পর্নোগ্রাফি রোধ চান সমাজবিজ্ঞানীরা

প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ছবি ঘোষ
মানুষের হাতে হাতে চলে আসা স্মার্টফোনে ছড়ানো অশ্লীল কন্টেন্ট সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ে ভূমিকা রাখছে
বেশ কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্নোগ্রাফি সমাজের এক শ্রেণির মানুষকে ধর্ষক হিসেবে গড়ে তুলছে। তাদেরকে অবচেতনভাব ধর্ষণের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এ ধরনের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিরোধে কার্যকর প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই। মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন এখনই সঠিক উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে। তারা চান পর্নোগ্রাফি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ। বাংলাদেশ ও ভারতে যেভাবে ধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে তাতে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, স্মার্ট-ফোন এবং সহিংসতায় পরিপূর্ণ পর্ণো ভিডিও, যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষার অভাব যৌন সহিংসতার ঘটনা বাড়িয়ে দিতে পারে। গবেষণায় উঠে এসেছে এই ধরনের তথ্য। বাংলাদেশের বেশকয়েকজন সমাজকর্ম গবেষক এবং সমাজবিজ্ঞানীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে ধর্ষণের এক ধরনের অঘোষিত ট্রেনিং হচ্ছে বাংলাদেশে। সমাজে বঞ্চিত শ্রেণি এই ট্রেনিংকে বাস্তবায়নে যেন ভূমিকা রাখছে। সাম্প্রতিক গণধর্ষণের রিপোর্টগুলো এবং শিশু ধর্ষণের রিপোর্টগুলো বিশ্লেষণ করলে এর সত্যতা বোঝা যায়। উপমহাদেশের বড় দেশ ভারতেও এ্‌কই ধরনের চিত্র রয়েছে। একদল টিনএজার একজন তরুণীর শরীর থেকে কাপড় টেনে খোলার চেষ্টা করছে-এমন একটি ভিডিও চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের জনপ্রিয় একটি সামাজিক মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় মেয়েটি ছেলেদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকে, তাদের 'ভাই' বলে সম্বোধন করে কিন্তু তারা ব্যঙ্গ করতে করতে, হাসতে হাসতে প্রচন্ড উপভোগের সাথে অপকর্মটি করতে থাকে। সেই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ এটা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় যে বিহারের একটি গ্রামে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল এবং অভিযুক্ত তরুণদের আটক করা হয়েছিল। প্রদেশটির রাজধানী থেকে কাছেই সেই গ্রামটির নাম জেহানাবাদ। সেখানকার বাসিন্দাদের মাঝে বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং তারা পুরো ঘটনার জন্য দোষারোপ করছে স্মার্টফোনকে। ভারতে পর্নোগ্রাফি বিষয়ক কোনোকিছু তৈরি এবং শেয়ার করা অবৈধ কাজ। যদিও সস্তা ইন্টারনেট ডাটা এবং স্মার্ট-ফোনের কারণে সেসব সহজেই মিলে যাচ্ছে হাতের নাগালে, কিন্তু উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, নারী-পুরুষের সম্পর্ক এবং যৌনতার বিষয়ে সেসব তাদের অর্থপূর্ণ কোনো ধারণাই দিতে পারছে না। স্থানীয় অনেক কিশোর-তরুণ বিবিসির সংবাদদাতার কাছে স্বীকার করেছেন যে, তারা যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের ভিডিও দেখেছেন। ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর জানায়, সে এরকম ২৫টির বেশি ভিডিও দেখেছে, সে এটাও জানায় যে নিজেদের বন্ধুদের মধ্যে তারা স্মার্ট-ফোনে এসব আদান-প্রদান করে থাকে। তার ভাষায়, 'আমার ক্লাসের অধিকাংশ ছেলেই একসাথে বসে কিংবা তারা নিজেরা নিজেরা এসব ভিডিও দেখে।' আরেক কিশোর বলে, 'এটা দারুণ লাগে কারণ সবাই এটা করে।' বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ভারতীয় বহু পুরুষের ক্ষেত্রেই এভাবে যৌনতার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। চলচ্চিত্র পরিচালক এবং লেখক পারমিতা ভোহরা এজেন্টস অব ইশক (ভালবাসার এজেন্ট) নাম দিয়ে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করছেন যেখানে 'সেক্স' বিষয়ে খোলামেলা কথা-বার্তা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, 'আমাদের বেড়ে ওঠার সময় যৌন শিক্ষা দেয়া হয়নি কিংবা এসব বিষয়ে স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক আলাপও হয়নি।'