শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙাগড়ার তাসনুভা তিশা

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

আজ থেকে আট বছর আগে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন প্রতিভাবান টিভি অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। এরপর মোস্তফা কামাল রাজের 'লাল খাম বনাম নীল খাম' নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। কিন্তু আকর্ষণীয় ফিগারের এই অভিনেত্রী সাংসারিক জীবনে বারবার ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়ে মাঝেমধ্যে মুষড়ে পড়েন তিনি।

'একদিন ছুটি হবে', 'অফ স্ক্রিন', 'লাভ গুরু ডটকম', 'দোস্ত দুশমন', 'ঝালমুড়ি', 'প্রেম করতে ইচ্ছুক', 'লাভ লস', 'অপেক্ষা', 'মনে মনে', 'মনে পড়ে', 'অরূপার গল্প' প্রভৃতি নাটকের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রীর দীর্ঘদিন হতাশায় একাকী জীবন কাটছিল। অথচ দুই সন্তানকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখানোর মধ্যেই অনুমিত হয় তাসনুভা তিশা সংসার গড়ার জন্য ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন দ্বিতীয়বার। কিন্তু সেখানে থিতু হতে পারেননি। এদিকে কাজও কমে আসছিল তার। তবে দুই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘাত-প্রতিঘাত ভুলে এখন আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন নাটক ছাড়াও ওয়েব ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ ও সিভিসিতে। ইতোমধ্যেই কাজ করেছেন শিহাব শাহীনের ওয়েব সিরিজ 'আগস্ট ১৪' ও স্বল্পদৈর্ঘ্য 'করোনা বলে কিছু নেই', মিজানুর রহমান আরিয়ানের 'নেটওয়ার্কের বাইরে', তানিম পারভেজের 'অরা', পার্থ সরকারের 'ব্যাচ-২০০৩' প্রভৃতি। আবারও তার এই ব্যস্ততা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানালেন, 'আমার তো এ ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। আমি নিজে এবং আমার দু'দুটো সন্তান তাদের ভরণপোষণের জন্যও আমাকে এটা করতে হয়। এ জন্য আমাকে কিছু মানহীন কাজেও যুক্ত হতে হয়েছে। কিন্তু আমি মন থেকে সব সময়েই চেয়েছি ভালো মানসম্পন্ন কাজ করি। তবে এখন থেকে ঠিক করেছি ভালো গল্প দেখে মানসম্পন্ন নাটক, ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজে অভিনয় করব। ভালো গল্প হলে বড়পর্দায়ও কাজ করতে চাই।' এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ করা যায় তাসনুভা তিশার রিলিজ পাওয়া শিহাব শাহীনের 'আগস্ট ১৪', যেটি ব্যাপক সমালোচিতও হয়। তবে মিজানুর রহমান আরিয়ানের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা গল্পের 'নেট ওয়ার্কের বাইরে' ওয়েব সিরিজটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এখন নতুন নতুন ওয়েব ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজের জন্য ডাক আসছে তার। বলা চলে এখন ওয়েব সিরিজের তারকা শিল্পী তাসনুভা তিশা। প্রথম দিকে কিছু কিছু ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজ অশ্লীলতার দায়ে সমালোচিত হয়ে আসছিল শোবিজ মহলে। সেই সিরিজের কোনোটিতে তিশা অভিনীত ওয়েব সিরিজও রয়েছে। ওয়েব সিরিজ বা ওয়েবফিল্মে এখন প্রতিষ্ঠিত টিভি অভিনেতারাও কাজ করছেন। এমনকি চলচ্চিত্রের অভিনেতারাও কাজ শুরু করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে এই পস্ন্যাটফরম কেমন মনে করছেন তিশার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যা করেছি সে হিসেবে এই পস্ন্যাটফরমকে বেশ সৃজনশীলই মনে হচ্ছে আমার কাছে। নতুন নতুন টেকনিক ও আইডিয়া আসছে এর মাধ্যমে। যেমন- পার্থ সরকারের 'ব্যাচ-২০০৩'। এই ওয়েব ফিল্মে একেবারে ভিন্ন ধাঁচের চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে। এখানে শিপনের বিপরীতে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করেছি সে চরিত্রটির নাম 'এশা'। এখানে আমি একজন সিনেমার নায়িকা চরিত্রে পারফর্ম করছি। কোভিডের লকডাউন শেষে স্কুল খুললে বন্ধুদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হয়। সেখানে যারপরইনাই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে থাকে। এটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র। এর গল্পটি মূলত স্কুলজীবনেরর্ যাগিং, বুলিং নিয়ে। অল্প বয়সের এসব মানসিক অত্যাচার কি রকম প্রভাব ফেলতে পারে এ নিয়েই এই সিনেমাটি। সিনেমাটিতে অনেক চ্যালেঞ্জিং শুটিংও করতে হয়েছে আমাকে। এ ছাড়া ওয়েব সিরিজ 'অরা'ও একেবারে ব্যতিক্রমী। মারুফ রহমান ও তানিম পারভেজের গল্পে এটি নির্মাণ করেছেন তানিম পারভেজ। চিত্রনাট্যে ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ার। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে এটির শুটিং শেষ হয়েছে। এতে আমার সহশিল্পী এফ এস নাঈম। এ প্রসঙ্গে তিশা বলেন, একেবারে ভিন্ন ধারার একটা গল্প নিয়ে এই ওয়েব সিরিজটি বানানো হয়েছে। এ রকম চরিত্রে আমি আগে অভিনয় করিনি। আমার জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা। আশা করছি, দর্শকেরও ভালো লাগবে। খুব শিগগিরই এটা বায়োস্কোপে মুক্তি পাবে।'

ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে বলা হচ্ছে, এটা নিচে নামতে নামতে এতটা নিচে নেমেছে যে, এর সঙ্গে কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতাও হতে পারে না। এর জন্য কোনো সেন্সরবোর্ড নেই, কোনো দায়িত্বশীল পর্যবেক্ষণও নেই। যার যেমন ইচ্ছা বানিয়ে যাচ্ছে। এখানে তো এমন দৃশ্যেও কাজ করতে হয়, যা গল্পটির দাবিও তাই- তখন কি সেটা একজন ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজের তারকা শিল্পী এড়াতে পারেন? তাসনুভা তিশা বলেন, 'আসলে সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। গল্পের দাবিতে সেরকম দৃশ্যে আসতেই হয়। যেখানে যেমন রোমান্স সিকোয়েন্স ডিমান্ড করে সেটা একজন শিল্পী হিসেবে এড়াতে পারি না বলেই সেগুলো এসে যাচ্ছে। একান্তই গল্পের দাবিতেই দৃশ্যগুলো করতে হচ্ছে।' তবে সেটা কতটা গল্পের দাবিতে আর কতটা আর্থিক বা পারিপার্শ্বিকতার দাবি মেটাতে করতে হচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে তিশা যখন বলেন, এখন থেকে মানসম্পন্ন ভালো গল্পের কাজে হাত দেবেন তখন বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনিও মানসম্পন্ন নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বা ওয়েব ফিল্ম প্রত্যাশা করেন। কারণ, মানহীন, অরুচিকর নাটক, ওয়েব ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজ শুধু সমাজেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না, এটা শোবিজ মহলের অনেকেও ভালো চোখে দেখেন না- এটা তিনিও বোঝেন। এই বোঝাবুঝির ব্যাপারটা এখন তার তৃতীয় বিয়ের ক্ষেত্রেও সারতে চান। সেই কবে দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। আজও জীবনসঙ্গী হিসেবে কারও ওপর আস্থা আনতে পারেননি। এ বিয়ের জন্য আর কত অপেক্ষা? এই প্রশ্নটিতে বারবারই পড়তে হয় তাকে। আবারও একই প্রশ্নের সম্মুখীন হলে কেমন যেন হয়ে যান এই পোড়খাওয়া অভিনেত্রী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে