শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তারকালোকের রাজকুমার

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
ওয়াসিম

সময়টা ১৯৭৩ সাল। নায়ক হিসেবে 'রাতের পর দিন' তার প্রথম অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। তার বিপরীতে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতা। শুরুতেই পেলেন চোখে তাক লাগানো সাফল্য। তবে অনেকের মতো তার পারিবারিক নামটিও যেন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। পরিচালক মোহসিনের হাত ধরে এরপর তিনি হয়ে উঠলেন ওয়াসিম। মুম্বাইয়ের রাজকাপুরের সহকারী ছিলেন এ দেশের প্রয়াত কিংবদন্তি পরিচালক মমতাজ উদ্দীন। তিনি ওয়াসিমকে নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র 'কে আসল কে নকল' নির্মাণ করেন। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ফোক ফ্যান্টাসি ঘরানার সিনেমায় ওয়াসিমকে বলা যায় তার সময়ের হিরোদের 'রাজকুমার'। ফোক ফ্যান্টাসিধর্মী সিনেমায় রাজা, রাজকুমার হিসেবে তার মতো এমন মানানসই নায়ক সে সময় আর কাউকেই কল্পনা করা যেত না। গল্প যেমনই হোক একমাত্র তার উপস্থিতিই সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত থাকতেন পরিচালকরা।

তবে নায়ক ওয়াসিমের এই জনপ্রিয় হয়ে ওঠার গল্পের রূপকার হিসেবে যে পরিচালকের নাম সবার আগে আসে তিনি হলেন এস এম শফী। তারপরই আসে ইবনে মিজানের নাম। ওয়াসিমকে কাজে লাগিয়ে এ দুই পরিচালক পেয়েছেন ঈর্ষা জাগানিয়া অনেক ব্যবসায়িক সাফল্য। আরও অনেক পরিচালক

ব্যবসায়িক সাফল্য পান। হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা ছাড়া সবগুলোতেই ছিলেন ব্যবসা সফল সিনেমার নায়ক ওয়াসিম। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি বিরল।

অভিষেকের পর টানা ৩০-৪০টি সুপার-ডুপার হিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। শুধু ফোক ফ্যান্টাসিই নয়; পোশাকি, ামাজিক, গ্রামীণ, লাভস্টোরি, মারদাঙ্গা সব ধরনের ছবিতেই তার উপস্থিতি ছিল আকর্ষণীয়।

কালজয়ী সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সৌভাগ্য খুব কম অভিনেতা-অভিনেত্রীর ভাগ্যেই জোটে। এস এম শফীর 'দি রেইন' (১৯৭৬) ছবির নায়ক ওয়াসিম সেই কালজয়ী সিনেমার নায়ক। যিনি শুধু নিজেকেই নন, বাংলাদেশকেও বিশ্ববাসীর কাছে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। 'লাল মেম সাহেব' ছবিটি আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনের মুকুরে স্থায়ী হয়ে আছে। একপর্যায়ে ওয়াসিম-রোজিনা, ওয়াসিম-অঞ্জনা জুটি দর্শকের জন্য বিশেষ বিনোদনের খোরাক হয়ে ওঠে। ওয়াসিম তার দেড়শ' সিনেমার অর্ধেকই করেন রোজিনার সঙ্গে জুটি বেঁধে। এছাড়া শাবানা, ববিতা, অলিভিয়া, কবরীসহ আরও অনেকের সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন তিনি।

এছাড়া অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে জুটি বেঁধে করা ওয়াসিমের 'সওদাগর', 'নরম গরম', 'রসের বাইদানী' ব্যবসা সফলতার দিক থেকে ছিল রীতিমতো ঈর্ষা জাগানিয়া। প্রকৃত অর্থেই ব্যবসা সফল বলতে যা বোঝায় সে রকম সুপার-ডুপার বাম্পার হিট ছবির নায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন তার সময়ে একপ্রকার অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫২টি ছবিতে অভিনয় করা এই হিরোদের রাজকুমার ব্যক্তিগত জীবনের ছিলেন বডি বিল্ডার। ১৯৬৪ সালে 'মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান' হিসেবে রাষ্ট্রীয় খেতাবও পান এ বিষয়ে।

আজকের প্রজন্মের সুপারহিট নায়ক শাকিব খান যেমন ব্যস্ত সময় পার করছেন চলচ্চিত্রে তার চেয়েও অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করেছেন ওয়াসিম তার সময়ে। এর মধ্যে ইবনে মিজানের 'রাজদুলারী', 'ডাকু মনসুর', 'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা'সহ এসএম সফির 'দি রেইন', মমতাজ আলীর 'ঈমান', দেওয়ান নজরুলের 'দোস্ত দুশমন', 'আসমান জমিন', 'আসামী হাজির' এবং অন্যান্য পরিচালকের 'বে-দ্বীন', চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, 'নরম গরম', 'প্রাণ সজনী', 'জিপসী সর্দার', 'শিরি ফরহাদ', 'আবে-হায়াত', 'বিনি সুতার মালা', 'রসের বাইদানী', 'লাল মেম সাহেব', 'মিস লোলিতা'সহ আরও বহু চলচ্চিত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে