আতঙ্কে ভারতীয় নায়িকারা

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
পান থেকে চুন খসলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নায়িকাদের খুন ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। এসব হুমকির তোড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভারতীয় নায়িকারা। বিশেষ করে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃতু্যর পর নারী তারকাদের এ ধরনের হেনস্তা আরও বেড়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। কেউ আবার বন্ধ করে দিয়েছেন পাবলিক কমেন্ট বক্স। এরপরও থেমে নেই ধর্ষণ ও খুনের লাগাতার হুমকি। সময়টা ক'সপ্তাহ আগের। 'সড়ক টু' সিনেমার প্রমোশনাল পোস্টে এক নেটিজন হঠাৎ করেই আলিয়াকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে বসেন। স্টার কিড বা নেপোটিজম বির্তকের জেরে এমন হেনেস্তার শিকার হতে হয়েছে এই নায়িকাকে। এতেই তিক্ত, বিরক্ত ও আতঙ্কিত 'স্টুডেন্ট অব দি ইয়ার' খ্যাত অভিনেত্রী। একই ঘটনা আলিয়ার বড় বোন অভিনেত্রী ও পরিচালক পূজা ভাটের সঙ্গে হয়েছে। তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ধর্ষণ ও খুনের লাগাতার হুমকি আসায় তিনি প্রোফাইল 'প্রাইভেট' করে দিয়েছেন। অনুরাগীদের জানিয়েছেন, তার আপডেট পেতে প্রোফাইলে 'রিকোয়েস্ট' পাঠাতে। এদিকে দীর্ঘদিন পর 'সড়ক টু' দিয়ে পর্দায় ফিরছেন এই অভিনেত্রী। এদিকে সুশান্তের মৃতু্যর পর থেকেই ভার্চুয়াল কাঠগডায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের মৃতু্যর এক মাস পরে তিনি ইনস্টাগ্রামে হুমকি- চ্যাটের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন। মুম্বাই পুলিশের সাইবার শাখাকে ট্যাগ করে পদক্ষেপ করার আরজিও জানিয়েছিলেন রিয়া। দুটি প্রোফাইল চিহ্নিত করেছিল মুম্বাই পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ ধরনের হেনস্তার দৃশ্য শুধু বলিউড নয়, পুরো ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিজুড়ে। সম্প্রতি এমনই বাজে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মডেল অভিনেত্রী ঊষসী সেনগুপ্ত। একটি অ্যাপ-ক্যাবে তার চালককে মারধর করা ও তাকে হেনস্তা করার অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন তিনি। ঊষসী জানান, 'লকডাউনের মধ্যে একদিন লাইভ ভিডিও করছিলাম। আমার ভাইও ছিল সেখানে। এক ব্যক্তি ক্রমাগত অশালীন মন্তব্য করে যাচ্ছে। ভাই খুব রেগে যাচ্ছিল। কিন্তু আমিই ইগনোর করলাম,' বললেন ঊষসী। ভার্চুয়ালি চরম নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় কষ্ট পান অভিনেত্রী। 'সঙ্গে সঙ্গে কমেন্ট ডিলিট করি। আমার মনে হয়, সব মহিলাই এতে কম-বেশি বিপর্যস্ত হন,' যোগ করেন ঊষসী। 'পদ্মাবত' ছবি মুক্তির আগে রাজপুত ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে ধর্ষণের ও হত্যার মতো স্পর্শকাতর হুমকি পান দীপিকা পাড়ুকোন। এ নিয়ে তিনি দেশটির পুলিশের দারস্থ হলেও আদতে কিছু হয়নি। আর নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধিতা করায় প্রায়শই টুইটারে ধর্ষণের হুমকি পান স্বরা ভাস্কর। এখানেই শেষ নয়; অভিনেত্রী ও সাংসদ নুসরাত জাহান যখনই কোনো হিন্দু অনুষ্ঠানে শামিল হন, তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। পাশাপাশি ভার্চুয়ালিও চলতে থাকে হুমকি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খোলসা করতে না চাইলেও অভিনেত্রীর বক্তব্য, 'অনলাইনে যারা ধর্ষণ বা খুনের হুমকি দেয়, তারা বিকৃত মানসিকতার মানুষ। জীবনে কোনো রকম নেগেটিভিটিকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়। অনলাইনে এ ধরনের বাড়াবাড়ি নিয়ে আমি চিন্তিত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমি বিভ্রান্ত হই না।' ঠোঁটকাটা বলে পরিচিত বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌতকে নিয়মিত এসব সহ্য করতে হয়। কখনো কখনো এসব হেনস্তার কথা প্রকাশ্যে বলে ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। একই পরিস্থিতি সোনাক্ষী সিনহারও। গত ১৪ আগস্ট মুম্বাইয়ের অপরাধ দমন শাখায় হুমকি দাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ছ'দিন পরে ঔরঙ্গাবাদ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। এরপর থেকেই অনলাইন হেনস্তার বিরুদ্ধে সোনাক্ষীর ক্যাম্পেন, 'অব বাস!' শুরু করেন।