শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃতির কৃতিত্ব

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ২৯ জুলাই ২০২১, ০০:০০
কৃতি শ্যানন

বলিউডের উঠতি তারকা কৃতি শ্যানন অভিনীত বহুল প্রতীক্ষিত 'মিমি' সিনেমাটি নিয়ে বেশ উচ্চাশা ছিল দর্শকের। পাশাপাশি সদ্য ৩১-এ পা দেওয়া কৃতি শ্যাননেরও অনেক প্রত্যাশা ছিল সিনেমাটিকে ঘিরে। কারণ এ সিনেমার মাধ্যমেই প্রথমবার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু সেই প্রত্যশার মুখে ছাই ঢেলে দিয়েছে একদল হ্যাকার্স। মিমি সিনেমাটি মুক্তির কথা ছিল আগামীকাল ৩০ জুলাই। কিন্তু এর আগেই হ্যাকার্সদের উপদ্রবে আগেভাগেই নেটফ্লিক্সে মুক্তি ফাঁস হয়ে গেল 'মিমি'। গত সোমবার থেকেই স্ট্রিমিং জায়েন্টে দেখা যাচ্ছে পরিচালক লক্ষ্ণণ উটেকরের এ সিনেমাটি। এর আগে ১৩ জুলাই 'মিমি'র ট্রেইলার প্রকাশ্যে এসেছিল। তা দেখে যেটুকু জানা গিয়েছিল, তাতে রাজস্থানের এক নৃত্যশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৃতি শ্যানন। আর ট্যাক্সি ড্রাইভার ভানুর ভূমিকায় রয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। সেখানে দেখা যায়, সারোগেসির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে অর্থ উপার্জনের প্রস্তাব মিমিকে দেয় ভানু। সেই প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যায় মিমি। কিন্তু সন্তানসম্ভবা হওয়ার পরই ঘটে বিপত্তি। বিদেশের যে দম্পতি সারোগেসির প্রস্তাব দিয়েছিল, তারা আচমকা পিছু হটে যায়। আর এতে মিমি পড়ে যায় মহাবিপাকে। একদিকে সমাজের লাঞ্ছনা, অন্যদিকে পরিবারের গঞ্জনা। এই দুইয়ের মাঝে মিমি আচমকা সবাইকে বলে, ভানুই তার সন্তানের বাবা।

যাই হোক, কমেডির মোড়কেই সারোগেসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক লক্ষ্ণণ উটেকর। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে বলেই মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। কৃতি-পঙ্কজ ছাড়াও এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন মনোজ পাহওয়া, সুপ্রিয়া পাঠক, স্মিতা জয়কর ও মারাঠি অভিনেত্রী সাই তামহানকর। তবে সাদামাটা এক নারীর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে এরই মধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা কৃতি শ্যানন। চমকহীন সারোগেসির গল্প, অভিনয়ের জোরে স্পটলাইট কাড়লেন 'পরমসুন্দরী' কৃতি।

ফাঁস হয়ে যাওয়ায় 'মিমি' সিনেমায় দেখা যায়, ছিপছিপে কোমর মিমির। চোখের চাউনিতে পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে রাজস্থানের ছোট্ট এক গ্রামের মেয়ে মিমি। এলাকাবাসীর কাছে মিমিই পরমাসুন্দরী। পাঁচতারা হোটেলের বিনোদনের দায়িত্ব তার হাতেই। নেচে গেয়ে তুফান তোলে মিমি। বলিউডের জনপ্রিয় এক হিরোইন হতে চায় সে। দীপিকা, আলিয়া ভাট, আনুশকা শর্মাদের মতো বড় বড় নায়িকাদের এক হাত নিতে চায় সে। রণবীর সিংয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলে চলে। বিন্দাস, হাসি মুখের এই মিমির জীবনে যে কখনো সময় ঝড় আসতে পারে, তা আঁচও করতে পারে না কেউ। কিন্তু একসময় আচমকাই সেই ঝড় আসে, মাতৃত্ব আসে, আত্মত্যাগ আসে আর আসে সংগ্রাম। আর মিমি কখনো হেসে, কখনো চোখের জলে, কখনো লড়াই করে ঝড়ের ঝাপটা সামলেও নেয়। পরিচালক লক্ষ্ণণ 'মিমি' সিনেমায় সারোগেসির গল্প ঠিক এভাবেই সাজিয়েছেন। কমেডি, ড্রামার ধাঁচে মাতৃত্ব, সিঙ্গেল মাদারের কনসেপ্টকে খুব সহজে পৌঁছে দিয়েছেন দর্শকদের মধ্যে। যা কিনা এই ছবির আসল ম্যাজিক। খুব সরলভাবে, এক সরল গল্পের মধ্যে দিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ইসু্যকে ধরেছেন পরিচালক। কিন্তু এই ম্যাজিককে যিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন, তিনি হলেন- কৃতি শ্যানন। এই ছবি যেন তার জন্যই তৈরি হয়েছে।

