'মঞ্চনাটক নিয়ে অবশ্যই আমরা গর্ব করতে পারি'

নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। দেশের অন্যতম প্রধান মঞ্চনাটকের দল 'থিয়েটার'-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) বিশ্ব সভাপতি হয়েছিলেন দু'বার। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) অনারারি প্রেসিডেন্ট তিনি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মঞ্চনাটকে অভিনয় করছেন তিনি। এখনো তিনি 'মেরাজ ফকিরের মা' এবং 'মায়ানদী' নাটক দিয়ে মঞ্চে সরব। পেয়েছেন একুশে পদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কার। সম্প্রতি স্ত্রী ফেরদৌসী মজুমদারসহ করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছেন তিনি। করোনাকালীন জীবন ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তারার মেলার সঙ্গে কথা বলেছেন মঞ্চের এই বরেণ্য ব্যক্তি।

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
রামেন্দু মজুমদার
করোনায় গৃহবন্দি সময়টা কীভাবে কেটেছে? আমরা দুজনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। প্রথমে ফেরদৌসী পরে আমার মধ্যে এই ভাইরাস দেখা দেয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলেছি। দ্বিতীয়বার করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। এখন দুজনেই ভালো আছি। তখন শক্ত মনে করোনাকে মোকাবিলা করেছি। ঘরের মধ্যেই দিনগুলো কেটেছে। একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। বই পড়ে, লেখালেখি করে ও অনলাইনে সময় পার হয়েছে। কোন ধরনের লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? প্রবন্ধ লিখেছি। একটা প্রবন্ধের বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে। তবে বই মেলার জন্য নয়, তার আগেই প্রকাশ করা হবে। বইটির নাম এখনো ঠিক করা হয়নি। করোনায় মঞ্চনাটকে কেমন প্রভাব পড়েছে? করোনার সংকট বিশ্বব্যাপী। এর প্রভাবটাও সবক্ষেত্রে পড়েছে। স্বাভাবিক চলার গতি থামিয়ে দিয়েছে এই ভাইরাস। মঞ্চনাটকও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু সচল হতে শুরু হলেও মঞ্চপাড়া স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। সম্প্রতি 'লাল জমিন'-এর প্রদর্শনী হয়েছে... হঁ্যা, কিছুদিন আগে মোমেনা চৌধুরী তার আলোচিত 'লাল জমিন' নাটকটির শো করেছেন। এটা আসলে দুই পক্ষের একটা বিষয়। যারা দেখবে তারা যদি নিরাপদ মনে করেন এবং যারা দেখাবেন তারা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেখাতে পারেন তাহলে ঠিক আছে। আপনি নিরাপদ মনে করলেও আমি হয়তো নিরাপদ বোধ করছি না। এখনো তো ভয় রয়ে গেছে। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হতে চললেও গ্রম্নপ থিয়েটারের পক্ষ থেকে মঞ্চনাটক প্রদর্শনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। মঞ্চের নতুন নাটক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন... করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে আমাদের নাটকের দল থিয়েটার থেকে একটি নতুন নাটকের কাজ শুরু করেছিলাম। থিয়েটারের পক্ষ থেকে এটি আমার চতুর্থ নির্দেশনা। নাটকের নাম 'পহালে শর্বরী'। কিন্তু করোনা চলে আসায় কাজটি নিয়ে এগোতে পারিনি। করোনাকাল কেটে গেলে এ নাটকটি নিয়ে মঞ্চে ফিরব। দুর্দিনে মঞ্চকর্মীদের কীভাবে দিন কাটছে? মঞ্চশিল্পীরা অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন না। তারা ভালোবাসার জায়গা থেকে মঞ্চে সময় ব্যয় করে থাকেন। দুর্ভাগ্য হলেও এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের দেশে হয়ে আসছে। যেহেতু শিল্পীরা মঞ্চ থেকে কোনো অর্থ পাচ্ছে না তাই করোনার এই সময়ে নাটক বন্ধ থাকায় তাদের বেগ পেতে হচ্ছে না। হয়তো তাদের পেশার জায়গায় কোনো সমস্যা হতে পারে। সেটা ভিন্ন কথা। তবে যারা মঞ্চে লাইট-ক্যামেরা, যন্ত্র সংশ্লিষ্ট কাজ করেন তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে আছে। \হ সফল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে কীভাবে দেখেন? সফল কিনা জানি না। তবে দেশের সংস্কৃতির জন্য কাজ করে গেছি। মঞ্চনাটকের জন্য কাজ করে গেছি। কিছুটা হলেও বাংলাদেশের মঞ্চনাটক ও সংস্কৃতির জন্য অবদান রাখতে পেরেছি। বিশেষ করে আইটিআই'র সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিতি করিয়ে দিতে পেরেছি। সফল মানুষ হব তা ভেবে কাজগুলো করিনি। ভালোবাসা এবং দেশের সংস্কৃতির কথা ভেবে কাজ করেছি। নাটকের দল 'থিয়েটার' নিয়ে জানতে চাই ১৯৭২ সালে আমরা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি। নিয়মিত নাটক করব, সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা আমরা মঞ্চনাটকের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করার কথা ভেতরে লালন করেছি। মোট কথা নাটকে আমরা গণমানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। থিয়েটার প্রথম মঞ্চে আনে শহিদ মুনির চৌধুরীর 'কবর' নাটকটি। সেই থেকে এখনো পথচলা অব্যাহত আছে। কতদূর এগিয়েছে বাংলাদেশের মঞ্চনাটক? ৪৫ বছরে বাংলাদেশের মঞ্চনাটক অনেকদূর এগিয়েছে। মঞ্চনাটক তো আমরা ভালোবাসা থেকে করি, শখ থেকে করি। মঞ্চনাটক করে তো টাকা আসে না। তারপরও নাটককে ভালোবেসে মঞ্চে অভিনয় করি। মঞ্চনাটক কারও পেশা নয়। তারপরও বাংলাদেশের মঞ্চনাটক একটি ভালো অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে ও বিদেশে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমাদের মঞ্চনাটক নিয়ে অবশ্যই আমরা গর্ব করতে পারি। এটি আমাদের সম্মিলিত চেষ্টার ফসল।