অন্তিম শয়ানে এন্ড্রু কিশোর

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
এন্ড্রু কিশোর
বাংলা গানের প্রবাদপুরুষ ও পেস্ন-ব্যাকসম্রাটখ্যাত কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর খ্রিষ্টানদের কবরস্থানে সমাহিত করা হয় দেশবরেণ্য এ সংগীতশিল্পীকে। তাকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহীর বিভিন্ন সংগীত প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও শিক্ষকরা। ঢাকা থেকে এন্ড্রু কিশোরকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ইথুন বাবু, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানসহ অনেকে। রাজশাহীর স্থানীয় চার্চে বুধবার সকাল ৯টায় শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নিয়ে আসা হয়েছে এন্ড্রু কিশোরকে। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গির্জার মধ্যে রাখা হয় তাকে। এরপর প্রিয় গায়কের পরিবার-পরিজন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রার্থনা করেন ফাদার। প্রার্থনা শেষে সাধারণের শ্রদ্ধা জানাতে চার্চের সামনে রাখা হয় মরদেহ। এখানে সবাই ফুলে ফুলে সিক্ত করেন প্রিয় শিল্পীকে। চার্চের আয়োজন শেষ হলে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ নিয়ে আসা হয় রাজশাহীর কালেক্টরেট মাঠের পাশে খ্রিষ্টানদের কবরস্থানে। সেখানেই নিজের পছন্দের স্থানে চিরনিদ্রায় যান পেস্ন-ব্যাকসম্রাট এন্ড্রু কিশোর। এর আগে এন্ড্রু কিশোরের পরিবার থেকে জানানো হয়, তাকে আয়োজন করে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে না। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে তার মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা স্থাগিত করা হয়। তাছাড়া লোক সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত তা আয়োজন করতে অনুমোদন দেয়নি। ফলে পেস্ন-ব্যাকসম্রাটের শেষ বিদায় অনেকটা সাদামাটাভাবেই সম্পন্ন হলো। এন্ড্রু কিশোরের বাংলা চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু হয় কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খানের হাত ধরে। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে 'মেইল ট্রেন' সিনেমায় 'অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ' ছিল এন্ড্রু কিশোরের প্রথম পেস্ন-ব্যাক। এন্ড্রু কিশোরের মৃতু্যর খবর শুনে শোকস্তব্ধ আলম খান। তিনি বললেন, ভীষণ খারাপ লাগছে! শরীর ভালো নেই, মনটাও খারাপ হয়ে গেল। টেলিভিশন ছেড়ে ওর গান শুনছি।' তিনি আরও বলেন, 'চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় ও আমাকে বলেছিল, আমার আর ফেরা হবে না। এ শুধু দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে যেতে পারি, কষ্ট যেন কম হয়; শুনে মনটা ভেঙে গিয়েছিল।' এন্ড্রু কিশোরের শেষ যাত্রা স্বচোক্ষে দেখতে পারেননি নগর বাউলখ্যাত গায়ক জেমস। সে আপেক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, 'এন্ড্রু দা আমার কয়েক বছরের সিনিয়র। আমরা একই অঞ্চলের মানুষ। একসঙ্গে তার সঙ্গে কত গল্প, কত স্মৃতি বলে বোঝাতে পারব না। একটি পত্রিকার অনুষ্ঠানে তার হাত থেকে আমি ক্রেস্ট নিয়েছিলাম। তার হাসিমাখা মুখ আর ওই ক্রেস্ট নেওয়ার মুহূর্তেও আনন্দটা ছিল অসাধারণ। সে সময় তার সঙ্গে কানে কানে কথা হয়েছিল। 'কেমন আছেন সব ঠিকঠাক তো?' মনে হয় দুষ্টুমির ছলেই একথাটা বলেছিলাম। এন্ড্রু দা শুনে হাসছিলেন। এক রকম সরলতা সব সময় বিরাজ করত তার চোখে-মুখে। সেই সরলতামাখা মায়াভরা মুখ আর কখনো দেখতে পাবো না, এটা ভাবতেই পারছি না।' দেশ বরেণ্য এ শিল্পী দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দেশ বরেণ্য এ শিল্পী। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার ৯ মাস পর গত ১১ জুন রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন তিনি। সপ্তাহ খানেকের বেশি মিরপুরের বাসায় সময় কাটানোর পর রাজশাহী চলে আসেন। সেখানে ৬ জুলাই সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এ সঙ্গীতশিল্পী আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে 'জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প', 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস', 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি', 'আমার বুকের মধ্যে খানে', 'সবাই তো ভালোবাসা চায়', 'ওগো বিদেশিনী'সহ অসংখ্য গান।