গুগলের উদ্যোগ

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ছবি ঘোষ
ইন্টারনেটকে অধিকতর অন্তভুির্ক্তমূলক ও সবার ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা কমানো করাটা খুবই গুরুত্বপূণর্। এ ব্যাপারটি সুনিদির্ষ্টভাবে বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য। কারণ প্রতিদিনই প্রচুরসংখ্যক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছেন। সে জন্য চলতি বছরের শেষের দিকে গুগল নতুন কিছু পণ্য ও সেবা চালু করেছে (ষধঁহপযবফ), যা অনলাইনে আসা বিভিন্ন ভাষা ব্যবহারকারী শত কোটি মানুষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হয়েছে। এই সুবিধাটি ইতোমধ্যে হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়ে গেছে। এবারে গুগল দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আরও আটটি ভাষার ভয়েস ইনপুট সুবিধাসহ নতুন আরেকটি পদক্ষেপ নিতে চলেছে। ভাষাগুলো হচ্ছেÑ বাংলা, গুজরাটি, উদুর্, কানাডা, মালায়লাম, মারাঠি, তামিল ও তেলেগু। ফলে এসব ভাষা ব্যবহারকারী মানুষ এখন থেকে কথা বলার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েডের জিবোডের্র (এনড়ধৎফ ড়হ অহফৎড়রফ) পাশাপাশি গুগল অ্যাপে সাচর্ করতে পারবেন। কথার মাধ্যমে সাচর্ করুন : আপনি যখন রাস্তাঘাটে হঁাটাচলার মধ্যে থাকবেন তখন মোবাইলফোনে টাইপ করাটা খুবই ঝামেলাপূণর্ ও কঠিন কাজ হয়ে দঁাড়ায়। কিন্তু আপনি যদি উপরোক্ত আটটি ভাষার যে কোনো একটি জানেন তাহলে আপনার আর কোনো চিন্তা নেই। কারণ এখন থেকে ওই আটটি ভাষায় কথা বলেই অত্যন্ত সহজে ও দ্রæতগতিতে যোগাযোগ করা যাবে। অথার্ৎ কোনো কিছু সাচর্ করতে আপনাকে আর কি-বোডের্ টাইপ করতে হবে না। উদাহরণ দিয়েই বলা যাকÑ ধরুণ, আপনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। পথিমধ্যে কোথাও আপনি খাবার খেতে চান। এমন অবস্থায় আপনি শুধু মুখে মোবাইল ফোনে আপনার ভাষায় ‘তন্দুরি আছে এমন রেস্টুরেন্ট চাই’ কথাটি বলবেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই গুগল অ্যাপ আপনাকে সাচর্ রেজাল্ট দেখাবে। অথার্ৎ আপনি যে ধরনের রেস্টুরেন্টে খেতে চান সেই রকম রেস্টুরেন্টগুলো কাছাকাছি কোন কোন জায়গায় আছে তা আপনি জানতে পারবেন। নতুনভাবে গুগলে যুক্ত হওয়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এই আটটি ভাষায় মুখের কথায় কোনো কিছু সাচর্ করতে হলে আপনাকে অবশ্য প্রথমে মোবাইল ফোনে গুগল অ্যাপ চালু করতে হবে। এর পরে আপনাকে ভয়েস সেটিংস ম্যানুতে গিয়ে (ওপরে বাম দিকে) কোন ভাষায় কথা বলবেন সেটি নিবার্চন করতে হবে। এবারে কথা বলুন, দেখে নিন যে আপনি যা চেয়েছেন তা মোবাইল ফোনের পদার্য় ভেসে উঠেছে। জিবোডের্ সাচর্ করুন কথা বলে : কথার মাধ্যমে নিদের্শনা দিয়ে কোনো মেসেজ তৈরি করা একেবারে সহজ কোনো কাজ নয় বটে, তবে টাইপ করে মেসেজ তৈরি করার চেয়ে তা তিনগুণ বেশি দ্রæততর হয়ে থাকে (ঃযৎবব ঃরসবং ভধংঃবৎ)। সে জন্য আপনার মোবাইল ফোন থেকে জিবোডের্ ভয়েস টাইপিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের মেসেজ তৈরি বা কোনো ই-মেইলের উত্তর পাঠানোর সুবিধা নিয়ে এসেছে গুগল। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আপনি বাসায় ফিরছেন। কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে আটকে পড়েছেন। এ অবস্থায় আপনি পরিবারকে একটি মেসেজ বা বাতার্ দিতে চান। তখন আপনি শুধু আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে জিবোডর্ অ্যাপটি চালু করে কথা বললেই হবে। আপনি হয়তো বললেন, রাস্তায় জ্যামে আছি। ডিনারে যোগ দিতে কিছুটা দেরি হতে পারে। ব্যস, আপনার পরিবার তৎক্ষণাৎ জেনে যাবে আপনি কি কথা বলেছেন। কথা বলে কাজ করতে চাইলে আপনাকে প্রথমেই গুগল প্লে স্টোর থেকে আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে জিবোডর্ অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে। এর পরে আপনার ভাষা অথার্ৎ কোন ভাষায় কথা বলবেন সেটি বেছে নিতে হবে (এ জন্য সাজেশন স্ট্রিপে জি চাপুন এবং সেটিংস ঠিক করে নিন)। এবারে মাইক্রোফোন চালু করে কথা বললেই আপনার কাজ হয়ে যাবে। মেশিন লানির্ং প্রক্রিয়ায় নিভুর্লভাবে উচ্চারিত ভাষার শব্দ ও আওয়াজ অনুধাবন : নতুন সেবাটি চালু করার জন্য গুগলের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আলোচ্য আটটি ভাষায় কথা বলা মানুষজনের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। এ সময় স্থানীয় ভাষাভাষী মানুষের স্পিচ স্যাম্পল বা কথার নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি সাধারণ কিছু ফ্রেইজ বা বাক্য-বাক্যাংশ, শব্দ ব্যবহারের প্রণালি পড়তে বলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় মেশিন লানির্ং মডেলকে প্রশিক্ষিত/তৈরি করা হয়েছে। অথার্ৎ যন্ত্রকেই আলোচ্য আটটি ভাষায় উচ্চারিত শব্দ ও আওয়াজ নিভুর্লভাবে ধারণ বা অনুধাবন এবং আদান-প্রদানের সুবিধাসহ সাজিয়ে তোলা হয়েছে। যত বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং সময়ও যত এগিয়ে যাবে তার সঙ্গে সঙ্গে এই আটটি ভাষায় ভয়েস ইনপুটের মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদানের সুবিধা তত ভালো ও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন যুক্ত হওয়া এই আটটি ভাষা গুগলের ক্লাউড স্পিচ এপিআইতে পাওয়া যাবে (ংঃধৎঃরহম ঃড়ফধু রহ ঈষড়ঁফ ঝঢ়ববপয অচও) এবং খুব শিগগির গুগলের ট্র্যান্সলেট অ্যাপসহ (ঞৎধহংষধঃব ধঢ়ঢ়) অন্যান্য অ্যাপস এবং পণ্যের সঙ্গেও এসব ভাষায় কথা বলার অ্যাপটি মিলবে। এই আটটি ভাষাসহ বিশ্বব্যাপী মোট ১১৯টি ভাষায় অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের জিবোডর্ (এনড়ধৎফ ড়হ অহফৎড়রফ) এবং গুগল অ্যাপে ভয়েস সাচর্ করার সেবা বিস্তৃত হলো। গুগল সম্পকের্ : গুগলের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী তথ্য সংগঠিত করা এবং সেটাকে যতটা সম্ভব সবর্জনীন ব্যবহার ও উপকার সাধনের উপযোগী করে তোলা। সাচর্ ইঞ্জিন, ম্যাপস, জিমেইল, অ্যান্ড্রয়েড, গুগল প্লে, ক্রোমে ও ইউটিউব প্রভৃতি প্রযুক্তিক সেবা ও প্লাটফমের্র মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শত শত কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অথর্পূণর্ ভ‚মিকা পালন ও অবদান রেখে চলেছে গুগল। একই সঙ্গে গুগল বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে উঠেছে। গুগল হচ্ছে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের একটি সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান।