ফের আলোচনায় পরীমনি

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
পরীমনি
দেশীয় চলচ্চিত্রে অন্যতম এক নায়িকা পরীমনি। যার প্রায় দুই ডজন সিনেমা মুক্তি পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিনেমাই হিট কিংবা ব্যবসাসফল হয়নি। অথচ নানা কারণে বছরজুড়েই থাকেন আলোচনা, সমালোচনা কিংবা বিতর্কে। চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগে পরীমনি যেভাবে আলোচনায় এসেছেন, তার আগে অন্য কোনো নায়িকা এত আলোচনায় আসেননি। প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ নিয়েও কম আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেননি তিনি। এছাড়া ভিন্ন আয়োজনে জন্মদিন পালন, বড় আয়োজনে এফডিসিতে গরু কুরবানি দেওয়া, বিলাসবহুল নতুন গাড়ি ক্রয়, মাঝেমধ্যে ফেসবুকে খোলামেলা ছবি পোস্ট দিয়ে উষ্ণতা ছড়িয়ে লাইমলাইটে থাকেন 'গস্নামারগার্ল' হিসেবে পরিচিত এ নায়িকা। চলচ্চিত্রে সুবিধা করতে না পারলেও কারণে-অকারণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বহুবার। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও নতুন করে আলোচনায় এসেছেন পরীমনি। তবে এবারের প্রেক্ষাপটা অন্যরকম। বিষয়টি শোবিজ আঙিনা ছেড়ে অন্যপ্রান্তেও ছড়িয়ে গেছে। টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে পরীর নতুন খবর। থানা-আইন-আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে পরীমনির এ নতুন ঘটনা। ১৩ জুন রোববার রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্য চেয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্বোধন করে তার কাছে সঠিক বিচার ও মেয়ে হিসেবে আশ্রয় চেয়েছেন পরীমনি। প্রথমে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে অভিযোগ তোলার পর রাতে সাংবাদিকদের বনানীর বাসায় ডেকে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন পরীমনি। এ সময় নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জেমীর স্কুলবন্ধু অমির নাম প্রকাশ করেন তিনি। পরীমনি বলেন, 'গত বুধবার (৯ জুন) রাত ১২টায় আমাকে বিরুলিয়ায় নাসির ইউ. মাহমুদের কাছে নিয়ে যায় অমি। সে সময় নাসির ইউ. মাহমুদ নিজেকে উত্তরা বোট ক্লাবের (ঢাকা বোট ক্লাব) সাবেক সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন।' এ সময় পরীমনি আরও জানান, নাসির ইউ. মাহমুদ নিজেকে বেনজীর আহমেদের (পুলিশ মহাপরিদর্শক) বন্ধু/ভাই বলে দাবি করেন। 'সেখানে নাসির ইউ. মাহমুদ আমাকে মদ খেতে অফার করেন। আমি রাজি না হলে আমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। তারপর আমাকে নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টা করেন। অমিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।' এ বিষয়ে বনানী থানা অভিযোগ শুনলেও লিখিত কোনো কাগজপত্র নেয়নি বলে দাবি করেন এ নায়িকা। থানায় তেমন সাড়া না পেয়ে ৯৯৯-এ কল দিয়েও সহযোগিতা না পাওয়ার কথাও জানান তিনি। এমনকি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি আশ্বস্ত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করে। এ ঘটনায় গত সোমবার ঢাকার সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেন এই অভিনেত্রী। এরপর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয় পুলিশ। সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় মামলার প্রধান আসামি ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে। নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধার ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেপ্তারের পর পরীমনির আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসির। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে রাতের ঘটনা নিয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সে রাতে পরী ও তার বন্ধুরা মদ্যপ অবস্থায় ক্লাবে প্রবেশ করেন। আসামি গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেন পরীমনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, সহকর্মী এবং ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এ অভিনেত্রী। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন পরীমনি। পোস্টে তিনি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান। মঙ্গলবার বিকালে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বোট ক্লাবে পরীমনি মদ্যপ ছিলেন, নাসিরের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পরী বলেন, 'আমি মদ খেতে বা ছিনতাই করতে গিয়েছিলাম, এমন অভিযোগ কি বিশ্বাসযোগ্য? আপনারা কি তাই মনে করেন?' এর আগেও কিন্তু অনেক ঘটনা ঘটেছে পরীমনিকে নিয়ে। গত বছরের শুরুতে এক সহ-পরিচালককে বিয়ের খরব প্রকাশ পায় পরীর। মাত্র তিন টাকা দেনমোহর হয়েছিল বলেও জানান তিনি। এর মাত্র পাঁচ মাসেই আসে বিচ্ছেদের খবর। এর আগে দুই বছর প্রেমের পর ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ভালোবাসা দিবসে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই বাগদান সম্পন্ন করেন পরীমনি ও বিনোদন সাংবাদিক তামিম হাসান। কয়েক মাসের ব্যবধানে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। এর কয়েক বছর আগে খবর রটেছিল চলচ্চিত্রে আসার আগেই বিয়ে করেছেন পরীমনি। পরীমনির কথিত স্বামী দাবি করে ইসমাইল নামে একজন ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেন। গত বছরের শুরুর দিকে সাড়ে তিনি কোটি টাকার গাড়ি কিনে আলোচনায় আসেন পরী। এর আগেও তিনি বিলাস বহুল গাড়ি কিনেন।