বুদ্ধিমত্তার নতুন ধারণা

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

এস. দত্ত
প্রতিটি আবেগের রয়েছে তিনটি স্তর। যথাÑ ১. জ্ঞানগত ২. অনুভ‚তিমূলক ৩. ইচ্ছাগত। স্মরণ করা, কল্পনা করা, প্রত্যক্ষ হলো জ্ঞানগত দিক; সুখ-দুঃখের বিষয় হলো অনুভ‚তিমূলক দিক এবং কাজকমের্ প্রবৃত্তি হলো ইচ্ছামূলক দিক। তাই সুখ-দুঃখকে সামলিয়ে ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হলো সাফল্যের উত্তম উপায়। বিষয়টি আরেকটু সহজ করলে বলা যায় আমাদের ভাবনার আছে প্রধান দুটি দিকÑ যৌক্তিক ও আবেগী দিক। বাইরে থেকে হোক বা নিজের ভেতর থেকে হোক তা আমাদের মস্তিষ্কে আবেগী ভাবের প্রাধান্য সৃষ্টি করে। এ আবেগকে প্রশমন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ হয় সহজ। আত্মসচেতনতাই হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে বড় সামথর্্য। আত্মনিয়ন্ত্রণ করার অথর্ নিজের আবেগ-অনুভ‚তিকে দমন করা নয় বরং অ্যারিস্টটলের ভাষায়, ইচ্ছার কঠোর শ্রমচচার্। ‘লাইফোমেশিয়ান এথিক্স’ গ্রন্থে অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘ক্রুদ্ধ যে কোনো মানুষই হতে পারে। সে কাজটি সহজ। তবে সঠিক উদ্দেশ্যে এবং সঠিক সময়ে ক্রুদ্ধ হওয়াÑ এ কাজটি সহজ নয়।’ এ কারণেই একজন পিতা বা মাতা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে সচরাচর যতটা আবেগী হয়ে পড়েন একজন দক্ষ শিক্ষক কখনো ততটা আবেগী হন না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়ন্ত্রিত। কারো বুদ্ধি বেশি হলে আমরা বলি তার ‘আইকিউ’ বেশি। ‘আইকিউ’ অথার্ৎ ওহঃবষষরমবহপব ছঁড়ঃরবহঃ, যাকে বাংলায় বলে বুদ্ধাঙ্ক। কিন্তু কোনো কোনো মনোবিজ্ঞানী মনে করেন জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য আইকিউর (ওছ) গুরুত্ব সাবির্ক নয় বরং যার যত বেশি ‘ইকিউ’ সে-ই জীবনে তত বেশি সফল। ইকিউ (ঊছ) যার পূণর্ নাম হলো ঊসড়ঃরড়হধষ ছঁড়ঃরবহঃ বা আবেগজাত বুদ্ধি। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার দুই মনোবিজ্ঞানী পিটার স্যালোভে ও জন মেয়ার বলেন, ‘আবেগজাত বুদ্ধি হলো ব্যক্তির নিজের অনুভ‚তিকে জানার, বোঝার ও অন্যের অনুভ‚তির প্রতি সংবেদনশীল থাকার এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।’ মাকির্ন মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বলেন, ‘নিজের আবেগ বুঝতে পারা, রাগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা, যে কোনো জটিল পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারার যে ক্ষমতা তা-ই ইকিউ।’ ইকিউ হলো মনের গুণাবলি যাকে অনেকে চরিত্র বলে থাকেন। মনোবিদ ওয়াটসন (ডধঃংড়হ) মনে করেন আবেগ জন্মগতভাবে পাওয়া, সারমেনের (ঝযবৎসধহ) মতে আবেগ শিশুর মনের বিকাশের সঙ্গে সম্পকর্যুক্ত। আমাদের আবেগ-অনুভ‚তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের প্রিফন্টাল সাকির্ট, সেটার সম্ভবত মাঝ বয়ঃসন্ধির আগ পযর্ন্ত পূণর্ বিকশিত অবস্থাপ্রাপ্ত হয় না। তাই কচি বয়সে আবেগগত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের মস্তিষ্কে লিম্বিক সিস্টেম বলে একটি স্থান রয়েছে। এখান থেকেই উৎপন্ন হয় আবেগ-কামনা বা লালসা, উত্তেজনা ইত্যাদি। লিম্বিক সিস্টেমের মধ্যে আছে অ্যামাইগডালা নামে একটি বিশেষ স্থান যেখানে ভালোলাগা, মন্দলাগা, ক্রোধ, বিমষর্তা, আতঙ্ক ইত্যাদি জন্ম নেয়। লিম্বিক তন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নিউকরটেক্স। এরই জন্য মানুষ কিছু শিখতে, স্মরণ করতে ও পরিকল্পনা করতে সক্ষম। ভালোবাসার জন্ম হয় নিউকরটেক্সে। সরীসৃপদের নেই নিউকরটেক্স। তাই তো সন্তানদের প্রতি এদের নেই কোনো স্নেহ-ভালোবাসা। আর এ কারণেই জন্মের পর নিজেরাই নিজের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলতে দেখা যায়। আর তাই বাচ্চাদেরও জন্মের পরপরই লুকিয়ে থাকতে শিখতে হয়। নিউকরটেক্স ও লিম্বিক সিস্টেমের মধ্যে যত বেশি সংযোগ গড়ে ওঠে তত বেশি আবেগজাত অনুভ‚তি বিকশিত হয়। তাই তো আবেগজনিত প্রতিবতর্ (জবভষবী) ছাড়া আমাদের পক্ষে কোনো কাজ করাই সম্ভব নয়। কারণ আবেগ আমাদের কাজে প্রবৃত্ত করে। নিউকরটেক্সের ভালোবাসার আবেগ দিয়ে যা কিছু শেখা যায় তা আমাদের মনেও থাকে বেশি। ইকিউ বাড়াতে কিছু চচার্ করা যেতে পারে ১. নিজেকে নিয়ন্ত্রণ, ২. অন্যের আবেগ বুঝতে শেখা, ৩. নিজেকে জানা, ৪. মনোযোগী হওয়া, ৫. বেশি বেশি জেনে নেয়া, ৬. নিজেকে ব্যথর্ করা।