ই-কমার্স ও আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনা

২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে রপ্তানি আয়ে সরকারের লক্ষ্য ৫০০ কোটি ডলার। আর ওই সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে। তথ্যপ্রযুক্তির কোনো এক বিষয়ের ওপর দক্ষতা ও যোগাযোগ সক্ষমতা থাকলে অনলাইন আউটসোর্সিংয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব।

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

আলীজা ইভা
ই-কমার্সের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার ছবি : ইন্টারনেট
ক্রেতার আস্থা অর্জন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ও ইন্টারনেটের খরচ কমে আসায়, এ খাতে গত এক বছরে দুই থেকে ৩০০ গুণ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে ধারণা, উদ্যোক্তাদের। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ না থাকায়, অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ে দক্ষ জনবলের ব্যাপক অভাব রয়েছে। সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে বলেও দাবি তার। তরুণদের আগ্রহ দেখে সম্ভাবনা দেখছেন এই বিশেষজ্ঞ। আর আইটিসি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, ই-কমার্স ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে, এ খাতের ওপর ট্যাক্স তুলে নেয়া হয়েছে। দিনে দিনে আরও সহজ করা হচ্ছে, মোবাইল ব্যাংকিং। ই-কমার্সের বাজার সম্পর্কে জনসচেতনা বাড়াতে সরকার কাজ করছে বলেও জানালেন প্রতিমন্ত্রী। কেবল সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাই নয়, ফেসবুক এখন ব্যবহার হচ্ছে অনলাইন শপিংয়ের বড় ক্ষেত্র হিসেবে। আর বাংলাদেশে বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পণ্যের প্রাথমিক বাজার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ফেসবুককে। এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। একে আরও এগিয়ে নিতে সরকারকে একটি নীতিমালা তৈরি করার তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রক্ষায় দিলেন বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার পরামর্শ। বাংলাদেশে ফেসবুক মার্কেটিংকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ঘরে বসে বিশ্বের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ করে রেমিট্যান্স আয়ের জনপ্রিয় মাধ্যম আউটসোর্সিং। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি তরুণরাও আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে আউটসোর্সিং হতে পারে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় একটি ক্ষেত্র। আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা সফল আউটসোর্সার মাহিদুল ইসলাম। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএম শেষ করার পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিংকেই পেশা হিসেবে নেন মাহিদ। তারপরের গল্পটা কেবলই এগিয়ে যাওয়ার। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৩ বেসিস অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। তিনি বলছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কেউ তাকে কাজে নিতে চাইতো না, তাই এ পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। কারও বোঝা না হয়ে কারও করুণা ছাড়া নিজের চেষ্টায় সফল হতে চান তিনি। স্বাগতা রেজোয়ানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএসসি পাস করে চাকরি নিয়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেতনও পেতেন ভালো। তবে সংসারের সঙ্গে চাকরির সমন্বয় করতে না পেরে ছাড়তে হয় চাকরি। সেখানেই থেমে যাননি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হয়েছেন এ নারী। ২০১৪ সালে দেশের সেরা আউটসোর্সার হিসেবে বেসিস অ্যাওয়ার্ডসহ পেয়েছেন বেশকিছু সম্মাননা। প্রাকৃতিক নানা উপাদান ব্যবহার করে বিশেষ ধরনের নারকেল তেল তৈরি করছেন সাজিয়া হাসান ইজু। এ তেল বাজারজাত করতে একটু ভিন্ন পথে হাঁটেন তিনি। ২০১২ সালে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে তাতে বিজ্ঞাপন দেন। এরপরের গল্পটা কেবল এগিয়ে যাওয়ার। এখন শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও তেল কেনার অর্ডার আসে ইজুর কাছে। ফেসবুক মার্কেটিংয়ে অনলাইনে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান। এর কর্ণধার জানালেন, পণ্য মার্কেটিংয়ে ফেসবুক বিশাল সম্ভাবনার। বছরে শতভাগ প্রবৃদ্ধির গতি নিয়ে এগোচ্ছে খাতটি। ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। ইন্টারনেট ব্যবহার করে একা বা অফিস নিয়ে বিশ্বের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে দেয়ার একটি মাধ্যম। এরই মধ্যে তরুণ সমাজের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অর্থ আয়ের মাধ্যমটি। বর্তমানে আউসোর্সিংয়ের সবচেয়ে বড় সাইট- ওডেক্স ও অ্যাপওয়ার্কে কাজ করে প্রতি মাসে কয়েকশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে দেশের তরুণ-তরুণীরা। বিশ্বে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বাজার এখন প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বস্তির কথা ধীর পায়ে এগিয়ে যাওয়া বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। অনলাইন আউটসোর্সিং- আরেক বৃহৎ ওয়েবসাইট অ্যাপওয়ার্ক। তবে এই সাইটে নতুন করে কাজের আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা। ওয়েবসাইটটির অভিযোগ, লাখ লাখ বাংলাদেশি তরুণ অ্যাকাউন্ট খোলার পর অর্ডার নিয়ে ক্লায়েন্টকে কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারাই এজন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে। অনলাইন আউটসোর্সিং বিশেষজ্ঞ মনির হোসেন বলেছেন, এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে গড়ে তুলতে হবে দক্ষ আউটসোর্সার। জানতে হবে ভালো ইংলিশ। আউটসোর্সিংয়ের বাজার নিয়ে আশাবাদী আইটিসি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি জানিয়েছেন, এ খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে নেয়া হচ্ছে, নানা উদ্যোগ। ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে রপ্তানি আয়ে সরকারের লক্ষ্য ৫০০ কোটি ডলার। আর ওই সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে, ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে। তথ্যপ্রযুক্তির কোনো এক বিষয়ের ওপর দক্ষতা ও যোগাযোগ সক্ষমতা থাকলে অনলাইন আউটসোর্সিংয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তবে থাকতে হবে লেগে থাকার ধৈর্য্য। এ খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে লার্নিং-আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের মধ্যে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে সাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার কথাও জানালেন, আইটিসি প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ও গেম নির্মাণ সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠছে বাংলাদেশে। অনেক তরুণ-তরুণী একে নিচ্ছেন পেশা হিসেবে। তবে এ খাতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশ্লেষকরা। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জানালেন, জনবল তৈরিতে ১২৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাপ নির্মাণ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি। স্মার্টফোনে ডেসকো ও ওয়াসার অ্যাপ ডাউনলোড করে, ঘরে বসেই বিদু্যৎ ও পানি বিল অনায়াসে দিতে পারছেন, নগরবাসী। বিল পেমেন্ট, বিল চেকসহ অ্যাপ দুটিতে আছে নানা ফিচার। মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে এ ধরনের শত শত অ্যাপ তৈরি হচ্ছে এখন বাংলাদেশেই। বিশেষ করে তরুণদের অনেকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে অ্যাপ নির্মাণকে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে অপরাধীদের তথ্য দিতে এরই মধ্যে অ্যাপ তৈরি করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নর্ যাব। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন প্রায়, সাড়ে পাঁচ কোটি। এদের অনেকে, ফেসবুকের বাইরেও চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করছেন, অসংখ্য দেশীয় অ্যাপস। ফলে এর বাজারকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা। তবে দক্ষ জনবল তৈরি, বিনিয়োগ ও বাজারজাতকে এ খাতের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আইসিটি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর।