এমার নেশা

তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সফল হলিউড অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন। পুতুল খেলার বয়স থেকে অভিনয় জগতে সদপের্ বিচরণ করছেন। স্কুলের ফঁাকে ছুটির দিনগুলোতে নানা জায়গায় অডিশন দিতেন। টিকে গেলে কাজ করতেন। এভাবে চলছিল তার পড়ালেখা আর অভিনয়। কিশোরী এমার জীবন বদলে দিয়েছিল যে জাদুর পরশ, বলা বাহুল্য সেটি ছিল ‘হ্যারি পটার’। তবে এমা এখন পূণার্ঙ্গ একজন অভিনেত্রী। একাই বড় বাজেটের ছবি হিট করার ক্ষমতা রাখেন তিনি। এই তারকাকে নিয়ে লিখেছেন প্রীতি প্রাপ্তি

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এমা ওয়াটসন
অনেকেই মনে করেন, ‘হ্যারি পটার’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ না পেলে কিছুই হতো না মেয়েটার। সত্যিই কি তাই? আসল ঘটনা অন্যখানে। অদ্ভুত এক নেশায় পেয়েছিল হলিউড অভিনেত্রী এমা ওয়াটসনকে। সেই নেশা কিন্তু অভিনয়ের নয়, জ্ঞানের নেশা। ক্যারিয়ারে ব্রেক পেয়ে পড়ালেখা থামিয়ে দেননি এমা। বরং হারমিয়ন গ্রেঞ্জারের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে এমন অবস্থা হলো যে, স্কুলে পড়া জিজ্ঞেস করলে সবার আগে এমার হাত উঠে যেত। ক্যারিয়ার যখন তুঙ্গে, পড়ালেখা থামিয়ে দেননি তিনি। বরং স্কুল এবং কাজের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় করতেন। কাজের সময় কাজ, পড়ার সময় পড়া। ওই সময়টাকে অবশ্য যুদ্ধের মতো মনে হতো এমার। কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। ‘হ্যারি পটার’ ছবির শুটিং চলাকালীন নিয়মিত পঁাচ ঘণ্টা করে পড়তেন এমা। সেটা অবশ্য যথেষ্ট ছিল না তার জন্য। তারপরও নিজের জন্য সময় বের করে নিতেন তিনি। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেল, সব কটি বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড পেলেন। হাইস্কুল শেষ করে ভতির্ হন ব্রাউন ইউনিভাসিির্টতে। অন্য আর দশটা শিক্ষাথীর্র মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন, রাতভর লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করেছেন, ফাস্ট ফুড খেয়েছেন দিনের পর দিন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হকি, টেনিস, রাউন্ডার আর নেটবলও ভালো খেলতেন এমা। ক্যাম্পাসে একটা নাটক মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিলেন তিনি। দুঃখের বিষয়, অডিশন নিতে গিয়ে দেখলেন, এদের দিয়ে হবে না। এমা ভেবেছিলেন, অভিনয়ের মানুষ হকি খেলতে পারলে, হকি খেলোয়াড়রা অভিনয় করতে পারবে না কেন? সবাই তো আর তার মতো অলরাউন্ডার নয়। শুটিং, সহকমীের্দর সঙ্গে দেশ-বিদেশ ঘুরলেও ক্লান্তিকে পাত্তা না দিয়ে নিয়েছেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। পড়াশোনা চলাকালে ‘দ্য পাকর্স অব বিয়িং এ ওয়ালফ্লাওয়ার’ এবং ‘দ্য বিøং রিং’ ছবি দুটি করেছেন। ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের শেষ ছবির শুটিং চলছিল যখন, তখন তার পড়ালেখা প্রায় শেষের পথে। এমা পরিচালককে অনুরোধ করলেন, তার ক্লাসের সময়ে যেন শুটিং রাখা না হয়। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। এমা জানিয়ে দিলেন, দরকার হয় এ সিরিজে তিনি কাজই করবেন না আর। কিন্তু সেটা তো আর হয় না। এমাকে ছাড়া ‘হ্যারি পটার’ ভাবাই যায় না। জে কে রাউলিং নিজে যাকে পছন্দ করেছেন, তার কথা না শুনে পারা যায়? এমা জানতেন, সিরিজের ওই ছবিটির জন্য তিনি কতটা গুরুত্বপূণর্। কিন্তু পড়ালেখাকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি পরিচালকেরা শেষ পযর্ন্ত তার শতর্ মেনে নিয়েছিলেন। এমা ওয়াটসন এখন পূণর্বয়সী অভিনেত্রী। অভিনয়ের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন মানবিক কমর্কাÐে। জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে লিঙ্গসমতা এবং শিক্ষার সম-অধিকার নিয়ে কাজ করছেন তিনি। শুরুতে অবশ্য ‘সমতা’ শব্দটার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না তিনি। যে সমাজে তিনি বড় হয়েছেন, সেখানে এই শব্দগুলো তেমন উচ্চারিত হয় না। ফলে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করলেন তিনি। এ কাজের জন্য একটা বুদ্ধিও বের করলেন। চালু করলেন নিজের বুক ক্লাব ‘আওয়ার শেয়ারড শেলফ’। এ ক্লাবের সদস্য প্রায় ২ লাখ। এখান থেকে বই নিয়ে লোকে পড়ে এবং ‘লিঙ্গ সমতা’ নিয়ে আলোচনা করে। এভাবে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জানাটা সহজ হয়ে যায় তার জন্য। এমার জীবনকাহিনী মনে করিয়ে দেয়, শেখার জন্য, বেড়ে ওঠার জন্য আসলে ব্যস্ততা কোনো বাধা হতে পারে না। এই অভিনেত্রী একবার বলেছিলেন, ‘আমি শিখতে ভালোবাসি। জ্ঞানের নেশা আছে আমার। এই নেশা আমাকে আনন্দে রাখে, আমাকে উজ্জীবিত রাখে।’ মাকির্ন লেখিকা লুইজা মে অ্যালকটের বিখ্যাত উপন্যাস ‘লিটল উইমেন’ থেকে নিমির্ত হচ্ছে চলচ্চিত্র। শুরুতে এতে অভিনয়ের কথা ছিল এমা স্টোনের। তার বদলে এতে অভিনয় করছেন এমা ওয়াটসন। আগামী মাসে শুরু হচ্ছে ছবির শুটিং। এমা অভিনীত গত বছরের ছবি ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ সারা পৃথিবী থেকে আয় করে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মাকির্ন ডলার।