শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাপ্পান্নতেও লাস্যময়ী সালমা

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
সালমা হায়েক

হলিউডের অতি পরিচিত নাম সালমা হায়েক। শুধু হলিউডে কেন, গোটা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে বেশ সমাদৃত এই মেক্সিকান তারকা। তার রূপের জাদুতে মুগ্ধ গোটা দুনিয়া। জীবনের ৫৫ বসন্ত পেরিয়ে আজ ৫৬-তে পা রাখছেন সিনিয়র এ অভিনেত্রী। তবে বসন্তের পর যতই বসন্ত আসছে, ততই যেন তরুণ হয়ে উঠছেন অসংখ্য আলোচিত ছবির এ লাস্যময়ী অভিনেত্রী। ৫৬-তেও তারুণ্যে ভরপুর সালমা হায়েক। এই বয়সেও কদিন পর পর নতুন নতুন ফটোশুটে অসাধারণ ভঙ্গিতে দেখা যায় তাকে। অনেকে তাকে চির আবেদনময়ী ও চির যৌবনা বলে অ্যাখ্যা দেন। এ বিষয়ে সালমা হায়েক বলেন, 'অল্প বয়সে তাকে মোটেই সুন্দরী লাগত না। বরং এই প্রাপ্ত বয়সে তার শরীরের গঠন আগের থেকে অনেক বেশি সঠিক ও আবেদনময়ী হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি সচেতন নন উলেস্নখ করে সালমা হায়েক আরও জানান, কোনো দিন শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামও করেননি তিনি। তবে ইদানীং যোগাসন করছেন তিনি। এতদিন বডিলাইন সঠিক না হওয়ার কারণে ক্যারিয়ারে বেশ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, অন্য দক্ষ অভিনেত্রীদের যখন ৩২ বছরেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়, তখন এই বাজারেও এখনও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

এ অভিনেত্রী সর্বশেষ অভিনয় করেন গত বছর খ্যাতনামা পরিচালক রিডলি স্কটের 'হাউস অব গুচ্চি'তে। এ ছবির শুটিংয়ের আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সেই অভিজ্ঞতার কথা উলেস্নখ করে এক সাক্ষাৎকারে সালমা হায়েক জানান, 'মৃতু্যর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, চিকিৎসক আমাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।' তবে চিকিৎসকের সেই পরামর্শ কানে তোলেননি 'ডেসপারেডো' চলচ্চিত্রের সাড়া জাগানো এই অভিনেত্রী। ডাক্তারকে তিনি বলেছিলেন, 'তার চেয়ে বাড়িতেই আমার মৃতু্য হোক।' তিনি আরও উলেস্নখ করেন, কেভিড-১৯ ধরা পড়ার পর লন্ডনের ম্যানস রোডের বাড়িতে সাত সপ্তাহ আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে তাকে অক্সিজেনও নিতে হয়।

যদিও বর্তমানে তিনি আগের মতোই সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করছেন। জানলে অবাক হবেন, দেবী লক্ষ্ণীর আরাধনা করেন এই হলিউড সুন্দরী। ক্যাথলিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে বড় হওয়া এই নায়িকা নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে লাইমলাইট থেকে দূরেই রাখতে ভালোবাসেন। তবে কিছুদিন আগে ইনস্টাগ্রামে দেবী লক্ষ্ণীর প্রতি নিজের অপার ভক্তি ও বিশ্বাসের কথা তুলে ধরেছেন সালমা। সেখানে তিনি জানান, নিজের অন্তর-আত্মার সৌন্দর্যের খোঁজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে হিন্দুদের উপাস্য দেবী লক্ষ্ণীর স্মরণে। ইনস্টাগ্রামে সালমা লেখেন, 'আমি যখন নিজের অন্তরের সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করি, আমি দেবী লক্ষ্ণীকে স্মরণ করে ধ্যান শুরু করি। হিন্দু ধর্মে তিনি সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য, ভালোবাসা, সৌন্দর্য, মায়া, আনন্দ এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক। তার ছবি আমার অন্তরকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়, আর আনন্দই প্রকৃত সৌন্দর্যের সঙ্গে আমার পরিচয় করায়।' সালমা হায়েকের এই পোস্ট সেই সময়ে দ্রম্নত ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। হিন্দুত্বের প্রতি নায়িকার আস্থা দেখে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার ভারতীয় ভক্ত-অনুরাগীরা। যদিও হলিউড তারকাদের হিন্দু দেব-দেবীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কোনো নতুন ঘটনা নয়, জুলিয়া রবার্টস, রাসেল ব্র্যান্ড, মাইলি সাইরাসের মতো হলিউড তারকারাও হিন্দু দেবদেবীর আরাধনা করেন। ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল হলিউড।