কৃতি এর আগেও প্রমাণ দিয়েছেন তিনি ভালো অভিনেত্রী। 'বরেলি কি বরফি' যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ছোট টাউনের গল্পের ছবিতে কৃতি যেন একেবারে পারফেক্ট। 'মিমি' ছবির ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটালেন কৃতি। মিমি চরিত্রকে একেবারে যেন আত্মস্থ করে ফেললেন কৃতি।

পঙ্কজ ত্রিপাঠী কতটা ভালো অভিনেতা- তা নতুন করে বলার দরকার নেই। পঙ্কজের কমেডি টাইমিং যে কত ভালো, তা ফের প্রমাণ করলেন তিনি। তবে এই ছবিতে পঙ্কজ, কৃতিকে পুরোটাই সাপোর্ট করে গেছেন। একজন বিচক্ষণ অভিনেতার ঠিক যা করা উচিত, ঠিক সেভাবেই। পঙ্কজ জানতেন, এই ছবি একেবারেই কৃতির। কিন্তু সেই ইগোর লড়াইয়ে না গিয়ে বরং কৃতিকে গ্রম্নম করেছেন। খোলা মাঠ দিয়েছেন অভিনয় করার জন্য। বহুদৃশ্যেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

'মিমি' একেবারেই অভিনয়ের ছবি। যার দায়িত্ব শুধুই কৃতি বা পঙ্কজের উপরে নয়। সহ অভিনেতা হিসেবে মিমির বন্ধু 'সামার' চরিত্রে সাই তামহানকারের অভিনয় বহু দৃশ্যে কৃতির অভিনয়কেও ছাপিয়ে যায়। এর সঙ্গে ঠিকঠাক তাল মিলিয়ে গিয়েছেন মনোজ পাওয়া সুপ্রিয়া পাঠক। বিদেশি দম্পতির চরিত্রে ইভলিন এডওয়ার্ডস ও আইডনের অভিনয়ও বেশ ভালো। 'মিমি' ছবির একটি দৃশ্যের কথা না বললেই নয়। মিমির কোলে সদ্য জন্মানো শিশু। ক্যামেরা সোজা মিমির মুখে ক্লোজআপ। কৃতি শ্যানন এক দৃশ্যেই যেন বুঝিয়ে দিলেন তিনি এই ছবির সবচেয়ে স্ট্রং পয়েন্ট। আর পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন, কোন দিকে ছবির গল্প এগোতে চলেছে! এত সব ভালো থাকলেও, 'মিমি' ছবির মধ্যে খামতি রয়েছে কিছু। ছবির দ্বিতীয় ভাগে এডিটিং নিষ্ঠুর হলে ছবিটা আরও বেশি উপভোগ্য হতো। বিশেষ করে শেষের আধঘণ্টা একটু বেশিমাত্রায় টেনেছেন পরিচালক। যেটা এড়িয়ে যাওয়াই যেত। এসব ত্রম্নটিকে পাশে রাখলে, 'মিমি' দেখার মতো একটা ছবি। 'মিমি' মারাঠি ছবি 'মালা আই ভাচে'র হিন্দি রিমেক। মারাঠি ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। শেষমেশ বলতে হয়, 'মিমি' ছবি দেখুন একমাত্র কৃতির অনবদ্য অভিনয় দেখার জন্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে