এবার ভাঁড়ামো, সস্তা গল্পে ঈদের নাটক

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
একটি নাটকের দৃশ্যে তাহসান খান ও বিদ্যা সিনহা সাহা মিম
ঈদের আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে দেয় বিনোদনমূলক নানা আয়োজন। তাই প্রতি ঈদে দেশের সবক'টি চ্যানেলে কমপক্ষে পাঁচদিন এবং কোনো কোনো চ্যানেলে দশদিন ধরে চলে ঈদের অনুষ্ঠানমালা। এসব আয়োজনের বেশিরভাগেই থাকে নাটক ও টেলিছবি। সেই হিসেবে এটাকে নাটকের ঈদ বললেও ভুল হবে না। এক ঘণ্টার নাটক, টেলিছবি ও সাতপর্ব- সব মিলিয়ে প্রচার হয় শত শত নতুন নাটক-টেলিছবি। অন্যান্য বছরের মতো এবারের ঈদেও ছোটপর্দায় নতুন নতুন নাটক ও টেলিছবির প্রতি দর্শকদের কৌতূহল ছিল। সংগীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, রম্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকলেও দর্শক পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নাটক ও টেলিছবি। গত কয়েক দিনে ঈদের আয়োজনে প্রচার হয়েছে প্রায় শতাধিক নাটক। এখনো শেষ হয়নি ধারাবাহিকগুলোর প্রচার। গত রোজার ঈদের মতো এবারের ঈদেও নতুন নাটকের সঙ্গে প্রচার হচ্ছে পুরানো নাটক। এসব নাটকে আলোচিত তারকাদের পাশাপাশি নতুনদেরও দেখা গেছে। তবে করোনার কারণে এবারের ঈদে কম অভিনয় করেছেন ছোটপর্দার শীর্ষ তারকারা। অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, মোশাররফ করিম, মীর সাব্বির, অপূর্ব, চঞ্চল চৌধুরী, সজল, আফরান নিশো, তারিন জাহান, নাদিয়া আহমেদ, মেহজাবীন চৌধুরী, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, মৌসুমী হামিদ, জোভানসহ আরও অনেকে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের নাটকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রচারের পর তার প্রমাণ মেলে না নাটকে। এবারের ঈদেও একই রূপ। পরিচিত মুখ, সস্তা গল্প ও ভাঁড়ামো থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি ঈদের নাটক। নায়ক-নায়িকার বাইরে গুরুত্ব পায়নি অন্য চরিত্রগুলো। রোমান্টিকতার ছড়াছড়ি। যেন প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া সমাজে আর কেউ নেই। গল্পে নেই নতুনত্ব। জোর করে হাসানোর বৃথা চেষ্টা ছিল বারবার। শুটিং লোকেশনও ছিল পরিচিত। কিছু কিছু নাটকে দর্শক প্রচন্ড বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কিছু নাটকে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত করোনা প্রসঙ্গ উঠে আসলেও উপস্থাপন ছিল দুর্বল। দু-একটা নাটক-টেলিছবি যে দর্শকদের ভালো লাগেনি তা নয়, তবে তা একেবারে নগণ্য। খুব কম নাটকেই দেখা গেছে বৈচিত্র্য। কিন্তু সেই নাটক বা টেলিছবিগুলো দেখতে গিয়ে দর্শককে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিজ্ঞাপনচিত্রের কারণে। বছর বছর বিজ্ঞাপনচিত্রের ব্যবহার কমার বদলে বেড়েই চলছে। নাটকের মাঝখানে দীর্ঘ বিজ্ঞাপনের উৎপাতে দর্শক বিরক্ত হয়ে অন্য চ্যানেলে যেতে বাধ্য হলেও স্বস্তি মেলেনি। সব চ্যানেলে একই অবস্থা! যদিও মাঝে-মধ্যে কয়েকটি টিভি চ্যানেল বিরতিহীন বা স্বল্প বিরতির কিছু নাটক উপহার দিয়েছে। যাই হোক, ঈদের বিশেষ নাটক ও টেলিছবি দেখার জন্য দর্শকরা নির্দিষ্ট সময়ে টিভি সেটের সামনে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই শুরু হয় বিজ্ঞাপন বিরতি। একটি ৪০ মিনিটের নাটক দেখার জন্য ৯০ থেকে ১২০ মিনিট সময় ব্যয় করতে হয় দর্শককে। বাদবাকি সময়ে বিজ্ঞাপন, নয়তো সংবাদ শিরোনাম। যখন দেশে একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি ছিল তখন দর্শক চাতক পাখির মতো টিভির দিকে তাকিয়ে থাকত। প্রতিটি পরিবারে অনুষ্ঠান দেখার প্রস্তুতি থাকত। বিশেষ করে ঈদে জব্বার আলী এবার কী ঘটনা ঘটাবে তাই দেখার জন্য পুরো বছরের অপেক্ষায় থাকত দর্শক। রাস্তাঘাট ফাঁকা করে দিয়ে নাটক দেখতে বসত দর্শক। প্রচারের পর কয়েকদিন ধরে চলত সেই নাটকের আলোচনা-সমালোচনা। আর এখন প্রায় সব চ্যানেলই বিশেষ দিবসে নিত্যনতুন সংযোজনও চোখে পড়ার মতো। একটা সময় মনে করা হতো ঈদের নাটক মানে হাসির নাটক। কিন্তু এখন আর এই ধারণা নেই। এ ধারণা ভেঙেচুরে অনেক সিরিয়াস ধরনের নাটক তৈরি করছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অনিমেশ আইচ, নূরুল আলম আতিক, গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মতো নির্মাতারা। দর্শকরাও তা অনায়াসে গ্রহণ করেছে। ঈদের নাটকটি অবশ্যই শহরের গল্প হতে হবে। সে ধারণাও এখন অতীত। এখন গ্রামের পটভূমিতে ঈদের নাটকের সংখ্যাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ক্রমেই মানহীন নাটক ও নানা ভোগান্তির কারণে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ঈদের নাটকও দর্শক হারাতে বসেছে। নানা কারণেই আধুনিক দর্শকরা এখন ঈদের বিশেষ নাটক দেখার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইউটিউবকে। বিজ্ঞাপনের বিরতি না থাকায় এখন ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে নাটক বা সিনেমা দর্শকদের স্বস্তি দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। আর সে কারণেই এখন শুধু নাটক বা গানই নয়, চলচ্চিত্রও মুক্তি পাচ্ছে ইউটিউবে। একটা সময় যেখানে নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন করা হতো নানা কায়দায়, এখন সেখানে সিনেমার ট্রেইলার ছাড়া হয় ইউটিউবে। পরিচালক সাগর জাহান বলেন, 'নাটকের সস্তা একটি বিন্যাসে আটকে আছি আমরা, যেখানে আসলে কোনো গল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। নাটকের প্রাণ গল্পের বদলে আমরা বরং অন্যদিকে মন দিচ্ছি। নতুন ধরনের ভাবনা বা গবেষণার অভাব আমাদের। ফরমায়েশি কাজ করতে করতে আমাদের আর নতুন কিছু করা হচ্ছে না, এমনকি আগের দিনের সেই পারিবারিক গল্পের নাটক বানানো হচ্ছে না। যে নাটকগুলো দেখার জন্য দর্শকরা অধির আগ্রহে বসে থাকতেন। তবে আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছি তারা চেষ্টা করছি দর্শকের খোরাক মেটাতে।'