প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না কিছু স্মার্টফোন ব্র্যান্ড

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

সরফরাজ নেওয়াজ
বাংলাদেশে বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড টিকতে না পেরে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এরকম ঘটেছে পাশের দেশ ভারতেও। ২০১৮ সালে ভারতের স্মার্টফোন বাজার থেকে ৪০টি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। দেশটির ক্রমবর্ধমান বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারাই এসব ব্র্যান্ডের প্রস্থানের প্রধান কারণ। একই সময় প্রবৃদ্ধির আশা নিয়ে বাজারটিতে কার্যক্রম শুরু করেছে ১৫টি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাইবারমিডিয়া রিসার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ইটি টেলিকম। সাইবারমিডিয়া রিসার্চের দাবি, চলতি বছরও ভারতের স্মার্টফোন বাজারে একই চিত্র দেখা যাবে। অর্থাৎ দেশটি থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বিপরীতে হাতেগোনা কয়েকটির প্রবেশ ঘটবে। ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শাওমি, স্যামসাং, ভিভো ও অপোর মতো ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য বাড়ছে। এসব ব্র্যান্ডের আগ্রাসী ব্যবসায় নীতির কারণে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীরা সুবিধা করতে পারছে না। দেশটিতে তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ভারতের স্মার্টফোন বাজার থেকে আরও অন্তত ১৫টি ব্র্যান্ডের প্রস্থান ঘটবে। এর বিপরীতে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করবে মাত্র পাঁচটি ব্র্যান্ড। অন্যদিকে সাইবারমিডিয়া রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ভারতের স্মার্টফোন বাজার থেকে আরও ১০টি ব্র্যান্ড ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। এর বিপরীতে নয়টি নতুন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড প্রবেশ করবে। সাইবারমিডিয়া রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড়-ছোট মিলিয়ে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে প্রায় ২০০টি ব্র্যান্ড কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৪-১৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে দেশটিতে ৩০০টির বেশি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের সক্রিয় কার্যক্রম ছিল। বৈশ্বিক স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার ভারত। দেশটিতে প্রথম সারির চীনা ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য বাড়লেও তুলনামূলক ছোটদের আগ্রাসন কমে আসছে। ২০১৫ সালে বাজারটিতে নতুন ১০টি চীনা মোবাইল ব্র্যান্ড কার্যক্রম শুরু করেছিল। ২০১৬ সালে দেশটিতে নতুন চীনা ব্র্যান্ড প্রবেশ করে সাতটি। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সালে এ সংখ্যা আরও কমেছে। ভারতের স্মার্টফোন বাজারে দিন দিন প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এখন বাজারটির সিংহভাগ দখল গুটিকয়েক ডিভাইস নির্মাতা নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশটির বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি চীনা ব্র্যান্ডগুলোর কাছে এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাজারটির শীর্ষ চার ব্র্যান্ডের তিনটি চীনা হলেও ছোট ব্র্যান্ডগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। অথচ ভারতের ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজার একসময় চীনা হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের স্বপ্নময় গন্তব্য ছিল। বাজারটি অনেক চীনা ব্র্যান্ডের কাছেই আকর্ষণ হারিয়েছে। নতুন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের প্রবেশ ঘটছে না, এমন নয়। তবে চীনভিত্তিক নতুন স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের প্রবেশ কমেছে। চলতি দশকের শুরু থেকে চীনা ফোন ব্র্যান্ডগুলোর পছন্দের গন্তব্য ছিল ভারত। ২০০০ সালের মধ্যভাগ থেকেই দেশটির ব্র্যান্ডহীন ফিচার ফোন বাজারে চীনা কোম্পানিগুলোর শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল। বৈশ্বিক বাজারে অ্যান্ড্রয়েডচালিত মোবাইল ডিভাইসের উত্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতের ব্র্যান্ড ডিভাইস বাজারে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রভাব বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে নকিয়ার পতনের পর চীনা ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলো দেশটিতে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে। টেলিযোগাযোগ-সংশ্লিষ্ট নিত্যনতুন প্রযুক্তি এখন ভারতের বাজারে সহজলভ্য হয়েছে। চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফোরজি এবং ই-কমার্সের দ্রম্নত প্রসার বাজারটিতে হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ডগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে ভারতের বাজারে প্রবেশ করে শাওমি, ভিভো, অপো ও জিওনির মতো একাধিক চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। ২০১৫ সালে কার্যক্রম শুরু করে মেইজু, কুলপ্যাড ও টিসিএলের মতো ব্র্যান্ডগুলো। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী পরিচিত দুই ব্র্যান্ড লিইকো ও আইটেল বাজারটিতে কার্যক্রম শুরু করে। ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ স্মার্টফোন বাজারে টিকে থাকতে শাওমি, ভিভো ও অপোর মতো ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে ডিভাইস উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু করেছে। তিন বছর আগে ভারতের নয়ডায় শতকোটি রুপি বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রথম ডিভাইস উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে ভিভো।