'মঞ্চই আমার প্রাণ'

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের আলোকিত কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। গানে গানেই পার করেছেন ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তার ১৯টি গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। সিনেমায় গানের পাশাপাশি স্টেজ শোতেও নিরলস গান করে চলেছেন। যদিও শোবিজে আঁখির পথচলা শুরু হয়েছিল ছোটবেলায় অভিনয় দিয়ে। ১৯৮৪ সালে নির্মাতা আমজাদ হোসেনের 'ভাত দে' সিনেমায় অভিনয় করে শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। গানের জন্যও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই তারকা।

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
আঁখি আলমগীর
হেমন্তের গোধুলী লগ্নে দিন যখন বিদায় নিতে রাত্রিকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, পাখিদের মতো ঘরে ফেরার তাড়ায় ব্যস্ত কর্মমুখী মানুষ, ইট-পাথরের নগরী প্রস্তুতি নিচ্ছে নিকষ-কালো আঁধার উদযাপনের- তখন কথা হয় গানের পাখি আঁখির সঙ্গে। মুঠোফোনে কড়া নাড়তেই ওপাশ থেকে সাড়া মেলে। কুশলাদি বিনিময়ের পর জানালেন নিজের ব্যস্ততার কথা। পরিবার, গান আর ব্যবসা নিয়ে দারুণ সময় কাটছে আঁখির। আয়েশ করে বিশ্রাম নেওয়া তো দূরের কথা, যেন দম ফেলারই সময় নেই তার। গানের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে যাওয়ার আগেই কথা শুরু হলো তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান 'মখমল' নিয়ে। চলতি বছরে ফ্যাশন ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করছেন তিনি। আঁখি আলমগীর বললেন, 'খুব ভালো চলছে প্রতিষ্ঠানটি। আপাতত অনলাইনে করছি। ভালো অর্ডার পাচ্ছি, সেলও হচ্ছে। বিভিন্ন এক্সিবিশনেও অংশ নিচ্ছে "মখমল"। চলতি মাসের ২৬-২৭ তারিখ সিলেটে এক্সিবিশনে এবং ডিসেম্বরের ১৬-১৭ ও ১৮ দেশের আরেকটি বড় এক্সিবিশনে অংশ নিচ্ছে "মখমল"। কোনো কিছু ভালোভাবে চালাতে গেলে তার পেছনে শ্রম ও সময় দিতে হয়। আমি আসলে দেখছি কোনো ব্যবসাই সহজ না। অনেক কঠিন। তারপরেও এর পেছনে সময় দিতে আমার ভালো লাগছে। "মখমল" নিয়ে আমার অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে।' শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকাই গান-অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ খুলেছেন রেস্তোরাঁ, কেউবা বুটিক হাউস, কেউ আবার দিয়েছেন পার্লার-জিমনেশিয়াম। ফ্যাশন হাউজ খোলা নিয়ে আঁখি আলমগীর বলেন, 'আর্থিক কারণে নয়, ভালো লাগার জায়গা থেকে আমি "মখমল" নিয়ে কাজ করছি। আমি বরাবরই ফ্যাশন সচেতন একজন মানুষ। ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমার ডিজাইন করা শাড়ির প্রশংসা অনেক পেয়েছি। সেটা নিজের জন্যই করেছি। তারপর ভাবলাম এই অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও কিছু করা যায় কিনা। যেটা হবে সবার জন্য।' 'মখমল' বিপণন ব্যবস্থা এখন অনলাইনে চললেও আউটলেট খোলা হবে। এই গায়িকার স্বপ্ন, 'মখমল' একদিন ছড়িয়ে পড়বে সারা বিশ্বে। ব্যবসা নিয়ে যতই ব্যস্ততা থাকুক, বিরতি নেই গানে। প্রায়ই নতুন গান নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু প্রকাশের আগে বিস্তারিত কিছু জানাতে নারাজ তিনি। তবে নতুন দুটি মিউজিক ভিডিও শিগগিরই প্রকাশ হবে উলেস্নখ করে আঁখি আলমগীর বলেন, 'নিজের ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে কাজ করছি ঠিক তবে নতুন মিউজিক ভিডিও দুটি অন্য প্রডাকশনের জন্য। দুটি কাজই খুব ভালো হয়েছে। প্রকাশের পর দর্শক-শ্রোতাদের ভালো লাগবে বলে আশা করছি।' করোনার পর ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরছে গানে। কণ্ঠশিল্পীরাও গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শিল্পীরা আবার স্টেজে ফিরছেন। কেমন অনুভূতি হচ্ছে জানতে চাইলে আঁখি আলমগীর বলেন, 'করোনার কারণে সারাবিশ্ব থমকে গেছে। অন্য পেশার মানুষ টুকটাক কাজের সুযোগ পেলেও আমাদের এ পেশায় সেটি ছিল না। অনেকে পেশা ছেড়ে অন্যদিকে মন দিয়েছেন। সম্প্রতি আবার স্টেজ শো শুরু হয়েছে। স্টেজ শোর মধ্য দিয়ে সবাই আবার ফিরে আসছেন।' শীত এলেই জমে ওঠে কনসার্ট। কনসার্টের এই সময়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকেন আঁখি আলমগীর। ছুটে চলেন কনসার্ট থেকে কনসার্টে। ইতোমধ্যে তিনি বেশকিছু কনসার্ট করেছেন। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত তার কনসার্টের সিডিউল বুক হয়ে আছে বলে জানান। বললেন, 'কনসার্ট শুরু হওয়ার পর থেকেই আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। চলতি মাসেও বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম করেছি। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত আমার অনেকগুলো প্রোগ্রামের সিডিউল দেওয়া আছে। আসলে কনসার্টের এই মৌসুমে আমাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়।' কণ্ঠশিল্পীদের আসল জায়গা স্টেজ প্রোগ্রাম হলেও অনেক শিল্পী নিজেকে এই মাধ্যমে মানিয়ে নিতে পারেন না। গান গাইতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অন্য মাধ্যমে। দর্শকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেও অনেকে পরাজিত হন। কিন্তু আঁখি ব্যতিক্রমদের একজন, এবং অন্যতম। করোনার পর কনসার্টের অনুভূতি নিয়ে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, 'কনসার্ট আমার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। এখানে গান গাইতে আমার এতো ভালো লাগে যা বলে বোঝাতে পারব না। দর্শকদের উন্মাদনা আমাকে শিল্পী হিসেবে বেঁচে থাকতে উৎসাহিত করে। ক্যারিয়ারের ২৮/২৯ বছরে কনসার্টকেই আমি আমার আসল জায়গা মনে করি। এখনো আমার বয়স আছে কনসার্ট করছি। এক সময় এই সময় ও শক্তি থাকবে না। তখন আমি কনসার্টকে খুব মিস করব।' ক্যারিয়ারে সহস্রাধিক গান করেছেন আঁখি আলমগীর। অনেক ধরনের গান করে প্রশংসিতও হয়েছেন তিনি। গাওয়া হয়নি এ রকম গান নিয়ে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, 'আমি লোক ধাঁচের গান গাইতে চাই না। কারণ, কমফোর্টেবল নই। এই ধাঁচের গানে আলাদা ভয়েজ কোয়ালিটি লাগে। আমার মনে হয়, আমার কণ্ঠটা আধুনিক গানের জন্যই পারফেক্ট। আমার ভেতরে যে আকুলতা ছিল, তা রুনা আন্টি (রুনা লায়লা) পূরণ করে দিয়েছেন। তাঁর সুরের গানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে, ওই ধাঁচের গানই আমি ভালো গাইতে পারি।'