বিজ্ঞানের আশ্চর্যজনক কোয়ান্টাম তত্ত্ব
পরমাণুর অভ্যন্তরে একটি ইলেকট্রন একাধিক সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, কেবল দর্শকের পর্যবেক্ষণের পরই একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় তা উপনীত হবে। মহাবিশ্বও ইলেকট্রনের মতো একাধিক সুপ্ত কোয়ান্টাম অবস্থায় ছিল বলে মনে করা হয়। মহাবিশ্বের অসংখ্য সম্ভাবনা থেকে একটি মাত্র বাস্তব রূপ লাভ করে।
প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
নীল আকাশ, মায়াময় চাঁদ, প্রকৃতি, মহাবিশ্ব এদের দিকে কোনো পর্যবেক্ষক যদি চেয়ে না দেখে তা হলে ধরে নিতে হবে বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি না দেখলেও বিশ্বজগৎ যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। ব্যক্তি আমির বাইরে থাকলেও, মহা আমি, মহাচৈতন্যের বাইরে নয়। ব্যক্তি আমির মধ্যেই তো মহাচৈতন্যের জীবন্ত প্রকাশ। মানুষ মহাবিশ্বের সার্থক আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য। মানুষের ইচ্ছায় রচিত হবে তার মনের মতো জগৎ। পরমাণুর অভ্যন্তর জগৎ যখন তার ইচ্ছায় রচিত হবে এবং এর ফলে বাস্তব জগৎ তার অনুকূলে আসবে আরও সুদৃঢ় রূপে, যেমনটি সে চায়। পরীক্ষামূলক গবেষণা পর্যায়ে দর্শন আর বিজ্ঞানের যোগসূত্র অনেক দিন হলো শুরু হয়েছে। সেই যাত্রায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর চেতনাবোধের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। শনাক্ত না হলে কোনো কথা বাস্তবে থাকে না অর্থাৎ পর্যবেক্ষক থাকতে হবে তার মধ্যে চৈতন্যময় সত্তার পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। বিষয়টিকে ভুতুড়ে মনে হলেও আমি মনে করি, বিষয়টি ভুতুড়ে নয় কেননা আমাদের মস্তিষ্কের রয়েছে তরঙ্গ তা জার্মানির টু্যবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ু মনোবিজ্ঞানী নিলয় বিরবাত্তম্যায় ইইজির মাধ্যমে শনাক্ত করেছেন। এ বিষয়টির উৎকর্ষ সাধন করে অচিরেই ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারনেট বা বিসিআই দ্বারা কম্পিউটার চালনা সম্ভব হবে। শুধু চিন্তার দ্বারাই এবং অট ট্রানস্স্নেস্নশন ডিভাইসের বা টিটির মাধ্যমে প্যারালাইজড রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণ যথারীতি বর্তমানে চলছে। ধ্যান করে যে মানুষ সুফল পায় আসলে মস্তিষ্কের তরঙ্গ শক্তির নিয়ন্ত্রণের দ্বারা আমি মনে করি সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন মস্তিষ্ক তরঙ্গ আরও ব্যাপকভাবে শনাক্ত হবে। কোয়ান্টাম স্তরের সাব অ্যাটমিক দ্বারা জ্ঞান যত নিখুঁত হবে ততই মানুষ ইচ্ছাশক্তি তরঙ্গ রূপে কণা ও শক্তি শনাক্তকরণের কাজে লাগাতে পারবে। ইচ্ছার বিমূর্ত শক্তি কোয়ান্টাম স্তরে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে এবং ধ্যানের আরও ব্যাপক সুফল অর্জনে সক্ষম হবে। ধ্যানের দ্বারা মস্তিষ্ক তরঙ্গ অনেক বেশি পরিশীলিত নিয়ন্ত্রিত হয়। ঘরবষং নড়যৎ বলেছেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব দ্বারা ঝযড়পশবঃ না হলে কোয়ান্টাম তত্ত্ব বুঝবেন না। পরমাণুর অভ্যন্তরে একটি ইলেকট্রন একাধিক সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, কেবল দর্শকের পর্যবেক্ষণের পরই একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় তা উপনীত হবে। মহাবিশ্বও ইলেকট্রনের মতো একাধিক সুপ্ত কোয়ান্টাম অবস্থায় ছিল বলে মনে করা হয়। মহাবিশ্বের অসংখ্য সম্ভাবনা থেকে একটি মাত্র বাস্তব রূপ লাভ করে। মহাবিশ্বের অসংখ্য সম্ভাবনার ধারণা থেকে ১৯৫৭ হিউজ এভারেট নিয়ে আসেন সমান্তরাল অসংখ্য মহাবিশ্বের ধারণা, আমরা তার একটিতে মাত্র বাস করছি। কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন : ম্যাক্স পস্নাঙ্ক ১৯১৮, আইনস্টাইন ১৯২১, নিলস বোর ১৯২২, ডিব্রগলি ১৯২৯, হাইসেনবার্গ ১৯৩২, ডিরাক ও শ্রোডিংগার ১৯৩৩, পাউলি ১৯৪৫, ম্যাক্স বর্ন ১৯৫৪ সালে। যদি দুটি কণা একসময় একত্রে থাকে এবং যদি