শুরুটা কেমন হবে জয়ার!

শুধু বাংলাদেশেই নয়, নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রেও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন জয়া আহসান। বৈচিত্র্যময় অভিনয় দিয়ে ক্রমশ যেন আলোকিত করে যাচ্ছেন নিজের ক্যারিয়ার। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি পেয়েছেন ভারতের স্বনামধন্য ফিল্মফেয়ার, জি সিনে অ্যাওয়াডর্ ও সেরা বাঙালি পুরস্কার। তবে অভিনেত্রীর বাইরে এবার তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন তকমা। জয়ার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন মাসিদ রণ, ছবি তুলেছেন শেখ সাদী

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জয়া আহসান
মুক্তির আগেই আলোচনায়... আগামীকাল শুক্রবার চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে অভিষেক হচ্ছে জয়া আহসানের। ২৯টি পেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে জয়ার প্রথম প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘দেবী’। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আলোচিত উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন অনম বিশ্বাস। এখানে মিসির আলী চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, নীলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া আর রানু চরিত্রটিতে নিজেই অভিনয় করছেন জয়া। কিন্তু মুক্তির আগেই যেন আলোচনার ঝড় উঠেছে চলচ্চিত্রটি নিয়ে। প্রচার-প্রচারণা আর পত্র-পত্রিকার কল্যাণে চারপাশে কেবল ‘দেবী’ ধ্বনিই উচ্চারিত হচ্ছে। দশর্করাও যেন মুখিয়ে আছে চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য। যদিও অপেক্ষার পালা শেষ। রাত পোহালেই দশের্কর কাছে পেঁৗছে যাচ্ছে ‘দেবী’। জয়া বলেন, আমার সৌভাগ্য যে, মুক্তির আগেই আমার চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে যেরকম আলোচনা হচ্ছে, এরকম আলোচনা কম চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেই হয়েছে। আমি দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করি বরাবরের মতো ‘দেবী’কেও আমার ভক্ত-দশর্ক আহ্লাদের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। আর তখনই আমাদের দীঘির্দনের পরিশ্রম সাথর্ক হবে যখন সবাই প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি উপভোগ করবে।’ ‘দেবী’ দেখতে দশর্ক কেন প্রেক্ষাগৃহে যাবে? ‘অনেকগুলো কারণ আছে’Ñ অনেকটা আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জয়া বলেন, ‘দেবী’ দেখার অনেক কারণই রয়েছে। প্রথমত, এটি আমাদের সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য নিয়ে নিমির্ত। দ্বিতীয়ত, ‘দেবী’র মাধ্যমে প্রথমবার বড়পদার্য় আসছে তার সৃষ্ট অমর চরিত্র মিসির আলী। এই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এ ছাড়া ছবির প্রতিটি অভিনয়শিল্পী নিজ নিজ চরিত্রে অদ্বিতীয় অভিনয় করেছেন। তৃতীয়ত, পরিচালক নতুন হলেও তিনি অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ। ‘আয়নাবাজি’র মতো সফল চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। এ ছবির মাধ্যমে ভিন্ন একটি স্বাদ দশর্কদের উপহার দিতে যাচ্ছেন তিনি। আর ছবির গান, ট্রেইলার ইতোমধ্যে দশর্ক ভীষণ পছন্দ করেছেন। সব মিলিয়ে ছবিটিতে রুচিশীল বিনোদনের পাশাপাশি ভাবনার জায়গা রয়েছে। যা সহজেই দশর্ক অনুধাবন করতে পারবেন।’ প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কম এত বড় আয়োজনের চলচ্চিত্র হওয়ার পরও অপেক্ষাকৃত এত কম প্রেক্ষাগৃহে কেন মুক্ত পাচ্ছে ‘দেবী’। উত্তরে জয়া বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তাই সব প্রেক্ষাগৃহে রুচিশীল দশর্ক ছবি দেখতে যান না। আর আমার ছবিটি যেহেতু শিল্প মানসম্মত তাই ওই শ্রেণির দশর্করা যেসব প্রেক্ষাগৃহে যেতে অভ্যস্থ সেসব হলেই চলচ্চিত্রটি মুক্তি দিচ্ছি। প্রথম সপ্তাহে দশর্ক ছবিটি পছন্দ করলে পরবতীর্ সপ্তাহে হলের সংখ্যা বাড়বে।’ প্রেক্ষাগৃহের সমস্যা নিয়ে জয়া আরও বললেন, ‘চলচ্চিত্রটি আন্তজাির্তক মানসম্মত করে তৈরি করেছি। যাতে দশর্ক ভালো একটি ছবি দেখতে পায় তাই ছবির প্রথম একটি এডিটিং আমরা বাদ দিয়েছি। নতুন করে এডিটিং করেছি। সাউন্ড ও কালার কারেকশন যথাযথভাবে করেছি। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাগৃহের যে অবস্থা তাতে আমি জানি না এতো পরিশ্রম করে যে সাউন্ড বা কালার কারেকশন করেছি তা দশর্ক কতোটা আচ করতে পারবেন। তবে ভালো প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলচ্চিত্রটি দেখলে দশর্ক দারুণ উপভোগ করবেন।’ প্রযোজক হিসেবে জয়া এতদিন অন্য পরিচালক ও প্রযোজকের ইউনিটে কাজ করেছেন। এবার নিজের ইউনিটে অনেক শিল্পী-কলাকুশলী কাজ করেছে। প্রযোজক জয়া তাদের দেখভাল কেমন করেছেন- জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘আমি যেহেতু একজন শিল্পী, তাই শিল্পীদের চাহিদা ভালোই বুঝি। তাই শিল্পীদের পারিশ্রমিক বা সুষ্ঠু কমর্পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে কোনো কাপর্ণ্য করিনি। এমনকি ইউনিটের প্রতিটি লোক ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে কিনা তা আমি নিজেই খেয়াল রেখেছি। আমি মিনারেল ওয়াটার পান করছি আর আমার ইউনিটের একজন নরমাল পানি খাবে আমি তা হতে দিইনি। এ ছাড়া ‘দেবী’ যেহেতু সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র, তাই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক সময়ে শুটিং শেষ করে দশর্কদের কাছে সঠিক সময়ে তুলি দিচ্ছি। সুতরাং আমি বলতে পারি প্রযোজক হিসেবে আমার দায়িত্বে কোনো ত্রæটি রাখিনি।’ নতুন পরিচালক নিবার্চনের কারণ প্রথম চলচ্চিত্রেই নতুন পরিচালক নিলেন। দেশীয় চলচ্চিত্রের চলমান অবস্থায় এটা এক ধরনের ঝুঁকি হয়ে গেল না? জয়ার জবাব,‘আমি যে ধরনের চলচ্চিত্রে বিশ্বাসী সে ধরনের চলচ্চিত্রের প্রযোজক আমাদের এখানে খুবই কম। এর আগেও নতুন পরিচালকের ভাবনা পছন্দ হয়েছে বলে ছবিটি করার জন্য অনেক প্রযোজকের কাছে আমি নিজেই গিয়েছি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারা আগ্রহ দেখাননি। তাই আমি চেয়েছিলাম চলচ্চিত্রে প্রযোজনা করলে নতুন কাউকে দিয়েই করব।’ ‘রানু’ চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা এবার অভিনেত্রী জয়ার কাছে প্রশ্ন। ছবিটিতে আপনি রানু চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিশোরী মেয়ের চরিত্রটি নিজের ভেতর ধারণ করতে কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন, ‘আমরা আসলে ‘দেবী’ উপন্যাসের হুবহু চিত্র পদার্য় তুলে ধরছি না। তবে উপন্যাসের আমেজটা ঠিক রেখেছি। কারণ মূল গল্পটি অনেক আগের প্রেক্ষাপটে রচিত। সেই গল্পটি এখনকার সময়ে খুব বেশি যৌক্তিক হবে না। যেমন, উপন্যাসে চরিত্রগুলো যোগাযোগের জন্য চিঠি ব্যবহার করত। কিন্তু এখন তো চিঠি উঠেই গেছে। তাই আমরা ফেসবুক বা অন্যকিছু দেখিয়েছি চিঠির পরিবতের্। তেমনি আমার অভিনীত রানু চরিত্রটির মানসিক জায়গাগুলো ঠিক রেখে আমার মতো করে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে পরিচালকের ভাবনা ও আমার ভাবনা শেয়ার করে চরিত্রটির একটি রূপরেখা দঁাড় করিয়েছি। এরপর রানু চরিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড জেনেছি। এ ছাড়া অভিনয়ের সময় বিশেষ এক ধরনের মিউজিক শুনতাম। ওই মিউজিক শুনলেই আমি রানুর সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে ফেলতে পারতাম।’ পূজায় ‘দেবী’ দুগার্পূজার মতো উৎসবের মধ্যেই মুক্তি পাচ্ছে ‘দেবী’। জয়া তাই বেশ উচ্ছ¡সিত। এবারের পূজা ও দেবী চলচ্চিত্র নিয়ে জয়া বলেন, ‘আমি যে কোনো উৎসবই আগ্রহ নিয়ে পালন করি। আর দুগার্পূজা তো মূলত প্রতিটি বাঙালির উৎসব। গত কয়েক বছর দুগার্পূজায় কলকাতায় অনেক আনন্দ করি। তবে এবার যেহেতু আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাই ঢাকাতেই থাকব। শুক্রবারেই বিজয়া দশমী। ওই দিন ভক্তদের সঙ্গে বিভিন্ন হলে ‘দেবী’ দেখার ইচ্ছা রয়েছে।’