মা-ছেলের অন্যরকম গল্প

‘পিকু’র মতো বাবা-মেয়ের গল্প নিয়ে তো আগেই সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এবার মা-ছেলের গল্প নিয়ে উন্মুখ বলিউড। আগামীকাল মুক্তি পাচ্ছে বলিউড ছবি ‘হেলিকপ্টার এলা’। মা-ছেলের ভিন্নধমীর্ গল্প নিয়ে নিমির্ত ছবিটির ট্রেইলার এরই মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাছাড়া ছবিটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের অন্যতম দক্ষ অভিনেত্রী কাজল ও ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কলকাতার অভিনেতা ঋদ্ধি সেন।

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

প্রীতি প্রাপ্তি
ঋদ্ধি সেন ও কাজল দেবগন
২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোহিত শেঠির ‘দিলওয়ালে’ ছবির পর আবারও বলিউডের পদার্য় ফিরছেন জনপ্রিয় তারকা কাজল। তিন বছর বিরতির পর এবার ‘হেলিকপ্টার এলা’ নিয়ে ফিরেছেন বলিউডের এই অভিনেত্রী। প্রদীপ সরকার পরিচালিত ‘হেলিকপ্টার এলা’তে সিঙ্গেল মাদার এলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজল। তার ছেলের ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কলকাতার অভিনেতা ঋদ্ধি সেনকে। গত ৫ আগস্ট কাজলের জন্মদিনেই প্রকাশ পায় ছবিটির ট্রেইলার। তাতে দেখা গেছে- ছেলে ঋদ্ধি সেনের প্রতি অত্যন্ত পজেটিভ মা কাজল। নাছোড়বান্দা মা। আর তার টিনএজার ছেলে। নিজের সব কাজ ভুলে। সব সময় ছেলের পেছনে পড়ে রয়েছেন মা। একটা সময় তো ছেলের সঙ্গে পড়াশোনা করতেও শুরু করলেন। ছেলে বিরক্ত হয় মায়ের ওপর। কিন্তু মা বুঝতে চান না। এক সময় গান ছিল তার প্রাণ। আজ গানও পথ হারিয়েছে। ছেলের সঙ্গে সাময়িক সংঘাতেই আবার নতুন করে বঁাচার মানে খুঁজে পান কাজল। একজন সন্তানের মায়ের পাশাপাশি কাজল (এলা) যে একজন গায়িকাও, তা তিনি নতুন করে আবিষ্কার করেন। নিজের প্রতি আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত, তা বুঝতে পারেন তিনি। ছবিটিতে সিঙ্গল মায়ের লড়াই রয়েছে। সন্তানকে না বুঝতে পারা রয়েছে। টিনএজ সন্তানের মাকে নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। সব মিলিয়ে এ ছবি মা-ছেলের এমন এক সম্পকের্র বুনোটে তৈরি যার সঙ্গে অনেক দশর্ক নিজেদের মিল খুঁজে পেতে পারেন। অন্তত ট্রেলারেই সে ইঙ্গিত মিলেছে। এতে গুরুত্বপূণর্ একটি চরিত্রে দেখা যাবে বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনকে। ‘হেলিকপ্টার এলা’ সিনেমার গল্প গুজরাটি নাটক ‘বেটা কাগডো’ থেকে নেয়া হয়েছে। এতে আরও একটি গুরুত্বপূণর্ চরিত্রে দেখা যাবে নেহা ধুপিয়াকে। ছবিটি গত ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তির কথা থাকলেও পরিচালকের অসুস্থতার কারণে প্রযোজক অজয় দেবগন আগামীকাল ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স¤প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কাজল বলেন, ‘মা হিসেবে এই ছবির চরিত্রের সঙ্গে আমি কানেক্ট করতে পেরেছি। ছেলেকে এতটাই ভালোবাসে যে, নিজের জীবনও ছেলেকে ঘিরেই তৈরি করে। অনেক মা এটা করেন। সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর যে শূন্যতা তৈরি হয়, তখন মনে হয় এবার আমি কী করব? তখনই জোর করে সন্তানের জীবনে ঢুকে পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটে এ ছবি দশর্কদের ভালো লাগবে বলেই বিশ্বাস কাজলের।’ বলিউডে ‘চৌরঙ্গা’, ‘পাচর্ড’, ‘ভ‚মি’র মতো অনেক ছবি করে ফেললেও প্রদীপ সরকারের ‘এলা’ ঋদ্ধি সেনের কাছে স্পেশ্যাল। ছবিতে কাজলের মতো অভিনেত্রী রয়েছে, তাও প্রথম টিজারে মুখ বলতে শুধু ঋদ্ধিরই। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা তাতে উচ্ছ¡সিতও! প্রিয় অভিনেত্রীর বিপরীতে কাজ করা প্রসঙ্গে ঋদ্ধি বলেন, ‘‘এক দুপুরবেলায় প্রদীপদা ফোন করে বললেন, ‘শোন একটা কথা বলব, বেশি ভাত খাবি না। কাজলের ছেলের চরিত্রে তুই অভিনয় করবি।’ তার মাসখানেক পরেই বললেন, ‘মুম্বাইয়ের টিকিট পাঠাচ্ছি। চলে আয়।’ গত বছর জুলাইয়ের ঘটনা সেটা। ভেবেছিলাম, অডিশন হবে। কিন্তু পেঁৗছতেই অপেক্ষা করেছিল আরও এক দফা বিস্ময়! আমাকে কনট্র্যাক্ট সাইন করতে বললেন প্রদীপদা। ‘এলা’য় কাজল ম্যামের পাশাপাশি আমিও মুখ্য ভ‚মিকায়। প্রথম দিকে একটু নাভার্স ছিলাম। তবে কিছু দিন পর দেখি, প্রদীপদা আমার পারফরম্যান্সে খুশি।’’ কাজলকে নিয়ে ঋদ্ধি বলেন, ‘কাজল ম্যাম সেটে থাকলে কেউ সিরিয়াস থাকতে পারে না। এতটাই মজার মানুষ! কে বলবে উনি মেগাস্টার! অত্যন্ত ফ্যামিলি পাসর্ন। আমাকে বলেছেন, ‘সন্তান হওয়ার পর ঠিক করেছি, আর ছবি করব না। আমি চাইনি এত পাপারাৎজি আর চাপের মধ্যে বেড়ে উঠুক ছেলেমেয়েরা।’ সেটে বলিউড নিয়ে বেশি কথা বলেন না উনি। যখনই রিহাসাের্ল ডাকা হয়, কাজল ইজ অলওয়েজ দেয়ার। আমাকেও খুব ভালোবাসেন। শুটের ফাস্টর্ সিডিউলে দিন দশেকের বিরতি কাটিয়ে আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘তোমাকে খুব মিস করছিলাম। ফাইনালি দেখে ভালো লাগছে। আই অ্যাম ফিলিং সো গুড।’’ ঋদ্ধি সেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। তিনি কলকাতার গুণী অভিনেতা কৌশিক সেন ও নৃত্যশিল্পী রেশমি সেনের ছেলে। তার নানা-নানিও অভিনয়শিল্পী চিত্রা সেন এবং শ্যামল সেন। মাত্র ৩ বছর বয়সে অভিনয়জীবন শুরু করেন। বাবার মতো ঋদ্ধিও স্বপ্নসন্ধানী গ্রæপ থিয়েটারের একজন নিয়মিত অভিনেতা। ২০১০ সালে থিয়েটারে তার দক্ষতার জন্য স্কুল থেকে একটি বিশেষ প্রতিভার পুরস্কার পান। এরই মধ্যে বেশকিছু বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন ঋদ্ধি। তার অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে- দুশমান, ইতি মৃণালিনী, চির দিনই তুমি যে আমার ২, ওপেন টি বায়োস্কোপ, চৌরঙ্গি, লোডশেডিং, বলিউড ছবি কাহানী, যুদ্ধশিশু, পাসর্ড ও লায়ন। কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত ‘?নগরকীতর্ন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা অভিনেতার সম্মান অজর্ন করলেন টালিগঞ্জের ঋদ্ধি সেন। এর আগে বাংলা সিনেমায় অভিনয় করে ২০০৬-এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় চলচ্চিত্রের সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান । বাংলা চলচ্চিত্রের এই প্রজন্মের অভিনেতাদের মধ্যে ঋদ্ধিকে অন্যতম সেরা বলে মনে করা হয়? এই স্বীকৃতিতে বোঝা গেল ঋদ্ধি শুধু বাংলার নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রেরও সম্পদ ।