সুবর্ণ সময়ে কেয়া পায়েল

প্রকাশ | ১০ জুন ২০২১, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
কেয়া পায়েল
কেয়া পায়েল। নামেই শুধু নয়, কাজেও পায়েলের মতোই মসৃণ ঝংকার তোলা ছন্দবদ্ধ পথচলা তার। যেন নিষ্পাপ ননির পুতুল। আর কেয়া! সেও সুগন্ধি উদ্ভিদ কোমল 'কেয়া'র মতোই যেন সুগন্ধি ছাড়ানো মুখটি তার। সুগন্ধি উদ্ভিদ কেয়া, আর পায়েলের মতোই মৃদু ও মসৃণ ঝংকার তোলা কেয়া পায়েল ইতোমধ্যেই কাজের মধ্য দিয়ে সবারই প্রিয়পাত্রী হয়ে উঠেছেন। সবাই তাকে আদর করে ডাকে 'পিচ্চি' বলে। কিন্তু কেয়া ও পায়েলের মতোই এমন সহজ সুন্দর নরম প্রকৃতির মেয়ে নাটকের অভিনয়ে এতটা একনিষ্ঠ ও পরিশ্রমী হতে পারে? দিকে দিকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন তিনি। তার এগিয়ে চলা দেখে অনেকেই মনে করছেন, দেশের নাট্যাঙ্গনে অভিনেত্রীর সংকটে কেয়া পায়েল ভালো কাজে আসবেন। ইতোমধ্যেই এমন সম্ভাবনার পরিচয় দিয়ে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে তার পথচলা। সংখ্যার বিচারে গত রোজার ঈদে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ঈদে তার ২৫টি নাটক প্রচারিত হয়েছে; যার বেশির ভাগই আলোকিত করেছে তাকে। পাশাপাশি পরিপক্ব এক অভিনেত্রীরই প্রকাশ দেখতে পেয়েছেন দর্শক। বিশেষ করে ঈদের নাটক 'লোকাল হিরো'তে কেয়া পায়েলের অভিনয় দর্শক-সমালোচক সবারই নজর কেড়েছে। অপূর্ব'র মতো দক্ষ অভিনেতা থেকে শুরু করে মুশফিক আর ফারহান, জোভান, তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে সমান দাপটে অভিনয়ের কারিশমা দেখিয়েছেন। এরই মধ্যে মুশফিক আর ফারহান ও কেয়া পায়েল জুটি দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এই বয়সে এত প্রাণশক্তি কোথায় পান- যার সুবাদে একের পর এক নাটকে বিরামহীন অভিনয় করে চলেছেন? জবাবে স্মিত হাসির সঙ্গে কেয়া পায়েল বলেন, 'এখনো পড়াশোনার গন্ডি পার হইনি। থার্ড ইয়ারে পড়ছি। পড়াশুনায় বরাবরই পরিশ্রমী আমি। ভালো ছাত্রী হওয়ার জন্য যতটা সময় ও মনোযোগ দিতে হয় পড়াশোনায় সেটাতে আমি যথেষ্ঠ যত্নবান। অভিনয়ে এসেও একই অভ্যাস ধরে রেখেছি। প্রতিটা শিডিউল মেইনটেইন করি রুটিন মেনে। পড়াশোনায় আমার যেরকম সিরিয়াসনেস, নাটকে এসেও সেরকম সমান যত্নবান আমি। আর নাটকও তো অ্যাকাডেমিক শিক্ষার মতোই শিক্ষার বিষয়। দর্শক নাটক দেখেও অনেক কিছু শিখতে পারে।' বর্তমানে কতটা নাটকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন? জবাবে কেয়া পায়েল জানান, এবারে একটু বিশ্রাম নিতে চান। চলতি মাসে ১৫টির বেশি নাটকে কাজ করবেন না তিনি। তার পরের মাসেই বিশ্রাম। এরই মধ্যে বেশ কয়টি নাটকের কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন বলে