দু'জনার অন্যরকম একটি দিন

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
এ টি এম শামসুজ্জামান ও সাদিকা পারভীন পপি
বয়সের তফাৎ অনেকখানি। সম্পর্কেও চাচা-ভাতিজি। তাতে কী! সমীকরণে ঘাটতি নেই এক বিন্দুও। দুজনের মাঝে অদ্ভুত এবং অটুট বন্ধন বিরাজমান অনেক বছর থেকেই। বলা চলে, পরিচয়ের শুরু থেকেই। বিশেষ করে আজকের এই দিনটির জন্য আরও বেশি ঘনিষ্ঠতা তাদের। কাকতালীয়ভাবে দুজনই আজ পৃথিবীর মুখ দেখেছেন। হঁ্যা, আজ তাদের জন্মদিন। বুঝতে নিশ্চয়ই বাকি নেই, কাদের কথা বলা হচ্ছে! একজন হলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, জীবন্ত কিংবদন্তী, একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। অন্যজন হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। এই দুই তারকার আজ জন্মদিন। বিগত বছরগুলোতে এই দিনে নানা আয়োজনে হৈচৈর মধ্য দিয়ে কেটে গেলেও এবার কাটছে অন্য রকমভাবে। বর্তমান পরিস্থিতি ও শারীরিক অবস্থার কারণে কোনো রকম আয়োজন ছাড়া সাদামাটাভাবে কাটছে তাদের জন্মদিন। এটিএম শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থাবস্থা থেকে এখন বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রাজধানীর সূত্রাপুরের বাসাতেই নিরিবিলি পরিবেশে নিজের মতো করেই সময় কাটাচ্ছেন এই অভিনেতা। জন্মদিন প্রসঙ্গে এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, 'আমি কোনোদিন জন্মদিন উদযাপন করিনি। কিন্তু দিনটিকে ঘিরে কীভাবে যেন একটি উৎসবের সৃষ্টি হয়ে যায়। গেল বছর আমার মেয়ের বাসায় ছিলাম, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতে। গেল বছর চলচ্চিত্র-নাটকের অনেকেই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন। কিন্তু এই বছর মনে হয় আর সেই সুযোগটা থাকল না। কারণ করোনা'র কারণে সবার মধ্যেই একটা ভয় আছে। আমার নিজেকেও অনেক সতর্ক থাকতে হচ্ছে, সচেতন থাকতে হচ্ছে। আলস্নাহ আমাকে ভালো রেখেছেন। ইচ্ছে করলেও কাউকে দেখার সুযোগ নেই। শুধু দূর থেকে সবার দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই। আলস্নাহ যেন সুস্থ রাখেন আমাকে, আমার পরিবারের সবাইকে। আর অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমার অসুস্থতার সময় তিনি আমার খবর রেখেছেন সব সময়, আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার জন্য আমি মন থেকে দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ থাকেন ভালো থাকেন।' এদিকে ঠিক একই রকমভাবে আয়োজনের বাইরে জন্মদিন কাটছে চিত্রনায়িকা পপির। যদিও এবারের জন্মদিন একটু ভিন্নভাবে কাটানোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু করোনার কারণে তা আর করা হয়ে উঠছে না। তবে তিনি জানান, আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় চ্যানেল আইয়ের তারকা কথন অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ করবেন পপি। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করছেন রাজু আলীম। জন্মদিন নিয়ে এই গস্নামার নায়িকা বলেন, 'করোনার কারণে এবারের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই আমার। কারণ প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। দেশজুড়ে বন্যা আবার কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে অনেক মানুষ মারা গিয়েছেন। সব মিলিয়ে আসলে মনটাও ভালো নেই। যে কারণে নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। শুধু সবার কাছে দোয়া চাই, আলস্নাহ যেন ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।' প্রতি বছর জন্মদিনে পপির একটা বাজেট থাকে। এবারের বাজেটের পুরো টাকা তিনি ব্যয় করবেন অসহায়-দুস্থ শিশু ও গরিব রোগীদের জন্য। পপি বলেন, 'এবারের জন্মদিনের বাজেটের টাকা অসহায় দুস্থ শিশু ও গরিব রোগীদের জন্য খরচ করব। জন্মদিন উপলক্ষে কোরআন খতম ও এতিম শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করব। দিনের কিছু সময় তাদের মাঝে থাকার ইচ্ছে আছে। এছাড়া আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।' সময় পেলেই ঢাকার বাইরে ঘুরতে যান পপি। বিশেষ করে নিজের জেলায়। এবারও করোনা আসার আগে পরিবারের সবাই মিলে গিয়েছিলেন নিজের গ্রাম খুলনার খালিশপুরে। এরই মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনে আটকা পড়েন পপি। দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস সেখানে ছিলেন। এ সময় তিনি গ্রামের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের সাহায্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে এ অভিনেত্রী বলেন, 'দেশের মানুষ এক বিরাট সংকটময় সময় পার করেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ছিলেন স্বল্প আয়ের মানুষরা। তারা কোনো কাজকর্ম করতে পারছিলেন না। এটা আমাকে খুব স্পর্শ করে। সামর্থ্য অনুযায়ী নিজ এলাকার আশপাশের অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। প্রায় এগারশ' অসচ্ছল মানুষের হাতে চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, সাবানসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, মাস্ক ও সেনিটাইজার দিয়েছি।' করোনায় অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন পপি। দীর্ঘদিন করোনার সঙ্গে লড়ে অবশেষে মুক্ত হয়েছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় ফিরেছেন। পপি বলেন, 'দর্শক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা আমার নিয়মিত খবর রেখেছেন। আমার জন্য দোয়া করেছেন। সবার ভালোবাসা-দোয়ায় ও আলস্নাহর অশেষ কৃপায় করোনা থেকে আমি সুস্থ হয়েছি।' এটিএম শামসুজ্জামান জানান, পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ওঠা পর্যন্ত এবং করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি শুটিং-এ ফিরবেন না। তবে পপি চলতি মাসেই ফিরছেন শুটিংয়ে। চলতি মাসের মাঝ সময়ে চ্যানেল আই প্রযোজিত একটি টেলিফিল্মের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন পপি। শুটিংয়ে ফেরা নিয়ে পপি বলেন, 'ঘরে বসে থেকে আর কত দিন। জীবন তো চালাতে হবে। তাই করোনাকে নিয়েই আমাদের ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। কাজ করতে হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নাটক-সিনেমার কাজও শুরু হয়েছে। ১৫ বা ১৬ সেপ্টেম্বর চ্যানেল আইয়ের একটি টেলিফিল্মে শুটিং করব।'