লেবাননে জন্ম নেওয়া সালমা হায়েক বড় হয়ে ওঠেন মেক্সিকোতে। সালমা হায়েকের পুরো নাম সালমা ভালগারমা হায়েক জিমেনেস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে (২ সেপ্টেম্বর) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। একাধারে তিনি একজন মেক্সিকান এবং মার্কিন অভিনেত্রী, পরিচালক, এবং টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। চলচ্চিত্র জগতে তিনি অভিনেত্রী সালমা হায়েক নামেই সমধিক পরিচিত। বেশকিছু দাতব্য কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। পাশাপাশি বেশকিছু মানবিক বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজে তিনি সোচ্চার। এর মধ্যে আছে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য।

সালমা হায়েকের সবচেয়ে আলোচিত কাজ হলো 'ফ্রিদা চলচ্চিত্রে মেক্সিকীয় চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর ভূমিকায় অভিনয়। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার তথা একাডেমি পুরস্কার, গোল্ডেন গেস্নাব পুরস্কার, বাফটা পুরস্কার ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনিই প্রথম মেক্সিকীয়, যিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। নির্বাক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী দোলোরেস দেল রিও-এর পর তিনি হলিউডের অন্যতম উলেস্নখযোগ্য মেক্সিকীয় ব্যক্তিত্ব। ফার্নাদা মন্টিনিগ্রোর পর তিনি দ্বিতীয় লাতিন আমেরিকান অভিনেত্রী, (তৃতীয় জন ছিলেন কাতালিনা সানদিনো মোরিনো) যিনি সেরা অভিনেত্রী বিভাগে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালের দ্য মালদোনাদো মিরাকল অনুষ্ঠানের জন্য শিশুতোষ/কিশোর/পারিবারিক বিশেষ অনুষ্ঠান পরিচালনা বিভাগে ডেটাইম এমি পুরস্কার অর্জন করেন সালমা হায়েক এবং ২০০৭ সালে এবিসি চ্যানেলের হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী আগলি বেটি ধারাবাহিকে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করে হাস্যরসাত্মক ধারাবাহিকে সেরা অতিথি অভিনেত্রী বিভাগে একটি এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এনবিসি চ্যানেলের হাস্যরসাত্মক ধারাবাহিক থার্টি রক-এ অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন।

২০০৭ সালের জুলাই মাসে হলিউডের লাতিন সম্প্রদায়ের মধ্যে 'লাতিনো পাওয়ার ফিফটি' অর্থাৎ 'পঞ্চাশ লাতিনো ক্ষমতাধর' ব্যক্তিত্বের ওপর দ্য হলিউড রিপোর্টার পত্রিকা প্রথমবারের মতো একটি জরিপ পরিচালনা করে; যেখানে সালমা হায়েকের অবস্থান ছিল চতুর্থ। ওই মাসেই অনুষ্ঠিত আরেকটি জরিপে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে ৩,০০০ তারকা ব্যক্তিত্বের মধ্যে সালমা হায়েক সবচেয়ে 'যৌন আবেদনময়ী তারকা' নির্বাচিত হন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে