বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেটের মুখে উচ্ছ্বাসের হাসি

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
কেট উইন্সলেট

কেট উইন্সলেট- নামটি শুনলেই মোহনীয় এক সুন্দরীর চেহারা ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। ভেসে ওঠে বহুল আলোচিত 'টাইটানিক' সিনেমার নায়িকা রোজের কথা; যার প্রেমিকের নাম ছিল জ্যাক। হঁ্যা, বিশ্বের অধিকাংশ দর্শকের সঙ্গে এই সুন্দরীর প্রথম পরিচয় টাইটানিক সিনেমার মাধ্যমেই। কতজন তার রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। তার পাতলা ঠোঁটের মিষ্টি হাসি এখনো দর্শকের হৃদয়ে দোলা দেয়। যদিও 'টাইটানিক' ছাড়াও অনেক ব্যবসা সফল ও আলোচিত সিনেমা আছে তার। আছে বেশ কিছু নামকরা টিভি নাটক ও টিভি সিরিজ। বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসার পাশাপাশি তার অনেকগুলো সিনেমা পুরস্কৃত হয়েছে। ছয়বার একাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং সাতবার গোল্ডেন গেস্নাব আসরেও মনোনয়ন পান এ মেধাবী অভিনেত্রী। তবে কেটের বড় একটা আক্ষেপ ছিল অস্কার তথা একাডেমি অ্যাওয়ার্ড না পাওয়ায়। শেষমেশ 'দ্য রিডার' সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কার লাভ করে স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। এছাড়া তিনি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) এবং হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন থেকেও পুরস্কার পেয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি একবার এমি অ্যাওয়ার্ডের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই এমির স্বপ্ন এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল তার। শেষ পর্যন্ত সেই আক্ষেপও দূর হলো। ৪৫ বছরে এসে এমির মঞ্চে বিজয়ীর হাসি হাসলেন এ তারকা। টিভি সিরিজ বিভাগে 'মের অব ইস্টটাউন'-এর জন্য সেরা অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একই বিভাগে সেরা অভিনেতার পুরস্কারটি গিয়েছে ইওয়ান ম্যাকগ্রেগরের ঝুলিতে। 'হ্যালস্টন'-এর জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন।

সম্প্রতি মার্কিন দুনিয়ার টেলিভিশনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার '৭৩ এমি অ্যাওয়াডস' প্রদান করা হয়। গত বছর করোনা মহামারির জেরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হলেও এ বছর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ছিল স্বাভাবিক। তবে, সমস্ত রকম কোভিড সতর্কতাবিধি মেনেই অনুষ্ঠানটি হয়। এতে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বাসে যেন ফেটে পড়েন কেট উইন্সলেট। পুরস্কার হাতে পেয়ে আবেগাপস্নুত হয়ে তিনি বলেন, 'সত্যি এক এক করে আমার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। আজকের দিনটা আমার জন্য আরও একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। এমি অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আজ আমার অস্কার পাওয়ার কথা মনে হচ্ছে। দুটি পুরস্কার নেওয়ার অনুভূতি একই মনে হচ্ছে আমার কাছে।'

এত কিছুর পরও নিজের ক্যারিয়ার অনেকটাই অনুতপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন কেট উইন্সলেট। বিশেষ করে ক্যারিয়ারের দুটি ছবি নিয়ে বেশি অনুতপ্ত এই অস্কারজয়ী অভিনেত্রী। কারণ এগুলো বানিয়েছেন যৌন হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই পরিচালক। এর মধ্যে 'কারনেজ' (২০১১) নির্মাণ করেন রোমান পোলানস্কি। আর 'ওয়ান্ডার হুইল' (২০১৭) ছবির নির্মাতা উডি অ্যালেন। উভয়ের সঙ্গে কাজ করায় অনুশোচনায় পোড়েন ৪৫ বছর বয়সি এই তারকা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে কানাডায় শুরু হওয়া টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কেট উইন্সলেটের নতুন ছবি 'অ্যামোনাইট'-এর উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে আমেরিকার ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনুশোচনা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। তার কথায়, 'এখন মনে হয় এ আমি কী করেছি? ধ্যাৎ, কেন যে উডি অ্যালেন ও রোমান পোলানস্কির সঙ্গে কাজ করতে গেলাম। চলচ্চিত্র দুনিয়ায় তারা এত সম্মানজনক অবস্থান কীভাবে ধরে রেখেছিলেন তা এখন আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে। এটা পুরোপুরি লজ্জাকর ব্যাপার।' ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনকে উইন্সলেট আরও বলেন, 'উডি ও পোলানস্কি উভয়ের সঙ্গে কাজ করার দায় মাথা পেতে নিচ্ছি। আমি চাইলেই ঘড়িকে উল্টো দিকে নিতে পারব না। এ কারণে আক্ষেপটা থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু আমরা এসব ব্যাপারে সত্যটা না বলতে পারলে বাকি থাকল কী?'

উডি অ্যালেন, কেট উইন্সলেট ও রোমান পোলানস্কিউডি অ্যালেন, কেট উইন্সলেট ও রোমান পোলানস্কি অবশ্য উডি ও পোলানস্কি দু'জনকেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন উইন্সলেট। তার মন্তব্য, 'উডির ব্যক্তিজীবন ও পরিবারের ব্যাপারে কিছুই জানি না। এসব ঘটনা (যৌন হয়রানি) সত্যি নাকি মিথ্যা অভিনয় শিল্পীদের সেসব জানার কথাও নয়। এটা ঠিক, উডি অ্যালেন চমৎকার একজন পরিচালক। একইভাবে রোমান পোলানস্কি গুণী নির্মাতা। তাদের সঙ্গে কাজ করে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। এটাই সত্যি।' কেট উইন্সলেটের হাতে এখন আছে জেমস ক্যামেরন পরিচালিত 'অ্যাভাটার টু'। 'টাইটানিক' মুক্তির ২৫ বছর পর আবারও একসঙ্গে কাজ করছেন তারা।

১৯৭৫ সালের ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া কেট উইন্সলেটের পুরো নাম কেট এলিজাবেথ উইন্সলেট। ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এ অভিনেত্রীর বাবা রজার উইন্সলেট ও মা স্যালি অ্যানি ব্রিজেস-উইন্সলেট দুজনেই মঞ্চে অভিনয় করতেন। নানা অলিভার আর নানি লিন্ডা ব্রিজেস চালাতেন রিডিং রেপার্টরি থিয়েটার। মামা রবার্ট ব্রিজেস চাকরি করতেন লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড থিয়েটার ডিস্ট্রিক্টে। অর্থাৎ কেট উইন্সলেট এমন এক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে নিয়মিত অভিনয় ও সংস্কৃতি চর্চা হয়েছে। পারিবারিকভাবে পাওয়া সহজাত প্রতিভার বলেই হয়তো মাত্র ১১ বছর বয়সে প্রথম টিভি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন কেট। সেই সঙ্গে অ্যাকাডেমিকভাবে অভিনয় শেখার জন্য ভর্তি হন হাইস্কুলের পারফর্মিং আর্টসে। পরবর্তী কয়েক বছর অভিনয়ের কলাকৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি নিয়মিত সেগুলোকে হাতে-কলমে প্রয়োগ করতে থাকেন বিভিন্ন সিটকমে অল্প-বিস্তার অভিনয় করার মাধ্যমে। ৬ বছর পর প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পান হ্যাভেনলি ক্রিয়েচারস (১৯৯৪) নামের একটি সিনেমায়, যেখানে তাকে একজন খুনে কিশোরীর চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল। সিনেমাটি বক্স অফিসে তেমন উলেস্নখযোগ্য কিছু করতে না পারলেও, সমালোচকদের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে তার অভিনয় দেখে এক সমালোচক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কেট উইন্সলেট কোনো দিন বড় তারকা হতে পারবেন না। কিন্তু সেই ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে নিজেকে একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে