সীমানা পেরিয়ে...
প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
মাতিয়ার রাফায়েল
ঢালিউডের মিষ্টি নায়িকা বলে বিবেচিত অধরা খান। বেশ কয়েক বছর ধরেই একক নায়িকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। মুক্তিও পেয়েছে কয়েকটি সিনেমা। হাতে রয়েছে একগুচ্ছ সিনেমার কাজ। এর মধ্যেই নতুন খবর দিলেন এ নায়িকা। জানালেন, প্রথমবার বাইরের দেশের সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন তিনি। নাম ঠিক না হওয়া এ সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে কলকাতা ও মালায়ালমের যৌথ প্রযোজনায়। অধরা বলেন, ২০১৯ সালেই সিনেমাটির জন্য অডিশন দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য এটা আটকে যায়। কলকাতা ও মালায়ালমের দুটি দেশের ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয় ও তার বন্ধন নিয়ে এই ছবিটির গল্প। এতে আমার চরিত্রটি পারিবারিক ধরনের।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু অভিনেত্রী প্রতিবেশী দেশের চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। অধরাও কী সেই পথেই হাঁটছেন? জবাবে তিনি বলেন, 'আমার অগ্রাধিকার থাকবে প্রথমত আমার দেশ, আমাদের সিনেমা এবং আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। পাশাপাশি বাইরের ইন্ডাস্ট্রিতে মন মতো গল্প ও চরিত্র পেলেই কাজ করব। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সেখানে নিয়মিত হতে চাই না।'
সারাবিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঠিক বছরখানেক আগে অধরা খান ঢালিউডে পদার্পণ করেন 'নায়ক' ছবির মাধ্যমে। একটা ভালো শুরুর মধ্যেই তাকে হোঁচট খেতে হয়। একজন নবীন শিল্পীর জন্য এই করোনাকে একটা বড় ধাক্কা মনে করেন কিনা জানতে চাইলে এ নায়িকা বলেন, 'দেখুন, আমি এই দুটো বছরের জন্য পিছিয়ে গেলাম নাকি এগিয়ে গেলাম সেটা জানি না। এতে শুধু আমিই নই- বিশ্বের প্রতিটি মানুষই সাফার করেছে। তখন আমার সিনেমাটি মাত্রই মুক্তি পেল। এরপর আরো কয়েকটা ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হই। করোনার সময়েও তিনটি সিনেমায় কাজ শুরু করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত সেগুলোর কাজও করোনার কারণে পিছিয়ে যায়। আসলে কিছু করার নেইও, একটু মন খারাপ করা ছাড়া। এখন সব মিলিয়েই মনে হয়, আমি আবার নতুন করে শুরু করছি। এই মহূর্তে আমি আট থেকে দশটি সিনেমার কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছি।'
করোনার জন্য ক্যারিয়ারের শুরুতে একটা বড় ধাক্কা খেলেও এর ওপর হতে যাওয়া 'কোভিড নাইনটিন ইন বাংলাদেশ' ছবিটিতে মূল চরিত্রে যুক্ত হতে পারাটাও সৌভাগ্যের মনে করেন অধরা খান। অধরার ভাষ্য মতে, 'করোনার ভেতরেও সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ভাই "কোভিড নাইনটিন ইন বাংলাদেশ" কাজ শুরু করেছিলেন। অনেক বড় মাপের রিয়েলিস্টিক পরিচালক তিনি। অনেক সময়ে খুব খারাপ সময়েও অনেক বড় কিছু হয়। সেরকমই একটি সিনেমাতে পারফর্মার হতে পারাটাও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। করোনার মধ্যেও আমার অভিনীত 'পাগলের মতো ভালোবাসি' মুক্তি পেয়েছে। এটাও আমার বড় পাওয়া ছিল।'
যে কোনো চলচ্চিত্র শিল্পের মতো ঢাকাই চলচ্চিত্রেও নির্দিষ্ট তারকার সঙ্গে জুটি বেঁধেই অনেকে বড় নায়িকা হয়েছেন। অধরা খান এ পর্যন্ত যে কয়টি সিনেমা করেছেন তার প্রায় সবটিই ভিন্ন ভিন্ন নায়ক। এ প্রসঙ্গটি তুলতেই কথা কেড়ে নিয়ে তিনি বলেন, 'এক্ষেত্রে নায়কের ক্যাপাবিলিটা আমাকে দেখতে হবে। আমাদের পূর্বসূরী রাজ্জাক, কবরী, আলমগীর, শাবানা, ফারুক, ববিতা, ওয়াসিম, রোজিনা তারা সবাই একে অপরকে ক্যারি করার মতো ক্যাপাবল ছিলেন। এরপর শাকিব খানও ক্যাপাবল। এখন সমসাময়িক কাউকেই একজন আরেকজনকে ক্যারি করার মতো ক্যাপাবল দেখি না। এখন আসলে সবার সঙ্গে সবার মিলেমিশে কাজ করাটাই ভালো। এখন সিনেমায় ভেরিয়েশনটাই বেশি দরকার। আর আমার মনে হয়, এখন জুটি নির্ভরতার পরিবর্তে গল্পনির্ভর সিনেমাই হওয়া উচিত। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেখার রুচিটাও কিন্তু বদলে যায়।'
এই 'ক্যারি' করার 'ক্যাপাবিলিটি' শুধু একজন নায়কেরই নয়, নির্মাতারও কাজের ওপর নির্ভর করে। বিশ্বের সব দেশেই নির্মাতার পরিচয়েই সিনেমা চলে। আমাদের দেশেও সেরকম ছিল।
এখন সেরকম নির্মাতা আছে কিনা? অধরার জবাব, 'এখনও আমাদের এই মাপের অনেক পরিচালক আছেন। যাদের কাজের গুণেই দর্শক তার সিনেমা দেখতে যান। যেমন- সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, সৈকত নাসির, অমিতাভ রেজা, অপূর্ব রানাসহ আরো অনেকেই আছেন।' এখন সেলিব্রিটিরাও ওটিটিতে কাজ করছেন। ওটিটি বা ছোটপর্দায় কাজ করার ইচ্ছে আছে কিনা, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অবশ্যই কাজ করব। ভালো গল্প, ভালো চিত্রনাট্য হলে কেন কাজ করব না। বড়পর্দার কাজগুলোও তো ওটিটিতে যাচ্ছে। আসলে বড়পর্দা বা ছোটপর্দা কিছু না। ভালো গল্প ও ভালো টেকনিক্যাল সাপোর্ট থাকলে এটা সব মাধ্যমের দর্শকই দেখবে। তবে ছোটপর্দায় কাজ করতে চাই না। ওটিটিতে সাবস্ক্রাইবার হতে হবে। নাটক সেরকম নয়। আমি চাই দর্শক আমার কাজ কিছুটা হলেও টাকা খরচ করে বা কষ্ট করে দেখুক।'