অনন্য এক পরীর গল্প

গল্প, সিনেমা ও চরিত্রাভিনয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির চৌকস পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। ধুন্ধুমার বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হয়েও একে একে গল্পভিত্তিক সিনেমায় ঝুঁকছেন তিনি। চরিত্রের প্রয়োজনে কখনো 'শুভ্রা' কখনো 'শোভা' হয়েছেন এই মহুয়া সুন্দরী। শুধু কী তাই? ডানাকাটা পরীর অবয়ব মুহূর্তেই পাল্টে হয়েছেন উপন্যাসের চরিত্র। নির্ভীক চরিত্রযোদ্ধা এই অভিনেত্রীকে নিয়ে আজকের এ বিশেষ আয়োজন।

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
পরীমনি
শুরু করা যাক সাম্প্রতিক খবর দিয়েই। গণমাধ্যম ছেয়ে গেছে পরীমনির প্রীতিলতা হওয়ার শিরোনাম। হঁ্যা ঠিক ধরেছেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহিদ বীরকন্যা প্রীতিলতার চরিত্রে এবার অভিনয় করছেন এই নায়িকা। ক'বছর ধরেই পরী বুঝে শুনে কাজে হাত দেন। আগে চিত্রনাট্য পড়েন, বুঝেন ও চরিত্র নিয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করেন। ব্যাটে-বলে মিললেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। নচেৎ চিত্রনাট্য ফিরিয়ে দিয়ে নির্মাতাকে 'না' করে দেন ঠোঁটকাটা পরী। প্রীতিলতা নিয়েও তিনি বেশ খুঁতখুঁতে। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক না হওয়া পর্যন্ত কিছুই জানাতে চাইছেন না। এরপরেও তারার মেলাকে খুদে বার্তায় পরীমনি জানান, 'প্রীতিলতা' সিনেমাটি নিয়ে এখনো কোথাও কথা বলিনি। চরিত্রটা যেহেতু খুবভারী, তাই ধীরে সুস্থে পা বাড়াচ্ছি। আমার আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। কেন প্রয়োজন, সেটা অন্য আরেকদিন বলব (হাসি)। 'প্রীতিলতা ছবিটির জন্য প্রায় দুই বছর ধরে কথা হচ্ছে এই টিমের সঙ্গে। চরিত্রটি বোঝার চেষ্টা করছি। বাকিটা দেখা যাক কি হয়।'- যোগ করেন পরী। গোলাম রাব্বানীর চিত্রনাট্য ও সংলাপে ইউফরসির ব্যানারে ছবিটির শুটিং হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১ নভেম্বর। এটি পরিচালনা করছেন রাশিদ পলাশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কলকাতায় শুটিংয়ের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক। ১৯৩২ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে দেশের জন্য আত্মাহুতি দেন এই মহীয়সী নারী। সিনেমার পর্দায়ও এই দৃশ্যটি রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঐতিহাসিক ঘটনার দৃশ্য আঁকতে প্রায় চার বছর ধরে প্রীতিলতা নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশপ্রেম, আদর্শ আর সাহসের গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ। নির্মাতা রাশিদ পলাশের মতে, 'প্রীতিলতা চরিত্রের জন্য পরীমনিকেই পারফেক্ট মনে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই চরিত্রটি নিয়ে আলাপ চলছিল। এখন তাকে প্রীতিলতা রূপে দর্শকের কাছে হাজির করার অপেক্ষায় আছি।' পরীমনিও সে জন্যই সময় নিয়ে কাজটি করতে চাইছেন। ডানাকাটা পরীখ্যাত এই নায়িকার গল্প এখানেই শেষ নয়। মুক্তির আগেই ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে রীতিমত হইচই ফেলে দেওয়া পরীমনি নানা সময়েই জন্মদিয়েছেন আলোচনা-সমালোচনার। তবে পরীকে নায়িকা খ্যাতাব এনে দিয়েছে 'মনজুড়ে তুই', 'লাভার নাম্বার ওয়ান', 'নগর মাস্তান' ও 'মহুয়া সুন্দরী' ছবিগুলো। তাছাড়া পরীর 'মন জানে না মনের ঠিকানা', 'পুড়ে যায় মন', 'রক্ত', 'ধূমকেত', 'কত স্বপ্ন কত আশা', 'আপন মানুষ', 'সোনা বন্ধুু, 'অন্তর জ্বালা' পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমা হলেও ব্যবাসয়িকভাবে ব্যর্থ। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'স্বপ্নজাল'-এ শুভ্রা চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই পরীর অন্যরকম ছুটে চলা শুরু। গতানুগতিক বাণিজ্যিক সিনেমার নাচ, গান ও ফিল্মি সংলাপ বাদ দিয়েও যে গল্প হয়, সিনেমা হয়; সেই স্বাদটিই নিতে চাইছেন এই নায়িকা। বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে এটি স্বীকারও করেছেন। কখনো হাসতে হাসতে কখনো কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, 'স্বপ্নজাল সিনেমা করতে গিয়ে আমার পুনর্জন্ম হয়েছে। আমি গল্পের স্বাদ নিতে শিখেছি। এখন নায়িকা থেকে অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করছি।' কথা রেখেছেন মহুয়া সুন্দরী। একে একে অভিনয় করেছেন 'বিশ্বসুন্দরী' ও 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন'-এর মতো ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রের কাজ। এদিকে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে পরীর একাধিক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে 'বিশ্বসুন্দরী' ও 'অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন' অন্যতম। তাছাড়া বিশ্বসুন্দরী সিনেমাটি এর মধ্যে বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ ঠিক করলেও করোনার কারণে মুক্তি পায়নি। তবে এ সিনেমাটি নিয়ে পরীর উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। তিনি বলেন, 'স্বপ্নজাল'-এ অভিনয় করার পর থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ভালো মানের চলচ্চিত্র, মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো চিত্রনাট্য ও চরিত্র না পেলে আর কখনোই চলচ্চিত্রে কাজ করব না। 'বিশ্বসুন্দরী' চলচ্চিত্রের 'শোভা' চরিত্রটি শুধু আমি নই, যে কোনো অভিনেত্রীর জন্যই বিশেষ কিছু। আশা করি, দর্শক আমার থেকে নতুন কিছু পেতে যাচ্ছে।' তবে সব কিছু ঠিক থাকলে হয়তো আগামী বছরের শুরুর দিকে ছবিটি মুক্তি পেতে পারে। এছাড়াও এই নায়িকার হাতে রয়েছে হাফ ডজনের মতো ব্যতিক্রমী ছবির চিত্রনাট্য। কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজ ও অনুদানের ছবিতেও। অবস্থা এমন হয়েছে, শচীন দেব বর্মনের গানের লাইন ধার করে বলা উচিত, 'পরী আর নেই সে পরী'।