চঞ্চলের অন্যরকম লড়াই

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
চঞ্চল চৌধুরী
রক্তমাংসের মানুষকে পর্দার চরিত্র হয়ে উঠতে ঘাম ঝরাতে হয়। গল্পের আবরণ-বিবরণে পরিবর্তন এলেই সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় অভিনেতার খোলস। এ যেন অন্যরকম এক যুদ্ধ। অভিনেতা হয়ে উঠার যুদ্ধ। এখানেই বাজিমাত করে চলছেন চঞ্চল চৌধুরী। কখনো 'সোনাই' সেজে মনপুরা দ্বীপে, আবার কখনো বৃদ্ধ 'মিসির আলী' সেজে কিংবা আয়না হয়ে পর্দায় এসেছেন। দেখিয়েছেন 'আয়নাবাজি'র মতো ভেলকি। আবার সেই চঞ্চলই সমাজের কুসংস্কার ভাঙার জন্য গলা চেঁচিয়ে প্রভাবশালী বাবার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সেটাও সেলুলয়েডের পর্দায়, 'টেলিভিশন' চলচ্চিত্রে। এ যেন প্রচলিত নায়ক হওয়ার সুযোগকে পাশকাটিয়ে চরিত্রাভিনেতা হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। চঞ্চল নিজেও স্বীকার করেন এটা। এক চরিত্র থেকে বের হয়ে অন্য চরিত্রে মিলে যাওয়া নাকি তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকটা তার অভিনীত 'আয়নাবাজি'র সংলাপের মতোই, 'ভোর হলে পরেই চরিত্র বদলায়'। চঞ্চলের ভাষায়, 'চেষ্টা থাকে প্রত্যেকটি নাটকে কাজ করার আগে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া। সব সময় হয়তো পারি না। তবুও আমার দর্শককে হতাশ করতে চাই না। অনেক দিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে চিত্রনাট্য হাতে এলেই বুঝতে পারি চরিত্রটাকে কীভাবে দাঁড় করাব। এখন তো অনেকেই চিত্রনাট্য ছাড়া নাটক নির্মাণ করে। আমি সেসব নাটকে কাজ করি না। সব সময় চেষ্টা থাকে শতভাগ উজাড় করে কাজ করার।' চরিত্রের প্রতি তার এমন হৃদ্যতা জন্মেছে মঞ্চের ফ্লোরে। প্রখ্যাত নাট্যজন মামুনুর রশীদের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে অভিনয় শুরু করেন জনপ্রিয় এই অভিনেতা। একে একে মঞ্চস্থ হয় তার দৈত্য, সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ ও শত্রম্নগণ'র মতো নাটক। আর ফরিদুর রহমানের 'গ্রাস' নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে টিভি পর্দায় তার ঝলমলে পর্দাপণ। মঞ্চ ও টিভি পর্দার বাইরেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বড় পর্দায়। দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনের গতানুগতিক ধারার একটা পরিবর্তন এনেছেন তিনি। সেই সঙ্গে উপহার দিয়েছে মনপুরা, টেলিভিশন, আয়নাবাজি ও দেবীর মতো ব্যবসায় সফল ছবি। তাই পরিচালকদের কাছে তিনি আস্থার একটি নাম, আর দর্শকর কাছে বৈচিত্র্যময় এক অভিনেতা। সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে ছুটে চলেছেন এক চরিত্র থেকে অন্য চরিত্রে। তবুও বিন্দুমাত্র ক্লান্তিবোধ ছুঁতে পারিনি তার অভিনয়ে। প্রতিবারই হাজির হয়েছেন নতুন কিছু নিয়ে। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে পেয়েছেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অনেকটা কৌতূহলী হয়েই তাকে জিজ্ঞাসা করা- কখনো কি মনে হয়েছে নিজের অভিনীত চরিত্রগুলো ব্যক্তি চঞ্চল চৌধুরীর থেকেও শক্তিশালী? উত্তরটা সোজাসাপ্টাভাবেই দিলেন মনপুরার সোনাই। বললেন, 'কখনো এ বিষয়টি নিয়ে ভাবিনি। ভাবার কারণও নেই। ব্যক্তি চঞ্চলকে কখনোই তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছাপিয়ে যেতে পারেনি। ব্যক্তি চঞ্চল আর চঞ্চল অভিনীত চরিত্র দুটো আলাদা জিনিস। একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা করা মুশকিল। বিভিন্ন সময়ই অনেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি, তবে সেসব চরিত্র আমার চেয়ে ব্যক্তিসম্পন্ন ছিল না। তাই যদি হতো, তবে আমার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে যেত।' দীর্ঘদিন আবারও ব্যতিক্রমী একটি চরিত্রে হাজির হচ্ছেন আয়নাবাজি খ্যাত এ অভিনেতা। ভারতীয় ওয়েব স্ট্রিমিং সাইট হইচই'য়ে আসছে তার 'তাকদীর' নামের একটি সিরিজ। এতে অজানা খুনের ঘটনায় ফেঁসে যাওয়া একটি ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, 'নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।' এদিকে আয়নাবাজি'র পর আবারও নির্মাতা অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করছেন দেশীয় শোবিজের 'মি. পারফেকশনিস্ট'। সেখানে একজন খিটখিটে বাড়িওয়ালার চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। পাশাপাশি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে চঞ্চল চৌধুরীর একাধিক চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভি নাটকেও তার ব্যস্ততা রয়েছে। চলচ্চিত্রে বেশ সময় নিয়ে কাজ করলেও টিভি নাটকে তাকে নিয়মিতই পাওয়া যায়। বিশেষ করে ধারাবাহিক নাটকে তার ব্যস্ততার শেষ নেই। বেশিরভাগ সময় মাসের ২৫ দিনই নাটকের শুটিং থাকে তার। যদিও করোনার কারণে প্রায় পাঁচ মাস ঘরবন্দি ছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এই অবসরের পর সম্প্রতি আবারও কাজে ফিরেছেন। ঘরবন্দি থাকলেও চলঞ্চলের ছুটে চলা কিন্তু বন্ধ ছিল না। বিকল্প উপায় করেছেন একাধিক কাজ। তার মধ্যে আয়নাবাজির একটি সিকুয়্যালেও অভিনয় করেছেন। এটি টেলিভিশন ও অনলাইনে প্রচারিত হওয়ার পর বেশ প্রশংসিত হয়েছে। ঘরবন্দি জীবন নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। চঞ্চল বলেন, 'করোনারভাইরাসের প্রকোপের শুরুর দিকে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি ঘরবন্দি ছিলাম। পুরো সময়টাই পরিবারকে দিয়েছি। ছেলের সঙ্গে গল্প করেছি, খেলাধুলা করেছি। আর একটু পরপর টিভিতে খবর দেখছি।'