঃু ওসধমব পধঢ়ঃরড়হ গভীর ঘুম নিয়ে আগেই গবেষণা হয়েছে কিন্তু ঘুমের হালকা পর্বটি নিয়ে গবেষণা করা কঠিন কিন্তু ঘুমের হালকা পর্বটির সময় মস্তিষ্কের ভেতরে কি ঘটে সেটা খুবই রহস্যময়। তখনকার অবস্থা নিয়ে গবেষণা করা কঠিন। কারণ এই পর্বটি হয় ক্ষণস্থায়ী এবং খুবই ভঙ্গুর। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠেছেন ইঁদুরের বেলায়। তারা দেখেছেন, হালকা ঘুমের সময় ইঁদুরের মস্তিষ্কের ভেতরে কিছু কিছু কোষ বা সার্কিট যদি নিষ্ক্রিয় করে দেয়া যায়, তাহলে এই প্রাণীটি আগের দিন যেসব ছোটখাটো জিনিস শিখেছিল, সেগুলো আর মনে করতে পারে না। বিবিসির বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন ওয়েব বলছেন, ঘুমের সঙ্গে স্মৃতির সম্পর্ক নিয়ে এ পর্যন্ত কালের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় গবেষণা। তিনি বলেছেন, 'সারাদিনে আপনার যেসব অভিজ্ঞতা হয় সেগুলো মস্তিষ্কের ভেতরে খুব অল্প সময়ের জন্য জমা থাকে। রাতের বেলা আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন ওই ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার মস্তিষ্কের ভেতরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া কাজ করতে থাকে। সারাদিনের অভিজ্ঞতা তখন আপনার মাথার ভেতরে সংহত হতে থাকে। অর্থাৎ ঠিক তখনই গঠিত হয় আপনার স্মৃতি।' 'যেসব জিনিস আপনি মনে রাখতে চান শুধু সেগুলোই? আপনার মস্তিষ্কের সার্কিটের ভেতরে ঢুকে জমা হতে থাকে।' এই পরীক্ষাটি চালাতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ঘুমন্ত কিছু ইঁদুরের মস্তিষ্কে ছোট্ট একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করেছেন। এই ফাইবার দিয়েই তারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন ইঁদুরের মাথার ভেতরের কিছু নিউরন। ওসধমব পড়ঢ়ুৎরমযঃ ঞযরহশংঃড়পশ ওসধমব পধঢ়ঃরড়হ এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে ইঁদুরের ওপর। ওই ইঁদুরটি প্রতিদিনই নানা রকম জিনিস শিখছে- যেমন ধরুন কোথায় খাবার পাওয়া যাবে, ভয় পেলে কি করতে হবে ইত্যাদি। তারপর ইঁদুরটি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন হালকা ঘুমের সময় তারা তার মস্তিষ্কের ভেতরে বেশকিছু সার্কিট বন্ধ করে দেন। মাথার ভেতরে আলোর বিচ্ছুরণের সাহায্যেই তারা এই কাজটি করেছেন।