অনলাইনে কেনাকাটা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সরফরাজ নেওয়াজ
ডিজিটাল যুগে কষ্ট কমিয়ে দিচ্ছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো। পিছিয়ে নেই সোশ্যাল নেটওয়াকির্ং সাইট ফেসবুকও। কম্পিউটারে ব্রাউজ করলেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে নিজের পছন্দমতো পোশাক, গহনা বা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। অনলাইন শপিং শুনলেই অনেকে মনে করেন, টাকা দিতে হবে ক্রেডিট কাডের্। তবে সেই সমস্যাও এখন বলতে গেলে নেই। বেশির ভাগ অনলাইন শপই ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সাভির্স দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, অনলাইন সাইটগুলো দ্রæত পণ্য ঘরে পেঁৗছে দিতে নিয়ে এসেছে ‘হোম অন ডেলিভারি’, ‘ফ্রি ডেলিভারি’। অনেকেই মনে করেন, এ অনলাইন শপগুলোতে ভালোমানের পণ্য পাওয়া মুশকিল। কিন্তু সে দুশ্চিন্তাও এড়িয়েছে অনলাইন সাইটগুলো। এখন এ শপগুলোতে ব্র্যান্ডের পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই তরুণদের চাহিদা বাড়ছে অনলাইন শপের প্রতি। স্বল্পসময়ে ঝামেলাহীন বাজারের চাহিদা মেটাতে বেশি ঝুঁকছে একক পরিবারগুলো। দিন দিন গ্রাহকের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অনলাইন শপগুলোর চাহিদা। দেশে এখন অধর্শতাধিকেরও বেশি অনলাইন শপ রয়েছে। তবে কোন অনলাইন শপটি বেশি জনপ্রিয় তা নিয়ে একটি জরিপ করেছে মিলওয়াডর্ ব্রাউন। এতে স্থানীয় সব অনলাইন কেনাবেচার ওয়েবসাইটের মধ্যে ‘বিক্রয় ডটকম’ সিংহভাগ মানুষের টপ অব মাইন্ডে রয়েছে। এ সাইটটি টানা দুই বছর ধরে শীষের্ রয়েছে। দেশব্যাপী ১ হাজার ৮ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই এ জরিপ অনুযায়ী বার বার ভিজিট করা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ফেসবুক এক ও গুগল দুই নাম্বারে ছিল। উত্তরদাতাদের কাছে স্থানীয় অথবা আন্তজাির্তক সব শীষর্ ইন্টারনেট সাইটের মধ্যে বিক্রয় ডটকম তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এর পরই রয়েছে ‘এখানেই ডটকম’। গ্রাহকদের পণ্যের চাহিদার ওপরও ভিত্তি করে খোলা হয়েছে অনলাইন শপ। যেমন শুধু ঘরে বসে যে কোনো পণ্য কেনার জন্য রয়েছে এক ধরেনর সাইট, আছে ব্র্যান্ডেড শপগুলোরও অনলাইন শপিং, কাউকে গিফট দিতে চাইলেও রয়েছে আলাদা কিছু সাইট, একান্ত ব্যক্তিগত কিছু কেনার জন্য রয়েছে ভিন্ন সাইট আবার কারো যদি কেনা ও বেচা দুটোরই ইচ্ছা থাকে, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ক্লাসিফায়েড ওয়েবসাইটগুলোতে। নতুন পোশাক-আশাক ছাড়া যেন ঈদ অপূণর্ থেকে যায়। শুধু পোশাকই নয়, ঈদে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও কেনার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। ঈদ সামনে রেখে তাই বিক্রেতাদের মধ্যেও থাকে নানা আয়োজন। ই-কমাসর্ ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতি বছরই বাড়ছে ঈদের কেনাকাটার হার। গত বছর আর এবারের ঈদের কেনাকাটার পরিমাণ তুলনা করলেও তা বোঝা যায়। লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে দেড় থেকে দুই গুণ। ঈদ সামনে রেখে ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের আয়োজন যেমন বেশি থাকে, তেমন বিক্রিও বেড়ে যায় বেশ। রাজধানীসহ বেশ কিছু জেলা শহরে আড়ংয়ের বেশ বড়সড় বিক্রয় কেন্দ্র চোখে পড়ে। সারা দেশে ফ্যাশন হাউসটির পণ্যের চাহিদা আছে। তাই দেশের মানুষের কাছে আড়ংয়ের পণ্য পেঁৗছে দিতে অনলাইনে বিকিকিনির ওপর এবার বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে বলে জানান সিনিয়র রিটেইল ম্যানেজার আহমদ মনসুর রউফ। তিনি বলেন, ‘ই-কমাসর্ ওয়েবসাইট বা ই-স্টোরের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে ভালো। ঈদের তো আরো কিছুদিন বাকি, তবে গত রমজানের সঙ্গে তুলনা করলে এবার অডার্র পাচ্ছি প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিভাগীয় শহর তো বটেই, আমাদের হিসাবে দেশের অন্তত ৪৫টি জেলা থেকে নিয়মিত ফরমাশ পাচ্ছি আমরা।’ অন্যান্য ই-কমাসর্ ওয়েবসাইটের সঙ্গে বিক্রয় ডটকমের পাথর্ক্য, এটি অনলাইন বাজার। যে কেউ চাইলেই অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারেন, ক্রেতা তাদের পছন্দ মোতাবেক পণ্য খুঁজে নেন। তাই বিক্রয় ডটকমের নিজস্ব ঈদ আয়োজন নেই, তবে সাম্প্রতিক সময়ে চালু করা ‘বিক্রয় মেম্বারশিপ’ সেবার মাধ্যমে ১০০-এর বেশি সদস্য তাদের পোশাকসামগ্রী নিজ নিজ বিক্রয় পোটাের্লর মাধ্যমে বিক্রি করছেন। মেম্বারশিপ সেবার প্রত্যেকেই ঈদ উপলক্ষে পণ্য কেনাবেচার সময় তাদের পণ্যে বিভিন্ন অফার দিচ্ছেন বলে জানালেন বিক্রয় ডটকমের বিপণন পরিচালক মিশা আলী। তিনি বলেন, ‘ঈদে বরাবরই ভিজিটরের পরিমাণ বেড়ে যায়। এবারো তাই। বিশেষ করে পোশাকসামগ্রী ও এর পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বেশি বেড়েছে।’ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আর ক্রেতার মধ্যে কিছুটা তফাত থাকে। সব ভিজিটর পণ্য কেনেন না। তবে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলওয়াডর্ ব্রাউনের জরিপে দেখা গেছে, ভিজিটর থেকে ক্রেতায় রূপান্তরের হার বিক্রয় ডটকমে সবচেয়ে বেশি।’ ই-কমাসর্ আরো জনপ্রিয় করে তুলতে আজকের ডিলে চলছে ‘মধ্যবিত্তের ঈদ শপিং’। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৩০ হাজার নতুন পণ্য যোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে এখন এতে ১ হাজার ২০০ ক্রেতার ১ লাখ ৩০ হাজার পণ্য আছে। ঈদের সময়টাতে পণ্য কিনে বিকাশে মূল্য পরিশোধ করলে ১৫ শতাংশ অথর্ ফেরত পাওয়া যাবে। ঈদের আগের দিন পযর্ন্ত ২৪ ঘণ্টা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র সচল রাখা হয়েছে গ্রাহক কোনো সমস্যার মুখে যেন না পড়েন, তা দেখার জন্য। আজকের ডিলের প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ একেএম ফাহিম মাশরুরের মতে, গত ঈদের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। তিনি বলেন, দিনে এখন আমাদের গড়ে ১ হাজার ২০০ লেনদেন হচ্ছে। যেখানে গত ঈদে বড়জোর ৫০০ থেকে ৬০০ লেনদেন হতো। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে হাজার বিশেক লেনদেন হয় ই-কমাসর্ ও এফ-কমাসর্ মিলিয়ে। ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কাছ থেকে ই-কমাসের্ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ পাবে আজকের ডিল। আরো আছে এখানেই (িি.িবশযধহবর.পড়স), বাগডুম (িি.িনধমফড়ড়স.পড়স), দারাজ (িি.িফধৎধু.পড়স.নফ), কেইমু (িি.িশধুসঁ.পড়স.নফ), চালডাল (পযধষফধষ.পড়স), ওখানেই (িি.িড়শযধহবর.পড়স), মীনাবাজার (িি.িসববহধনধুধৎ.পড়স.নফ), প্রিয়শপ (িি.িঢ়ৎরুড়ংযড়ঢ়.পড়স) এবং অন্যান্য ই-কমাসর্ ওয়েবসাইটে ঈদ নিয়ে আছে নানা আয়োজন। ই-কমাসের্র প্রবৃদ্ধির সুনিদির্ষ্ট হার উল্লেখ করা সম্ভব না হলেও তা বেশ ইতিবাচক। তিনি বলেন, ‘কিছুটা বিকল্প উপায়ে আমরা যদি একটা সাবির্ক ধারণা পেতে চাই, তবে বলা যায় কুরিয়ার সেবাগুলোর এখন স্বণর্যুগ। সেটা ই-কমাসের্র উন্নয়নের জন্যই। অন্যদিকে আপনি যদি ফেসবুকে কিছু সময় ব্যয় করেন, তবে ই-কমাসির্ভত্তিক সেবার প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। সব মিলিয়ে আমি বলব, ই-কমাসের্র ভবিষ্যৎ খুবই ইতিবাচক।’