বহুমাত্রিক ব্যস্ততায় মিথিলা

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। দর্শক ও শোবিজে মিথিলা নামেই পরিচিত। উপস্থাপনা, অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও তিনি সমুজ্জ্বল। এর বাইরে পড়াশোনা, চাকরি স্বামী-সন্তান ও সংসার তো আছেই। সব কিছু মিলিয়ে মিথিলা একজন ব্যস্ত মানুষ। 'যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে' কথাটার যথার্থতা যেন মিথিলার বেলায় শোভা পায়। ব্যস্ততার মাঝেও সব কিছু ঠিকঠাক সামলে নেন নিজেকে। কোনো ক্লান্তি কিংবা বিরক্ত তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যেন এক যন্ত্রমানব। বর্তমানে মিথিলা এতই ব্যস্ত যে, কাজের বাইরে আয়েশ করে কিছুক্ষণ কথাবলারই সময় নেই যেন। এ ব্যস্ততার মাঝেই হঠাৎ যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় তার মুঠোফোনে। কল দিতেই ও প্রান্ত থেকে সাড়া মেলে। অতি সহজ-সরল ভঙ্গিমায় কুশলাদি আদান-প্রদানের পর জানালেন শুটিংয়ে আছেন। রাতে বাসায় ফিরে ব্যস্ততা থেকে খানিক অবসর নিয়ে আয়েশ করে কথা বলতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে অসময়কে কখনো কখনো সময় করে নিতে হয়। ব্যস্ততার ফাঁকেও বাধ্য হতে হয় কথা বলতে। মিথিলা জানালেন, ঈদের কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে তার। আসছে ঈদে 'বিয়িং ওম্যান' নাটকে দেখা যাবে তাকে। যদিও সাদামাটা কাহিনীর ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাবে এ নাটকের গল্প। মধ্যবিত্ত একজন নারী কীভাবে সংসার ও পেশাগত চ্যালেঞ্জ পূরণ করে কাজ করে যান তা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। নাটকে মিথিলার স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে ইরফান সাজ্জাদকে। মুনতাহা বৃত্তার রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন হাসান রেজাউল। আসছে কোরবানির ঈদে নাটকটি আরটিভিতে প্রচারিত হবে। এছাড়া ঈদে রাকেশ বসুর 'অন্তর্জাল যাত্রা'তেও দেখা মিলবে মিথিলার। এখানে প্রেমিকা এবং মেয়ে দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ডিজিটাল পস্ন্যাটফর্মেও এই ছবি দেখা যাবে। মিথিলা বলেন, 'ঈদের কিছু কাজ করছি। সম্প্রতি বিজ্ঞাপনের কাজও করলাম। এর সঙ্গে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষা কার্যক্রমের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে তো কাজ চলছেই। সঙ্গে গবেষণার কাজ শুরু করেছি। সব কিছু মিলে ব্যস্ত থাকতেই আমার ভালো লাগে।' একটি কাজের পাশাপাশি আরেকটি কাজ করা অনেকের জন্যই কঠিন। সব দিক সামলানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু অভিনয়, পড়াশোনা, চাকরি ও সংসার সব কিছু জাদুকরী কায়দায় মানিয়ে নিচ্ছেন মিথিলা। কীভাবে সব করেন? জানতে চাইল তিনি বলেন, 'শুটিং করতে করতে ব্র্যাকের কাজ করি আমি। বাসায় কেউ না থাকায় অফিসে মেয়ে আয়রাকে নিয়ে এসে কাজে ফাঁকে ফাঁকে ছবির সংলাপ মুখস্থ করি।' গত ডিসেম্বরে কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে বিয়ে হয় মিথিলার। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিলেন বলেও অনেকেই মন্তব্য ছুড়েন। সৃজিতের সঙ্গে বিয়ের পর কিছুদিন অভিনয়ে ভাটা পড়লেও ফের গতি ফিরেছে অভিনয়ে। প্রায় নাটক-বিজ্ঞাপনে প্রস্তাব আসছে মিথিলার কাছে। অনেক প্রস্তাব থেকে বাছাই করে কেবল পছন্দের কাজগুলোই করছেন এই অভিনেত্রী। ছোটপর্দার পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন মিথিলা। অনন্য মামনু পরিচালিত 'অমানুষ' সিনেমায় অভিনয় করছেন তিনি। এতে তার বিপরীতে আছেন চিত্রনায়ক নিরব। সিনেমার অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আছে কিছু অংশের কাজ। শিগগিরই সে অংশের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রায় ৩ মাস হয়ে গেল বাংলাদেশে আটকে আছেন মিথিলা। করোনা পরিস্থিতির কারণে কলকাতায় যেতে পারছেন না। সৃজিতও আসতে পারছে না বাংলাদেশে। দুজন দুই প্রান্তে অবস্থান করছেন। মিথিলা বলেন, 'বিয়ের পরে আমি আর সৃজিত ৭ থেকে ৮ মাস একসঙ্গে থেকেছি। আমরা দুজনেই ব্যস্ত। তারপর এই করোনা মহামারি। কিছু ভাবতেই দিচ্ছে না। এই তো এ বছর এপ্রিল থেকে আমি ঢাকায়। আমি আর সৃজিত রোজই আমাদের যাওয়া নিয়ে আলোচনা করি। ও যে ঢাকায় আসবে, তাও তো হবে না। ঢাকায় এখন করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমি বর্ডার খুললে জুলাইতে যাওয়ার চেষ্টা করব।' মিথিলা প্রথম বিয়ে করেছিলেন কণ্ঠশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খানকে। আয়রা নামের একটি মেয়েও আছে তাদের। মেয়েটি মিথিলার সঙ্গেই থাকে। স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের পর আমাদের সমাজের প্রচলিত বিভক্ত ও দূরত্বের চিত্র তাহসান-মিথিলার বেলায় দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে এখনো সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। সম্প্রতি তারা একটি লাইভ প্রোগ্রামেও এসেছেন। এ নিয়ে মিথিলা বলেন, 'তাহসান আমার প্রাক্তন স্বামী। আমরা আজও বন্ধু। আমাদের রোজ কথা হয়। আমাদের বিচ্ছেদ নিয়ে নানা কথা হলেও মানুষকে বুঝতে হবে আমরা দুজনে এক বাচ্চার বাবা-মা। আমাদের সম্পর্কটা এখন বন্ধুর মতো। আর এই সম্পর্ক আয়রার জন্য খুব জরুরি। আমার আর তাহসানের স্বাভাবিকতার জন্যই আয়রা আমায় আজ বলতে পারে, 'মা আমি বাবার কাছে যাব। আমার অন্যান্য বন্ধুদের তো দেখেছি বিবাহ বিচ্ছেদের পরে পারস্পরিক সম্পর্ককে তারা এত তিক্ত করেছে যে তার প্রভাব বাচ্চার ওপর এসে পড়েছে।'