মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে চাই : পপি

মান্না ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে সিনেমা ব্যবসা ধীরগতিতে চলে গেল। একটা সময় ছিল আমাদের যে সিনেমাই মুক্তি পেত ব্যবসা করত। মানুষ প্রায় প্রতিদিনই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখত। এখনো বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। এখনো ভালো সিনেমা হল পেলে গ্রামে-শহরে সব জায়গাতে মানুষ সিনেমা দেখতে যাবে বলে বিশ্বাস করি

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

তারার মেলা রিপোটর্
সাদিকা পারভিন পপি
বলতে দ্বিধা নেই, নায়িকা হওয়ার জন্য সৌন্দযর্, আবেদন, শারীরিক গঠন, যোগ্যতা, দক্ষতাসহ যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই রয়েছে সাদিকা পারভিন পপির মধ্যে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তার প্রথম ছবিতেই। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতই বলা চলে। ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের পরিচালনায় ‘কুলি’ সিনেমার অনবদ্য অভিনয় এবং গøামারের ঝলক যেন এখনো লেগে আছে দশের্কর চোখে। চলচ্চিত্র নিমার্তাদেরও যেন নজর কাড়েন তিনি। এক এক করে হাতে আসতে থাকে বড় বড় নিমার্তার ছবি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ আলো ছড়াতে থাকেন পপি। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। অনেক হিট-সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অজর্ন করেছেন তিনি। দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারের ২০ বছর পার করলেন পপি। কিন্তু তার সৌন্দযের্ বয়সের কোনো ছাপ চোখে পড়ে না। আবেদনে একটুও যেন ভাটা পড়েনি। ঠিক যেন আগের মতই সবুজ, সতেজ আর অমলিন তিনি। বাণিজ্যিক এবং মনস্তাত্বিক ছাড়াও সব ধরনের চলচ্চিত্রেই অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। তবে গল্প ও চরিত্রের বিষয়ে আপসহীন পপি। কেবলমাত্র ভিন্নধারার চরিত্র হলেই অভিনয় করতে রাজি হন তিনি। পপির ভাষায়, আমি এখন আর আগের মতো সিনেমা করতে চাই না। আমি এখন এমন সব চরিত্রে কাজ করতে চাই, যেগুলো দিয়ে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকা যায়। পপি বলেন, বৈচিত্র্যময় কাজের সুযোগ যদি সামনে থাকে, তাহলে কেন গতানুগতিক ছবিতে অভিনয় করব? এর আগেও বিষয়ভিত্তিক ছবিতে অভিনয় করেছি। একেকটা ছবির ছিল একেক রকম চ্যালেঞ্জ। ‘মেঘের কোলে রোদ’ ছবিতে একজন এইডস রোগীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। যদিও অনেক ঝুঁকিপূণর্ বিষয়, তারপরও কাজটা করেছি। ‘গঙ্গাযাত্রা’ ছবিতে আমার চরিত্রে কোনো গøামার ছিল না। একজন ডোমের চরিত্রের অভিনয় করেছি। মারপিটের সিনেমা ‘ডাকু রানী’ ও ‘গামের্ন্টস কন্যা’ আলাদা একটা ইমেজ তৈরি করে দিয়েছে আমার। বলতে পারেন, এই ছবিটি আমার অভিনয়জীবন নতুনভাবে চাঙা করবেই। শুধু নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই নয়, দেশীয় চলচ্চিত্র নিয়েও বেশ আশাবাদী পপি। তিনি বলেন, ‘মান্না ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে সিনেমা ব্যবসা ধীরগতিতে চলে গেল। একটা সময় ছিল আমাদের, যে সিনেমাই মুক্তি পেত ব্যবসা করত। মানুষ প্রায় প্রতিদিনই সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখত। এখনো বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা। এখনো ভালো সিনেমা হল পেলে গ্রামে-শহরে সব জায়গাতে মানুষ সিনেমা দেখতে যাবে বলে বিশ্বাস করি আমি। প্রয়োজন অনুযায়ী ভালো সিনেমা হল নেই আমাদের। সিনেপ্লেক্সের মতো আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ বাড়লে সিনেমা ব্যবসা আবারও ফিরবে বলে বিশ্বাস করি। মানুষ অনেক কষ্ট করে কেন টিকেট কেটে একটা খারাপ পরিবেশে বসে তিন ঘণ্টার সিনেমা দেখবে। সিনেমা দেখার জন্য ভালো পরিবেশ খুবই জরুরি।’ পপি আরও বলেন, ‘আমাদের আমজাদ হোসেন, মনতাজুর রহমান আকবর, বাদল খন্দকার, এফ আই মানিকের মতো অনেক গুণী পরিচালকের কাছ থেকে আরও ভালো ভালো সিনেমা দশর্ক পেতে পারেন। তারা তো একটা সময় সুপাারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ভালো পরিচালক আছে আমাদের। কিন্তু সত্যি বলতে নানান কারণে ভালো পরিচালকদের কাছে এখন প্রযোজক নেই। তবে আমার বিশ্বাস, অনুদানের সিনেমা পেলেও তারা ব্যবসাসফল প্রোডাকশন উপহার দিতে পারবেন। কিন্তু আফসোস হচ্ছে উপযুক্তরা অনুদানের সিনেমা পাচ্ছেন না। আর যারা অনুদান পাচ্ছেন তারা আবার মেইনস্ট্রিমের আটির্স্টদের নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন না।’ বতর্মান ব্যস্ততা নিয়ে পপি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি সিনেমা হাতে আছে। কিছু সিনেমার কাজ শুরু হয়ে গেছে । এরমধ্যে ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ‘সাহসী যোদ্ধা’ ‘টান’ এবং ‘যুদ্ধশিশু’ সিনেমাগুলোর কথাই আপাতত মনে পড়ছে আমার। প্রতিটি সিনেমাতেই মনের মতো চরিত্র পেয়েছি। যেগুলো আমাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়।’