তিশার এইসব দিন-রাত্রি

ঘরবন্দি জীবন নিয়ে অভিযোগ-অনুযোগের শেষ নেই। কারও অস্বস্তি, কারও বিরক্তি; অনেকটা দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তবে অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা এর ব্যতিক্রম। খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসে এটাই সবচেয়ে বড় বিরতি। মহামারি নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতিতে যারপরনাই খুশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী।

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
নুসরাত ইমরোজ তিশা
করোনাভাইরাস। ব্যক্তি ও কর্মজীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে মরণঘাতী এ ভাইরাসটি। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ নুসরাত ইমরোজ তিশা। কাজপাগল এই অভিনেত্রী শুটিংয়ে নেই প্রায় চার মাস। নেই প্রতিদিন কাজে যাওয়ার তড়িঘড়ি কিংবা ডেডলাইনের প্রেশার। ফলে তিশার কিঞ্চিত খুশি হওয়ারই কথা। কারণ বিয়ের পর এতোটা নিবিড়ভাবে সংসার করার সুযোগ আসেনি তার জীবনে। আজ দেশে তো কাল বিদেশে, এভাবেই কেটেছে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়। এবার যেন কর্মজীবনকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তি ও সাংসারিক জীবনে মনোযোগ দিতে পারলেন তিনি। তিশার ঘরবন্দির অন্যরকম জীবন নিয়ে ভক্ত ও অনুরাগীদের আগ্রহের শেষ নেই। সবার মনে একটাই প্রশ্ন। কী করছেন তিনি? তিশার অবশ্য এক কথা, তিনি এই জীবনটাকেও উপভোগ করছেন। এছাড়া ছবি আঁকা, নানা রকম জিনিস বানানো, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করা, পড়া, সিনেমা দেখার মতো আনন্দময় কাজগুলো করে দিন কাটছে তার। 'আমি নিজের মতো করে বাগান করছি, সরয়ারকে নতুন গল্পে সাহায্য করছি। এতদিন আসলে এত চাপ ছিল যে নিজেকেও সময় দেওয়া হয়নি। এই প্রথম মনে হচ্ছে, আমি একজন আদর্শ গৃহিণীর মতো টানা সংসার করছি। এই জীবনটাও আমি ভীষণ উপভোগ করছি।'- যোগ করেন তিশা। তবে ঘরবন্দি জীবন নিয়ে খুব বেশি আক্ষেপ নেই 'টেলিভিশন' ও 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার'র মতো তুমুল জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করা এ অভিনেত্রীর। তার কাছে বরং এটি একটি সুযোগ। লকডাউনে ঘরবন্দি হওয়ার পর পরিবারের সদস্য ও সংসারের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী হওয়া গেছে, এটাই বা কম কীসের? তিশা বলেন, 'যে আত্মীয়রা দেশের বাইরে থাকেন, 'তাদের সঙ্গে আগে খুব কম যোগাযোগ হতো। এখন তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। তাছাড়া ময়ের সঙ্গে সময় কাটাইনি বহু বছর। এখন তার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। তার সঙ্গে গল্প করতে পারছি। আগে এমনও হয়েছে- কাজ শেষে বাসায় ফিরে দেখতাম, মা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন তো গল্প বা কথা বলার সুযোগ পেতাম না। এখন মন খুলে মা-মেয়ে গল্প করতে পারছি।' তবে শিগগিরই কাজে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ছোট ও বড় পর্দার দর্শকপ্রিয় এই অভিনেত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিংয়ের আয়োজন করলে কাজ করতে আপত্তি নেই তার। তিশা বলেন, 'শিগগির হয়তো শুটিংয়ে ফিরব। শিল্পী হিসেবে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বুঝতে পারছি যে আমাকে কাজ শুরু করতে হবে। আজীবন আমি ঘরে বসে থাকতে পারব না। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে শুটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।' কদিন আগেই তিশা-ফারুকী দম্পত্তির দশ বছর পূর্তি হলো। প্রতিবারই কিছু না কিছু আয়োজন থাকলেও এবার তেমন কিছুই ছিল না। তবে তিশার কাছে প্রতিদিনই আনন্দের। অন্য পাঁচ-দশটা দম্পতির মতো নয় তিশা ফারুকীর সংসার। তাদের গল্পটা একদমই গন্ডির বাইরের। দুটি মানুষ শুরু থেকেই দু'ধরনের। বিয়ের আগে তো নয়ই, বিয়ের পরেও একজন অন্যজনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। এমনকি কাজকর্মেও বাগড়া দেননি। মোদ্দা কথা, বিয়ের পর রং পাল্টে যায়নি তাদের ভালোবাসার। তিশার মতে, 'ফারুকী ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমি ওকে ওর মতোই থাকতে দিয়েছি। আমার জন্য আলাদা কোনো প্রেশার নিতে দিইনি। কিংবা আমার সিদ্ধান্তও তার ওপর কখনো চাপিয়ে দিইনি। এটাই আমাদের অন্যরকম ভালোবাসা। সবচেয়ে বড় বিষয়, ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকলে আমার কাছে প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দে কাটে।' তবে ভক্তরা চাইছেন এবার অন্তত তিশা-ফারুকীর কোলে আসুক নতুন অতিথি। যদিও তিশা বেশ কয়েকবার বলেছেন, সেসব নিয়ে তারা এখনো কিছু ভাবেননি। ছোট ও বড় দুই পর্দাতে দীর্ঘদিন ধরেই সমানতালে চলছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অভিনয় করছেন একের পর এক নাটক ও চলচ্চিত্রে। পাচ্ছেন দর্শকপ্রিয়তাও। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সফলতার সঙ্গেই এগিয়ে চলেছেন তিনি। তিশার আগে-পিছে অনেকেই এই সময়ে এসেছেন। তারকাখ্যাতি অর্জন করে আবার হারিয়েও গেছেন। কিন্তু তিশা অভিনয় করে চলেছেন বিরামহীন। এদিকে তিশা প্রথমবারের মতো প্রযোজক হিসাবেও নাম লিখিয়েছেন। ছবির নাম 'নো ম্যানস ল্যান্ড'। এ প্রসঙ্গে তিশার ভাষ্য, 'নজরুলের একটা কবিতার লাইন আছে, 'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে'। অনেকটা এ উক্তির ওপর ভিত্তি করেই প্রযোজনায় এসেছি। এটা সত্যি যে, বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশের চলচ্চিত্র খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন শিল্পীরা যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসেন, তবেই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি সম্ভব। নিজেদেরই যদি ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তাহলে সাধারণ দর্শক কেন চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হবে? এই ভাবনা থেকেই প্রযোজনায় আসা। এছাড়া 'নো ম্যানস ল্যান্ড' ছবির নির্মাণ পরিকল্পনার শুরু থেকে ফারুকীর সঙ্গে আছি। এরই মধ্যে এ ছবিতে যুক্ত হয়েছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক, সুরকার এ আর রহমান, বলিউড তারকা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিসহ আরও অনেকে। গুণী এই অভিনেত্রী কাজ করেছেন সদ্য প্রয়াত বলিউড তারকা ইরফান খানের সঙ্গেও। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত 'ডুব' ছবিতে তাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে 'শনিবার বিকেল' ছবিটি। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'হলুদ বনি' নামের একটি ছবির কাজও শেষ করেছেন লকডাউনের আগে। এছাড়া তার হাতে আছে 'বোবা রহস্য' শিরোনামের আরও একটি ছবি।