বৈচিত্র্যময় কণির্য়া

তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কণির্য়া। সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে খুব অল্প সময়েই জয় করে নিয়েছেন শ্রোতা-দশর্কদের হৃদয়। তবে তাকে সবার থেকে আলাদা করে বৈচিত্র্যময় কণ্ঠশৈলী। গান আর সমসাময়িক নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আলী মাসুদ

প্রকাশ | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাকিয়া সুলতানা কণির্য়া
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো ‘পাওয়ার ভয়েস’-এর বিজয়ী হয়ে মিডিয়ায় পা রাখেন জাকিয়া সুলতানা কণির্য়া। নজরুলসংগীতের মাধ্যমে তার গানে হাতে খড়ি হলেও এখন পপ, রক ও ব্যান্ড ঘরানার গান গেয়েই অভ্যস্ত তিনি। বতর্মানে তিনি স্টেজ শোর পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছেন টিভি অনুষ্ঠান ও সিনেমার গানে। একক গানের পাশাপাশি দ্বৈত গানও করছেন নিয়মিত। কণির্য়া বলেন, ‘এখন দ্বৈত গানের পাশাপাশি একক গান নিয়েও বেশি ব্যস্ত। কিছুদিন আগে স্নেহাশীষ ঘোষের লেখা ও রেজওয়ান শেখের সুরে বঁাকা চোখে শিরোনামের একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছি।’ অডিও গানের পাশাপাশি কণির্য়া নিয়মিত মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করছেন। সম্প্রতি আরটিভি মিউজিক থেকে প্রকাশ হয়েছে তার একক গানের মিউজিক ভিডিও ‘লাগ ভেলকি’। গানটি নিয়ে কণির্য়া বলেন, ‘গত ৩০ অক্টোবর গানটি প্রকাশের পর থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই ফোনে, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে গানটির প্রশংসা করছেন।’ অচিরেই ধ্রæব মিউজিকের ব্যানারে প্রকাশ পাবে ‘এলোমেলো’ গানটি। এর কথা ও সুর করেছেন তরুণ মুন্সী। এ গানে তার সঙ্গে রয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর। এ ছাড়া অনুরূপ আইচের কথায় নাজির মাহমুদের সুরে আসিফের সঙ্গে ‘মেঘ বলেছে’ শিরোনামের আরও একটি গান প্রকাশের অপেক্ষায়। আসিফের সঙ্গে এর আগেও বেশ কয়েকটি দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিয়ে বেশ সাড়া পেয়েছেন কণির্য়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, এ সময়ের সব শিল্পীই আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে গাইতে চান। আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে গান করার প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। তার মতো এত বড় মাপের একজন কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে গাইতে পারা সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। তার সঙ্গে কাজ করে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি অসম্ভব একজন ভালো মানুষ। জুনিয়র হিসেবে আমাকে খুব সহজে আপন করে নিয়েছেন। কাজের ক্ষেত্রেও অনেক সহযোগিতা করেছেন।’ আসিফের সঙ্গে ইদানীং একটু বেশি কাজ করলেও কণির্য়া অন্যদের সঙ্গেও গাইতে চান। সংগীতাঙ্গনের আরেক গুণী শিল্পীর সঙ্গে গেয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ। কণির্য়া বলেন, ‘আমি অন্যদের সঙ্গেও গাইতে চাই। তবে সে ক্ষেত্রে গানের কথা আর সুর মনের মতো হতে হবে। দেশের আরেকজন বড় মাপের শিল্পীর সঙ্গে গান করার খবরটি সময় হলেই সবাই জানতে পারবেন।’ এ সময়ের গান নিয়ে কণির্য়া বলেন, ‘এখন প্রচুর গান হচ্ছে কিন্তু অসংখ্য গানের ভিড়ে অনেক ভালো গান হারিয়ে যাচ্ছে। আগের গানগুলো এখনো টিকে আছে কারণ তখন কম গান হতো। অনেক দিন পর সুন্দর একটি গান প্রকাশ পেতো, যা দীঘির্দন মানুষের মনে জায়গা করে নিত। সময়ের পরিবতর্ন হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। মানুষের মানসিকতায়ও পরিবতর্ন হয়েছে। গানের সঙ্গে এখন ভিডিও হচ্ছে।’ মিউজিক ভিডিও সম্পকের্ তিনি বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সব কিছুতে পরিবতর্ন আসে। তাই গানে মিউজিক ভিডিওর গুরুত্ব রয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সারাবিশ্বেই এখন শিল্পীরা নিজের গানের সঙ্গে পারফমের্ন্স করছেন। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। যেসব গানের সঙ্গে শিল্পী নিজেই পারফমের্ন্স করছে সেগুলো দশর্ক-শ্রোতারাও অন্য গানের চেয়ে বেশি গ্রহণ করছেন। এটি সত্যি, গান প্রথমত শোনার বিষয়। কিন্তু সময়কে উপেক্ষা করা যাবে না।’ স্টেজ শো, টিভি অনুষ্ঠানে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সিনেমায় গান কম গাওয়া হচ্ছে। তবে এ পযর্ন্ত তিনি ১৩-১৪টি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে জাকির হোসের রাজু পরিচালিত ‘রাঙা মন’ সিনেমায় ‘স্বপ্ন’ শিরোনামের গানে । এরপর অনেক গান গাইলেও এ সময় সিনেমায় গাওয়া হচ্ছে না। প্রস্তাবও আসে কিন্তু ব্যাটে-বলে মিলে না। কণির্য়া বলেন, ‘সিনেমার গানের প্রস্তাব হুট করে আসে। যে সময় হয়ত আমি স্টেজ নিয়ে ঢাকার বাইরে আছি। তখন আর সম্ভব হয় না। প্রস্তুতিরও দরকার আছে। যা গাইব তা যদি ভালো না হয়, তাতে লাভ নেই। সময়-সুযোগ হলে প্লেব্যাক করব।’ কণির্য়ার জন্ম মাগুরায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। পড়ালেখাও ঢাকাতে। ২০০০ সালে মারা যান বাবা আবু বকর। তিনি বিমান বাহিনীতে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর পর মা সেলিনা আক্তারের স্নেহ আর ভালোবাসাকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলছেন তিনি। মায়ের অনুপ্রেরণাতেই শুরু করেন গান। কণির্য়া বলেন, ছোটবেলা থেকে পারিবারিকভাবেই গানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বাবা-মা দু’জনেই গান পছন্দ করতেন। স্কুল-কলেজের প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে আনা পুরস্কার দেখে বাবা খুশি হতেন। মা গাইতে উৎসাহ দিতেন।’ স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কণির্য়ার গান শুনে সবাই মুগ্ধ হতেন। নিয়মিত গান চালিয়ে যেতে অনেকেই পরামশর্ দিতেন। কণির্য়া ছায়ানটে ভতির্ হয়েছিলেন নজরুলসংগীতে। তবে পপ ঘরানার শিল্পী কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নজরুলসংগীত শিখলে সব ধরনের গান শেখা সহজ হয়। তাছাড়া পপ ঘরানার গানের প্রতি সব সময় আমার আগ্রহ ছিল। এখন পপ ঘরানার গান গাইলেও ইচ্ছে আছে সামনে কিছু নজরুল সংগীত করব। যতœ নিয়েই সেই গানগুলো করব।’ প্রিয় শিল্পী কে জানতে চাইলে কণির্য়া বলেন, ‘রুনা লায়লা, পপ তারকা মিলা ও বলিউডের সুধীন চৌহানের গান শুনতে ভালো লাগে। কোনো ব্যান্ড দলের সদস্য না হলেও ভালোলাগে ব্যান্ডের গান।’