বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পূজায় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থনা

ম মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

আজ বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজার নবমী। আগামীকাল শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবারের শারদোৎসব। এবারও উৎসবটি পালিত হচ্ছে এমন সময়, যখন পৃথিবীজুড়ে চলছে মহামারি করোনাকাল।

স্বাভাবিকভাবেই বাঙালির চিরচেনা পরিবেশে শারদোৎসব হচ্ছে না এবারও। এহেন পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন দেশের বিশিষ্ট অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়? জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'ভাবনার তো কিছু নেই। এবার তো কোভিড আক্রান্ত শারদীয় দুর্গাপূজা, তাই না! সরকারি বিধিনিষেধ তো আছেই, তাছাড়া জীবনবোধ ও স্বাস্থ্যসচেতনার কারণেও সামাজিক দূরত্ব মেনে সবাইকে এ উৎসব ও আনন্দ করা উচিত এবং তা করতে হবেও। এতে আরো যোগ করেন, 'আমাদের সবাইকে এটাও মনে রাখতে হবে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা কিন্তু এই শিক্ষাই দেয়। কাজেই এই বিষয়টা সবার মধ্যে প্রচার করতে হবে শক্তভাবে, সফলভাবে। আর প্রার্থনার জায়গা থেকে বলতে পারি, আমরা যেন দ্রম্নত কোভিডমুক্ত হই এবং দেশটা যেন সম্প্রীতির দেশ হয়। হিংসা-বিদ্বেষ, সংঘাত, নানা অশুভ তৎপরতা, এগুলো যেন দূর হয়, এইটাই প্রার্থনা করি। বাংলাদেশটা যেন সুখিসমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, এই প্রার্থনাও করি।' বলাই বাহুল্য, শারদীয় দুর্গাপূজায় যতটা স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ-উৎসবের মধ্যে দিয়ে যায় বাঙালি জনজীবন, সেটা বাঙালির আর কোনো উৎসবেই নেই। ধর্মীয় উৎসব মানেই এখানে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সির এক অনিন্দ্য মিলনমেলা থাকবে। যার যার মতো আনন্দ-উৎসব, মজা করবে। সেই সব স্মৃতির জায়গায় অনেক মজার ঘটনা আছে প্রত্যেকেরই। সেখান থেকে মজার কোনো স্মৃতির কথা জানতে চাওয়া মাত্র পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন যেন একটা অতীত রোমন্থনে ফিরে গেলেন। বললেন, 'স্মৃতির কোনো শেষ নেই। স্মৃতি মানেই হচ্ছে, দামাল শৈশব-কৈশোর। শৈশব-কৈশোরে আনন্দের যে মজা- এর কোনো তুলনাই হয় না। নতুন পোশাক, নতুন জুতো বা বড়দের কাছ থেকে পুজোর উপহার পাওয়া, এর আনন্দ এক সময় মনে হতো তার চেয়ে মজা আর কিছুতেই নেই। এই অনুভূতি এখনো আমার আছে। এখন তো পাই না, এখন দেই। দিতে গিয়ে দেখি, আরো দ্বিগুণ আনন্দটা। আরো দ্বিগুণ মজার। স্নেহ তো সবসময়েই নিম্নগামী, তাই না! এখন ছোটরা যখন হাত বাড়িয়ে দেয়, তাদের যে স্নেহভালোবাসাটা দেই- তখন মনে হয় আমরা যেটা পেতাম, এটা তার চেয়ে অনেক বেশি। তখন মনে হয় এত সুখানন্দ পৃথিবীতে আর নেই।'

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু একজন নন্দিত অভিনেতাই নন, একাধারে নাট্যকার, আবৃত্তিকার, সংগঠক এবং সুলেখকও। বর্তমানে কীভাবে দিনকাল যাচ্ছে, জানতে চাইলে বলেন- 'এখন ইটিভির সিইও হিসেবে কর্মরত আছি। সেতো আছেই, তা ছাড়া কোভিড পরিস্থিতির কারণেও অভিনয় থেকে সাময়িক বিরত আছি।' এরপর আরো যোগ করেন- 'তবে একজন অভিনয় শিল্পী তার শারীরিক মৃতু্যর আগ পর্যন্ত অভিনয় শিল্পী। এতে কোনো অবসর নেই। এখন আমি এই শিল্প মাধ্যমগুলোর কোথাও নেই- এর মানে এই নয়, আমি আর অভিনয়ে ফিরছি না। অবশ্যই আমি অভিনয়ে ফিরব। তবে সে রকম সময় ও পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষায় আছি।'

টিভি ও চলচ্চিত্রে আদর্শবর্জিত গল্পে অভিনয় করা গেলেও মঞ্চনাটকে এটা কঠিন। সেক্ষেত্রে পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় কোন আইডিওলজির কন্টেন্ট ধারণ করেন জানতে চাওয়া মাত্র তিনি বলেন, 'এই প্রশ্নটা খুবই ভালো করেছেন। এক্ষেত্রে আমি বলব, শিল্পই আমার প্রধান আইডিওলজি। যে কন্টেন্টে শিল্প থাকবে, সেটাই আমার আইডিওলজি। শিল্পের মধ্যে সবকিছুই থাকবে এবং তা কমপিস্নট শিল্প হতে হবে। শিল্পকে এ রকম বা সে রকম হতে হবে- এভাবে আলাদা করার কিছু নেই। এখানে যা কিছু ভালো আছে সব থাকবে এবং সম্পূর্ণরূপে থাকবে। কিন্তু এই শিল্পকে আলাদা করার নামে যদি এমন হয় যেটা শিল্পের মানদন্ডে উত্তীর্ণ নয়- তাহলে আমি তাতে নেই। এই আইডিওলজি আমার মনের মধ্যে ধারণ করি বলেই আমি সবার সঙ্গে কাজ করি না। সব নির্মাতার সঙ্গে কাজ করি না। সব চিত্রনাট্য বা কাহিনীকে গ্রহণ করি না।' মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র এর সব জায়গাতেই সমান নৈপুণ্য রয়েছে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে থিয়েটারে একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কাজ করেছেন অসংখ্য মঞ্চ নাটকে। এর মধ্যে কোনোগুলো বারবার মনে পড়ে? জবাবে এ তারকা বলেন, এই পর্যন্ত বহু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছি। যেগুলো আমার বারবার মনে পড়ে সেগুলো- 'শকুন্তলা', 'কীত্তনখোলা', 'একাত্তরের গল্প'. 'নষ্টনীড়' ও 'দানব'। এছাড়া চলচ্চিত্র- মোরশেদুল ইসলামের 'আগামী' ও 'আমার বন্ধু রাশেদ', নাসির উদ্দিন ইউসুফের 'একাত্তরের যীশু' ও 'গেরিলা'। তবে এখানে যে নাটকটির নাম বলতে ভুলে গেছি, সেটি হচ্ছে 'পলাশী থেকে ধানমন্ডি'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে