আমাদের মাঝে প্রশংসার চেয়ে অভিযোগের মাত্রাটা বেশি

স্বনামধন্য অভিনেত্রী সাবেরী আলম মোতাহের। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত একটি মুঠোফোন নেটওয়াকর্ কোম্পানির বিজ্ঞাপনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভাইয়ের আবেগঘন স্মৃতিচারণ করে জনপ্রিয়তা অজর্ন করেন। এরপর অসংখ্য টেলিভিশন নাটকে স্নেহময়ী মা চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। বতর্মানে বড়পদার্য়ও রয়েছে তার ব্যস্ততা। অভিনয় ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে এই তারকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাবেরী আলম মোতাহের
বতর্মান ব্যস্ততা কী নিয়ে? ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি খÐ নাটকেও কাজ করছি। তবে ধারাবাহিকেই একটু বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে মেহেদী, চিপস ও রুহ আফজার বিজ্ঞাপন। অতি সম্প্রতি নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের নিদের্শনায় তিব্বতের একটি বিজ্ঞাপনের কাজ শেষ করলাম। অভিনয়ের বাইরে ভয়েজ দেয়ার ডাকও পাই। তাছাড়া পরিবারকে সময় দিতে হয়। আমার দুই ছেলে অনন্য ও অনন্ত। চার বছর ধরে ওদের মা-বাবা দুটোই হলাম আমি। ঈদের নাটকে কেমন সাড়া পেলেন? গেল কোরবানির ঈদে বেশকিছু নাটকে কাজ করেছিলাম। মোস্তফা কামাল রাজ, আশুতোষ সুজন, রোমান রবিনসহ কয়েকজন নিমার্তার কাজ করেছি। সত্যি বলতে স্ক্রিপ্ট ভালো না লাগলে আমি অভিনয় করি না। মন না চাইলে জোর করে কেন অভিনয় করব? আপনার অভিনীত কোন ধারাবাহিকগুলো প্রচার হচ্ছে? দুটি চ্যানেলে দুইটি প্রতিদিনের ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে। চ্যানেল আইতে ‘তুমি আছ তাই’ ও চ্যানেল নাইনে ‘বহে সমান্তরাল’। মাছরাঙায় প্রচার হচ্ছে ‘প্রেম নগর’, দীপ্ততে ‘নিউইয়কর্ থেকে বলছি’, এটিএন বাংলায় ‘সোনার শেকল’। এ ছাড়া বাংলাভিশন ও নাগরিক টিভিতে দুটি ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে। এর বাইরে আরও দু-একটি ধারাবাহিক নাটক কোন কোন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছেÑ তা বলতে পারছি না। এখনকার নাটকগুলো কেমন হচ্ছে বলে মনে হয়? ভালো-মন্দ দুটোই। ভালোর সংখ্যাও যেমন বেশি, তেমনই মন্দর সংখ্যাও কম নয়। তবে আমরা কিন্তু ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়তই পরিশ্রম করে যাচ্ছি দশর্কদের ভালো কিছু দেয়ার জন্য। আমি নিজে দেখেছি অনেক নতুন শিল্পীও টানা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নিমার্তারাও তার সৃষ্টিকে ভালো করার জন্য রাত-দিন খাটছেন। একজন লাইটম্যান, ক্যামেরাম্যান এমনটি একজন প্রডাকশন বয়ও কিন্তু শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন ভালো কিছু করার জন্য। সত্যি বলতে আমাদের মাঝে ভালো কাজের প্রশংসার চেয়ে মন্দ কাজের অভিযোগের মাত্রাটা বেশি কাজ করে। কোন চরিত্রে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? অভিনেত্রী হিসেবে সব ধরনের চরিত্রেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে মাতৃসুলভ আচরণটাই বেশি কাজ করে। আমি সৌভাগ্যবান যে নাটকের ইউনিটের সবাই আমাকে খুব ভালোবাসেন। মা, বোন, ভাবির মতো ভালোবাসেন। আমার সঙ্গে কেউ কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করেছে বলে মনে হয় না। ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কেমন সাড়া পান? পজেটিভ চরিত্রে অভিনয় করে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আমি নেগেটিভ চরিত্রেও অভিনয় করেছি। ‘খেলাঘর’, ‘সেকেন্ড ইনিংস’, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘আপনঘর’সহ বেশকিছু নাটকে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে দশর্ক আমাকে এ ধরনের চরিত্রে পছন্দ করেন না, তা এই নাটকগুলো করেই জেনেছি। পরিচালক সাইফুল ইসলাম মান্নু ভাই আমাকে এ ধরনের চরিত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। অভিনয়ে সিনিয়রদের মূল্যায়ন কেমন? ইদানীং নাটকে সিনিয়রদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। এর পেছনে কারণও আছে। এজেন্সির কারণে পরিচালক চাইলেও অনেক কিছু করতে পারেন না। বাজেট কম তো বটেই, এজেন্সির পক্ষ শিল্পী নিবার্চনের বিষয়টিও বলে দেন। ফলে সিনিয়রদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। আপনার অভিনীত চলচ্চিত্রের খবর কী? আমার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সরকারি অনুদানের ‘আত্মদান’। এরপর রাজনীতি, রীনা ব্রাউন, একটি সিনেমার গল্পসহ এ পযর্ন্ত ৯-১০টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। সম্প্রতি মোস্তফা কামাল রাজের ‘যদি একদিন’ চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছি। এখন এর এডিটিং চলছে। অভিনয় শুরুর গল্পটা বলুন ... সাংস্কৃতিক পরিবেশে আমি বড় হয়েছি। আমার মা উচ্চাঙ্গ সংগীতের গুণী শিল্পী ছিলেন। বাবাও প্রচÐ সংস্কৃতিমনা ছিলেন। ক্লাস সেভেন থেকে মঞ্চ অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তবে বিয়ের পর আর মঞ্চে কাজ করা হয়নি। প্রায় ১৩ বছর অভিনয়ের বাইরে ছিলাম। ২০০৭-০৮ এর দিকে ২৬ মাচের্র জন্য বাংলালিংকের করা একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবার অভিনয় জগতে ফেরা। এরপর ‘ডলস হাউজ’সহ দুটি ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে টিভি নাটকে ফেরা। আমি ঢাকা থিয়েটারে কাজ করতাম। মঞ্চের প্রথম নাটক ছিল ‘ফনি মনষা’ টেলিভিশনের প্রথম নাটক ছিল ধারাবাহিক নাটক ‘নায়ক’। সাবলীল অভিনয়ের সুনাম রয়েছে আপনার ... সাবলীল অভিনয়ের কোনো ফমুর্লা জানা থাকলে তো সবসময় তাই করা হতো। কীভাবে যেন ভালো হয়ে যায়, তা আমি নিজেও জানি না। সৃষ্টিকতার্র অপার করুণা ছাড়া সম্ভব নয়। তবে আমি অভিনয়ের আগে স্ক্রিপ্টের ধারণা নিই। এরপর ইমোশন নিয়ে চিন্তা করি, চরিত্রের গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি। তাছাড়া অভিনয় সাবলীল করতে টিমের সবার সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূণর্। নিমার্তা ও সহশিল্পীরা আমাকে অভিনয়ে অনেক সহযোগিতা করেন। প্রত্যেক শিল্পীরই সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী? প্রথমেই বলব আমি শিল্পী নই। কারণ শিল্পী অনেক বড় স্থান। আমি একজন কমীর্। আর দায়বদ্ধতাটা শিল্পী হিসেবে বলব, মানুষ হিসেবে বলব। আমার দায়বদ্ধতা মা হিসেবে, অভিনেত্রী হিসেবে। আমি চেষ্টা করি সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে ভালো কাজ করার জন্য সেটাই আমার দায়বদ্ধতা।