মঙ্গলে রোবট অভিযান

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মৌসুমি মৌ
লাল গ্রহ মঙ্গলের পৃষ্ঠের মোট আয়তন প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ বর্গমাইল। এ দীর্ঘ অঞ্চলে মানুষের সর্বোচ্চ অর্জন বলতে রোবটযানের ৪০ মাইল ভ্রমণ। এ ছাড়া গ্রহটিকে কেন্দ্র করে ঘুরছে মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ এমআরও। এর মাধ্যমে গ্রহটির পৃষ্ঠ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেলেও কয়েক কোটি বর্গমাইলের ভূপৃষ্ঠ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান এখনো অস্পষ্ট। বর্তমানে ভূপৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণায় অহরহই ব্যবহার হয় চালকবিহীন বিমান ড্রোন। মঙ্গলপৃষ্ঠের তথ্য জানতেও এটি সহায়ক হতে পারে। এ লক্ষ্যেই মঙ্গলের জন্য বিশেষভাবে ড্রোন তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলের পৃষ্ঠ ও জলবায়ুসহ নানা বিষয়ে দ্রম্নত তথ্য আহরণের একটি কার্যকর যন্ত্র হতে পারে ড্রোন। জার্মান গবেষক লুডউইগ প্রানডিটলের নামানুসারে মঙ্গলের নাসার তৈরি ড্রোনটির নাম দেয়া হয়েছে প্রানডিটল-এম। বর্তমানে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এটি মঙ্গলে পাঠানো হবে। মানুষ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ওড়ার যন্ত্র তৈরিতে বেশ পারদর্শী হলেও অন্য গ্রহের ক্ষেত্রে একেবারেই নবিস বলা চলে। নাসার মতে, অন্য গ্রহের বায়ুমন্ডল ও অভিকর্ষণ ত্বরণের ভিন্নতা সে গ্রহের জন্য মানুষের উড়ন্ত যান তৈরির সবচেয়ে বড় বাধা। পপুলার সায়েন্স জানায়, এর আগেও মঙ্গলের জন্য উড়ন্ত যান তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল নাসা। এমনই একটি প্রকল্পের ফসল ছিল এআরইএস নামক উড়োজাহাজ। এবারের প্রানডিটল-এম তৈরি হয়েছে ওই উড়োজাহাজের আদলে। দুটি উড়ন্ত যানেরই পাখা বেশ প্রশস্ত। মঙ্গলের মতো হালকা বায়ুমন্ডলের প্রানডিটল-এম ড্রোন চালানোর পরিকল্পনা করছে নাসা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বেলুনের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠের ওপর এক লাখ ফুট উচ্চতায় নিয়ে ড্রোনটিকে ছেড়ে দেয়া হবে। নাসা জানিয়েছে, প্রানডিটল-এম ড্রোনটির ওজন দেড় কেজিরও কম। মঙ্গলের এর ওজন কমে হবে মাত্র ১ কেজি। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা হবে ড্রোনটির ওড়ার ক্ষমতা। পরবর্তীতে ড্রোনটির সঙ্গে ক্যামেরাসহ বিভিন্ন যন্ত্র যুক্ত করে ওজন বহন ক্ষমতার পরীক্ষা চালানো হবে। আর সবশেষে পুরোপুরি মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের ড্রোনটির ক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ফিট ওপরে ওড়ানো হবে। নাসা মনে করে, ভবিষ্যতে প্রানডিটল-এমের মতো ড্রোনগুলো মঙ্গলের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াবে এবং এর পৃষ্ঠ ও জলবায়ু নিয়ে তথ্য পাঠাবে। তখন মঙ্গলে হবে ড্রোনেরই রাজত্ব, যা চলবে অন্তত মানুষ সেখানে পৌঁছা পর্যন্ত। এই প্রথম মঙ্গলে পাওয়া গেছে কাচ। মঙ্গলকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) মার্স রিকোয়েসেন্স অরবিটার (এমআরও) একটি জ্বালামুখে এ কাচের সন্ধান পেয়েছে। এ আবিষ্কার মঙ্গলের পরিবেশ সম্পর্কে জানা ও জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ায় সহায়ক হতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি বিজ্ঞান সাময়িকী জিওলজিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে মঙ্গলে কাচ পাওয়ার বিষয়টি জানান নাসার গবেষকরা। ওই গবেষকরা এমআরওর পাঠানো তথ্য নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষকরা বলেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠে গ্রহাণুর প্রচন্ড আঘাতের ফলে উপরিতলের কিছু অংশ গলে যায়। পরে ওই অংশ দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে কাচে পরিণত হয়। এভাবে ভূপৃষ্ঠের মাটি ও পাথর গলে তৈরি হওয়া কাচকে বলা হয় 'ইমপ্যাক্ট গস্নাস'।