পরে তারা পৃথক হয়ে যায় একটি কণা ভেঙে দুটি তৈরি হলো। কণা দুটি একসঙ্গে থাকলে আমরা তাদের অবস্থান ও গতিবেগ নির্ণয় করতে পারি। কণা দুটি পৃথক হয়ে গেলে যত আলোক বর্ষ দূরেই থাকুক না কেন একটির অবস্থান ও গতি জেনে অন্যটির অবস্থান ও গতি হুবহু জানা সম্ভব। এখানে স্থানিক দূরত্ব বলতে কিছুই থাকল না। এটা কোয়ান্টাম এনটেঙ্গেল মেথড এ সূত্র ধরে নিমিষেই তথ্য বহু বহু আলোকবর্ষ দূরে প্রেরণ সম্ভব। ভবিষ্যতের কম্পিউটারে এ পদ্ধতি কাজে লাগানো সম্ভব হবে। বিষয়টি ঊহঃধহমষবফ চযড়ঃড়ং হিসেবে বহুল আলোচিত। এক জোড়া ফেটিন বহু আলোকবর্ষ দূরে থাকা সত্ত্বেও একই আচরণ করে। আইনস্টাইন একে ভৌতিক ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করেছেন। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানী পিংকয়ইল্যাম, প্রফেসর হ্যামস ব্যাচর, ডক্টর টিমনি টার্গেট ফোটনকে স্ক্যাল করে ট্রানজিকান রূপান্তরের মাধ্যমে প্রোটনটিকে পুনঃসৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই সূত্র ধরে একদিন হয়তো গ্রহ হতে গ্রহান্তরে মানুষের টেলিপোর্টেশন সম্ভব হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন পরমাণু পিন পয়েন্ট তথা নিরঙ্কুশ বিশ্লেষণের মাধ্যমে অবিকল টেলিপোর্ট করতে সমন্বয় করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো মূলটি ধ্বংস হবে, অবিকল প্রতিরূপটি সৃষ্টি হবে যা হবে নকল মানুষ। পদার্থ বিজ্ঞানের কোয়ান্টাম জগতের প্রতিষ্ঠালগ্নে মূল চারটি প্রবন্ধের একটি সজেন্দ্রনাথ বসুর এবং অন্যগুলোর রচয়িতা হলো- ম্যাক্স পস্নাঙ্ক, আইনস্টাইন, নিলসবোর, বোসের নাম ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে কোয়ান্টাম সংখ্যাতত্ত্ব্বের জনক হিসেবে। পস্নাঙ্কের বিবরণতত্ত্বের মাধ্যমে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের জন্ম হলো বটে। কিন্তু সমীকরণে ত্রম্নটি ছিল। এই ত্রম্নটি দূর করেন বোস যা আইনস্টাইনের কাছে ১৯ বছর ধরা পড়েনি। বোসের এ আবিষ্কারের ফলে দ্রম্নত আইনস্টাইনের মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। কোস্টাম জগতে বোসের নাম অনুসারে রয়েছে বোসন কথা। বোসের আরেকটি আবিষ্কার হলো পদার্থের ৪র্থ অবস্থা। বিশাল বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বা জটিল গাণিতিক হিসাব দ্বারা বুদ্ধিদীপ্ত সূক্ষ্ণ দৃষ্টি ও যুক্তির স্বচ্ছতা দ্বারাও যে জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যা সমাধান করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলেন ম্যাক্স পস্নাঙ্ক, আইনস্টাইন, স্রোর্ডিগার, হাইসেনবার্গ, ম্যাক্সবর্ণ, ডিরাক ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। এসব মহান বিজ্ঞানীদের গবেষণার কৌশল হলো ধারণানির্ভর প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ। বুদ্ধিদীপ্ত সূক্ষ্ণদৃষ্টি, যুক্তির স্বচ্ছতা, তত্ত্বের সূক্ষ্ণ বিশ্লেষণ ধ্যানের দ্বারা বিকশিত হয়। এসব বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের আমি নিয়মিত ধ্যানচর্চা করতে অনুরোধ করছি, নিশ্চয়ই সুফল ফলবে। প্রদর্শক বিজ্ঞানীরা ধ্যান করতেন কিনা তা বিচার্য বিষয় নয়। আমরা অবশ্য ডাইমেনশন ধারা করি। নিহিত শক্তি ধ্যানের দ্বারা উত্থিত হবে। ধ্যানের দ্বারা মনের নিয়ন্ত্রণের ফলে, চেতনা হয় একরৈখিক, মনোযোগ অপ্রয়োজনীয় পরিবেশ হতে ডিকনসেনট্রেশন হয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীভূত হয় ফলে মস্তিষ্ক তরঙ্গ আমাদের সুপ্ত ডাইমেনশনগুলোকে সংযোগ উত্থান, তথা জাগরণ ঘটাতে সমর্থ হবে। মহৎ হৃদয়ের সত্যিকারের বিজ্ঞানমনষ্ক বলে আইনস্টাইন তার পরাজয় মেনে নিয়েছেন, যেন অসহায় দর্শক এবং বারবার জব্দ করার চেষ্টা করেছেন। তখন আইনস্টাইনের জয়জয়কার ইমেজ। কিন্তু তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম তত্ত্বকে বিকশিত করেছেন বহু চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে। যুক্তিহীনতাকে আইনস্টাইন মেনে নিতে পারেননি।