জানালেন। নাটকগুলোর নাম কি, জানতে চাইলে কেয়া বলেন, আজই (মঙ্গলবার) নির্মাতা মাহমুদ মাহীর একটি নাটকের শুটিং শেষ করলাম। এছাড়া কাজ হয়ে যাওয়া নাটকগুলোর মধ্যে আছে, মিজানুর রহমান আরিয়ানের একটি নাটক, রাফাত মজুমদার রিংকুর 'স্বপ্নের নায়িকা', মেহেদি হাসান জনির 'কী কারণে', মেহেদী হাসান হৃদয়ের 'ক্রাইম পার্টনার', 'হাইওয়ে লাভ', 'ষড়ঋতু'সহ আরো কিছু নাটক আছে যেগুলোর নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশের নাটক থেকে অনেক গুণী অভিনেত্রী সরে গেছেন, তাদের শূন্যতা পূরণে কেয়া পায়েল কেমন ভূমিকা পালন করতে পারেন? এমন প্রসঙ্গে সলজ্জ হাসিতে এ অভিনেত্রী বলেন, 'সেটা দর্শকই ভালো বলতে পারবেন। আর বলতে পারবেন আপনারা। তবে আমি যে অভিনয়টা জানি সেটা বুঝতে পারি। আরো ভালো করতে পারব, সেটাও বুঝতে পারি। তবে আমি চাই, অভিনয়ের জায়গাটা যেন সুন্দর থাকে। সেজন্য আমি বেছে বেছে ভালো গল্পের নাটকেই অভিনয় করতে চাই।' কিন্তু বেছে বেছে অভিনয় করলে তো একসময় নাটকে অনিয়মিত হয়ে পড়বেন এবং একপর্যায়ে ছিটকেও পড়তে পারেন। কথা শেষ না হতেই কেয়া পায়েল বলে উঠলেন 'না, না, এখন এত পস্ন্যাটফর্ম, এত মাধ্যম। তাতে নাটকের অভাব নেই। প্রচুর নাটক হচ্ছে। ভালো ভালো গল্পধর্মী নাটকও হচ্ছে অনেক। আমি তো সেই ভালো গল্পধর্মী নাটকেই অভিনয় করছি এবং ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক নাটকের প্রস্তাব ছেড়েও দিতে হচ্ছে।' আচ্ছা, কত দূর গিয়ে থামতে চান? প্রশ্ন শুনে আবারও একগাল হেসে ফেলেন কেয়া। বলেন, 'একসময় তো প্রত্যেককেই কোথাও না কোথাও থামতেই হয়। আমাকেও একসময় থামতে হবে। সেটা আমিও বুঝি। তবে এই থামার আগে এমন কিছু ভালো কাজ করে যেতে চাই, যে কাজের মধ্য দিয়ে আমি দর্শকের হৃদয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকতে পারব। আপনারাও আমাকে নিয়ে লিখবেন, বিভিন্ন সময়ে। তেমন কিছু ভালো গল্প ও ভালো নির্মাতার কাজের অপেক্ষায় আছি- যা আমাকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখবে। ততো দূর পর্যন্ত যাওয়াটাই আমার লক্ষ্য। তারপরই আমি থামতে চাই। ওই কাজ যদি হয়ে যায় তখনই আমি মনে করব অভিনয় থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। সেরকম ভালো কাজের মধ্য দিয়েই দর্শকের হৃদয়ে থামতে চাই আমি।' নাটক ছাড়া ওয়েব ফিল্ম, ওয়েব সিরিজেও কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে কেয়ার জবাব, 'আপাতত নাটকের সঙ্গেই থাকতে চাই। এরই মধ্যে ওয়েবের কিছু কাজের প্রস্তাব এসেছে। তবে ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজের কাজে পরে আসব। চলচ্চিত্রেও হুটহাট করে কোনো কাজে চুক্তিবদ্ধ হব না। দেখেশুনে ভালো গল্প দেখেই তবে তাতে চুক্তিবদ্ধ হব।'