কোথায় আছেন চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি? কী করছেন বর্তমানে? কীভাবে সময় কাটছে? কেনইবা হঠাৎ অন্তরালে চলে গেলেন তিনি? নাকি গোপনে বিয়ে করার গুঞ্জনটাই সত্যি?- এমন অনেক প্রশ্ন পপির অগণিত ভক্ত, দর্শক ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। শুধু তাই নয়, নাটক-সিনেমা দেখেন না মাঝে-মধ্যে একটু-আধটু খবর রাখেন, এমন শ্রেণির মানুষও জানতে চান পপির খোঁজ। কিন্তু কেউ এর সঠিক কোনো জবাব দিতে পারছেন না। দিতে পারছেন না সঠিক কোনো তথ্য। রহস্যময়ী হয়ে অন্তর্ধানে আছেন আলোচিত এ নায়িকা।
চলচ্চিত্রে আগের মতো নিয়মিত না হলেও বছর জুড়েই খবরের শিরোনামে থাকেন পপি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আয়োজনেও দেখা মিলত তার। টিভি অনুষ্ঠানও করতেন। বছরে দু/একটি নাটক করেও আসতেন আলোচনায়। গত বছর মহামারি করোনার মধ্যেও খবরের পাতায় সরব ছিলেন ঢালিউডের গস্নামার এই নায়িকা। করোনায় অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো, নিজে করোনায় আক্রান্ত হওয়াসহ নানা খবরে শিরোনাম হয়েছিলেন পপি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সরব ছিলেন।
চলতি বছরের শুরু থেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। সোশ্যাল মিডিয়া বা মুঠোফোনেও তার সাড়া মিলছে না। গতকালও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। গত ডিসেম্বরের ২৩ তারিখের পর থেকে আর ফেসবুকে তার কোনো পোস্ট নেই। সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টে পপি লিখেছিলেন, 'স্বপ্ন দেখতে দেখতে হঠাৎ তুমি এসে হাজির, অন্ধকারে ভালোবাসার ঝলকানি!' পপির এই পোস্ট নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। গত বছর আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে পপি বলেছিলেন, 'বিয়ে করা কোনো অপরাধ নয়, বিয়ে করা কোনো পাপ নয়। নতুন একটা জীবন শুরু করা। অনেককেই দেখেছি, এই শুভ কাজ গোপনে করছেন, মনে হয় তারা যেন পাপ করছেন। এই শুরুটা গোপনে বা লুকিয়ে করার কোনো মানে হয় না। আমি বিয়ে করলে ঢাকঢোল পিটিয়েই করব।'
পপির হঠাৎ অন্তরালে চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্র পাড়ায় গুঞ্জন শুরু হয়। বাতাসে খবর ভাসছে, পপি ষাটোর্ধ্ব এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় উঠেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক তখন জানিয়েছিলেন, পপি বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। স্বামীর দেওয়া ফ্ল্যাটেই রয়েছেন। হয়তো পপিকে আর সিনেমায় দেখা যাবে না বলে মন্তব্য করেন ওই পরিচালক। এরপর শোনা গেল, বিয়ের পর সেই সংসারে ভাঙনের খবর। বারিধারা ডিওএইচএস থেকে পপি চলে গেছেন বনশ্রীর বাড়িতে। এসবই মিডিয়ার পাড়া-মহলস্নায় ভেসে বেড়ানো খবর। এ নিয়ে পপির পরিবারও স্পষ্ট কিছু বলছেন না। তবে পপির ছোট বোন খেয়া বারবারই পপির বিয়ের খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন। কিন্তু এর বেশি কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে শোবিজ থেকে দূরে ছিলেন পপি। সেই বিরতি ভেঙে তিনি কাজে ফেরেন রাজু আলীম ও মাসুমা তানির যৌথ পরিচালনায় 'ভালোবাসা প্রজাপতি' নামের একটি সিনেমা দিয়ে। শুটিংও করেন কিছুদিন। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে পপির? সেই সময় পপি নিরুদ্দেশ। পরিচালকদ্বয় জানান, কয়েক মাস ধরেই তিনি পপিকে খুঁজছেন। তার ইস্কাটনের বাসায় খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু সেখানে পপি থাকছেন না। 'একজন নায়িকার জন্য একটা সিনেমা আটকে আছে। পপির কাছে এমন অপেশাদার আচরণ একেবারেই কাম্য নয়' বলে মন্তব্য করেন রাজু আলীম। গেল ভালোবাসা দিবসে 'ভালোবাসার প্রজাপতি' মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন রাজু আলীম। কিন্তু পপি কাজ শেষ না করায় ছবিটি মুক্তি দিতে পারেননি তিনি।
এরই মধ্যে উৎসুক অনেকে পপির বাসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গেও থাকছেন না। এজন্য তার বিয়ের গুঞ্জনটি আরও ডালপালা মেলে। কেউ কেউ তো বলছেন, বিয়ে করেছেন বলেই নিজেকে আড়ালে নিয়ে গেছেন পপি। ঘর সংসার নিয়ে তিনি ব্যস্ত। গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে অনেক চিত্র নির্মাতাও দাবি করছেন, গোপনে সংসার পেতেছেন এই অভিনেত্রী। পপিকে তার মুঠোফোনে না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রবীণ এক সাংবাদিক কয়েক মাস আগে জানান, পপির মুঠোফোন পড়ে গিয়ে ভেঙে গেছে। তাই যদি হয় তাহলে প্রযুক্তির এই সময়ে এখনো কেন তিনি ফোনের ব্যবস্থা করেননি। এসব কারণে পপির বিয়ের বিষয়টি আরও জোড়ালো হয়। বলা যেতে পারে পপি যেন তার বিয়ের গুঞ্জনের পালে নিজেই হাওয়া দিচ্ছেন। যদিও বিয়ের বিষয়টি এখনো রহস্যঘেরা। কারণ এখন পর্যন্ত তার বিয়ের গুঞ্জনের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে তার হদিসও নেই। আসলেই কী পপি বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে আছেন না তার বাবা-মার সঙ্গে আছেন-এটি এখনো অস্পষ্টই হয়ে আছে।
১৯৯৭ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'আমার ঘর আমার বেহেশত' সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখেন পপি। কিন্তু তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র 'কুলি'। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত এ সিনেমা ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করেছিল। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তারপর রিয়াজ, মান্না, শাকিব খানসহ জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন এই চিত্রনায়িকা। ২০০৩ সালে 'কারাগার' ছবিতে অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান পপি। এরপর তিনি ২০০৮ সালে নারগিস আকতারের 'মেঘের কোলে রোদ', ২০০৯ সালে সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের 'গঙ্গাযাত্রা' ছবিতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
পপি অভিনীত 'ডাইরেক্ট অ্যাটাক' সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত এ সিনেমায় আমিন খান-পপি জুটি বেঁধে অভিনয় করেন।