অঁাধারেও উজ্জ্বল পূণির্মা

বলতে দ্বিধা নেই, অসংখ্য নায়িকা থাকার পরও নায়িকা সংকট বিরাজ করছে দেশীয় চলচ্চিত্রে। জোয়ার-ভাটার মতো অনেক নায়িকাই হঠাৎ করে আলোড়ন তুলে হঠাৎ করেই আবার হারিয়ে যাচ্ছেন। নিজ মেধা-দক্ষতা আর সৌন্দযর্ দিয়ে দীঘির্দনের বিশাল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে শুরুতেই হোচট খেয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার মাঝপথেই হাল ছেড়ে দিয়ে যাত্রা স্থগিত করেছেন। তবে এরমধ্যে ব্যতিক্রম যে কেউ নেই, তা কিন্তু নয়। ঢাকাই চলচ্চিত্রে হাতে গোনা যে কজন শীষর্স্থানীয় নায়িকা আপন আলোয় উজ্জ্বল হয়ে অবিরত দ্যুতি ছড়াচ্ছেন, তার মধ্যে পূণির্মা একজন। বতর্মানে নতুনদের ভিড়েও ভালো কোনো চলচ্চিত্র নিমাের্ণর এখনো নিমার্তারা পূণির্মাকেই প্রাথমিক চিন্তা করেন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও পূণির্মা আগের মতো অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছেন না। স্বামী, সন্তান আর সংসারের ব্যস্ততায় শোবিজে অনেকটাই অনিয়মিত এখন তিনি।

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাহাঙ্গীর বিপ্লব
দিল আরা হানিফ পূণির্মা
পূণির্মার সবের্শষ বড়পদার্য় উপস্থিতি ছিল ২০১২ সালে। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ছবিটির নাম ছিল ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। এরপর ২০১৭ সালে ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত ‘টু বি কন্টিনিউড’ নাম মাত্র হলে মুক্তি পেলেও নিমার্তার সঙ্গে দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে চলচ্চিত্রটিকে আপন করে নিতে পারেননি পূণির্মা। তারপর লম্বা বিরতি। যদিও এই বিরতি নিয়ে অনেক গুজবের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। সংসার ভাঙার গুঞ্জনও বেশ ভারী হয়ে ওঠে। তবে এসব গুঞ্জন অপপ্রচার উল্লেখ করে পূণির্মা বলেন, ‘এসব মিথ্যে রটনা, এটা নিয়ে পরিষ্কার করে বলার আর কিছু নেই। আমি সংসার করছি, ভালো আছি। সংসারের পাশাপাশি মিডিয়াতেও কাজ করছি, উপস্থাপনা করছি। আমার প্রত্যেকটা বিষয় আমার স্বামী সাপোটর্ করছে। আমাদের বোঝাপড়া আগের মতোই আছে। এই বিরতি নেয়ার অন্যতম কারন হলো আমার মেয়ে উমাইজা। ছোট্ট উমাইজাকে রেখে কাজে ব্যস্ত হওয়াটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। আমি মনে করি জন্ম নেয়ার পর সন্তানের অন্তত ৩-৪ বছর মায়ের সান্নিধ্য পাওয়া জরুরি। এখন আমার মেয়ের বয়স ৪ বছর হয়েছে এখন ওকে রেখে কাজ করলে সমস্যা হবে না। আমি এখন চলচ্চিত্রে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবো মনে হচ্ছে।’ বতর্মানে পূণির্মার হাতে রয়েছে ‘জ্যাম’ এবং ‘গাঙচিল’ নামের দুটি সিনেমা। জ্যাম সিনেমাটি নিয়ে বেশ উচ্ছ¡সিত পূণির্মা। নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পরিচালনার এ ছবিতে পূণির্মার বিপরীতে অভিনয় করছেন ফেরদৌস। প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরীর গল্পে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন পান্থ শাহরিয়ার। ছবিটি নিমির্ত হচ্ছে প্রয়াত নায়ক মান্নার প্রযোজনা সংস্থা কৃতাঞ্জলি ফিল্মস থেকে। পূণির্মা বলেন, ‘এত দিন হাতে সিনেমা আসেনি তেমন নয়। আমি চেয়েছিলাম ভালো গল্পের একটি সিনেমা দিয়ে ফিরতে। অবশেষে এই সিনেমার গল্পটি ভালো লেগে গেল।’ পূণির্মা আরও বলেন, ‘এই সিনেমাতে অভিনয় করার পেছনে আরও একটি কারণ আছে। সেটি হলো সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে প্রয়াত মান্না ভাইয়ের প্রযোজনা সংস্থা থেকে। মান্না ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আর সিনেমার গল্পটি প্রয়াত সাংবাদিক আহমেদ জামান চৌধুরীর লেখা, সংলাপ তৈরি করছেন পান্থ শাহরিয়ার। অনেক গুণী মানুষ সম্পৃক্ত আছে এই সিনেমাটির সঙ্গে। এমন একটি সিনেমার সঙ্গে থাকতে পেরে ভালোই লাগছে।’ চলচ্চিত্রে দেখা না গেলেও মাঝেমধ্যেই টিভি পদার্য় দেখা মেলে পূণির্মার। কখনো নাটক, কখনো বিজ্ঞাপন, কখনো আবার কোনো রিয়েলিটি শোর বিচারক হিসেবে। এসবের বাইরেও প্রতি সপ্তাহেই উপস্থাপক হিসেবে দেখা দিচ্ছেন তিনি। আরটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে পূণির্মার উপস্থাপনায় সেলিব্রেটি শো ‘এবং পূণির্মা’। এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়েই প্রথমবার উপস্থাপনায় এসেছেন তিনি। ঘরোয়া আয়োজনে প্রাণবন্ত আড্ডা হয় অতিথিদের সঙ্গে। সৈয়দ আশিক রহমানের মূল ভাবনায় অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করছেন সোহেল রানা বিদ্যুৎ এবং গ্রন্থনা করছেন অনিন্দ্য মামুন। অনুষ্ঠানটি প্রসঙ্গে পূণির্মা বলেন, ‘এ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজটি বেশ উপভোগ করছি। অনেক বড় তারকা এখানে আসছেন। তাদের জানা অজানা নানান কথামালা নিয়ে বেশ উপভোগ্য হচ্ছে অনুষ্ঠানটি। প্রযোজককে আমি বলেছি, যাতে অতিথিদের সম্মান বজায় রেখে প্রশ্নগুলো সাজানো হয়। সে অনুপাতেই প্রশ্ন রাখা হচ্ছে। দশর্কদের কাছ থেকেও বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।’ তবে আপাতত কোনো শুটিং কিংবা শোবিজে কাজ করছেন না তিনি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন পূণির্মা। অবস্থা এত খারাপ হয়েছিল যে দুইদিন আইসিইউতেও রাখা হয়েছিল তাকে। টানা এক সপ্তাহ পর গত সপ্তাহে বাসায় ফিরেছেন পূণির্মা। কিন্তু চিকিৎসকের পরামশর্ অনুযায়ী সম্পূণর্ বিশ্রামে থাকতে হচ্ছে তাকে। পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য এটাই চিকিৎসকের পরামশর্। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর আরটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘এবং পূণির্মা’র শুটিংয়ে অংশ নিতে পারবেন তিনি। এমনকি সিনেমার শুটিংয়েও অংশ নেবেন বলে জানালেন তিনি। শুটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে না পরলেও পূণিমার্ মুঠোফোনে কথা বলছেন অনেকের সঙ্গে। মিডিয়ার সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ চলছে। পূণির্মা বলেন, ‘আমি আসলে সব সময় বলতে পারেন নাটক সিনেমা ও বিজ্ঞাপন চিত্রের মানুষদের সংস্পশের্ ছিলাম। তবে চলচ্চিত্রে একসময় যে দুদার্ন্ত ব্যস্ত ছিলাম সেই দিনগুলোর কথা অবশ্যই মনে পড়েছে। এ জন্য আমার মধ্যে কোনো হতাশা বা আক্ষেপ নেই। আগেই বলেছি আমি কিন্তু একেবারে নিবার্সনে যাইনি। শুধু বিরতিতে ছিলাম। আমার কাজ তো অভিনয় করা। একজন সৃজনশীল শিল্পী চাইলে সবার সঙ্গে সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।’ ছোটপদার্ না বড় পদার্Ñ কোন মাধ্যমকে বেশি প্রাধান্য দেবেন ভবিষ্যতে? উত্তরে পূণির্মা বলেন, ‘অভিনয় তো অভিনয়ই। আমার কাছে টিভি হোক আর চলচ্চিত্রই হোক অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ নেই। অনেকেই হয়তো ভেদাভেদ খোঁজেন কিন্তু আমি খুঁজি না। একজন পেশাদার শিল্পীর এই মনোভাব থাকা উচিৎ নয়।’