সিনেমা নির্মাণে নারী

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
অরুণা বিশ্বাস
বাংলাদেশে ছোটপর্দা, বড়পর্দা ও টিভিসি মিলিয়ে নারী অভিনেত্রী অসংখ্য। এর সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে ইউটিউব কেন্দ্রিক বা ওটিটি পস্ন্যাটফর্মের অভিনেত্রীর সংখ্যাও কম নয়। লাইম লাইটেই আছেন কয়েকশত অভিনেত্রী। এক নায়ক রুবেলই ৯৭ জন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এই নায়িকাদের নেতৃত্ব দেওয়া ছেলে পরিচালক অসংখ্য হলেও নারী পরিচালকের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। যদিও টিভির নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপন আর সিনেমার বড়পর্দা, সবখানেই আছে নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাংলাদেশের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা রেবেকা। এর পর চলচ্চিত্র পরিচালনায় দেখা গেছে সিনিয়র চলচ্চিত্র অভিনেত্রী কোহিনূর আক্তার সূচন্দা, সারাহ বেগম কবরী ও মৌসুমীকে- যারা অভিনয়ের দক্ষতাই পরিচালনার কাজে লাগিয়েছেন। কিন্তু তারাও বেশি দূর এগুতে পারেননি। একটা কিংবা দুটি সিনেমাতেই থেমে গেছে তাদের পরিচালনার দৌড়। এরপর লম্বা সময় কেটে গেলেও দেশীয় চলচ্চিত্রে উলেস্নখযোগ্য কোনো নারী চলচ্চিত্র পরিচালক পাওয়া যায়নি। মাঝখানে নারগিস আক্তার, শাহনেওয়াজ কাকলী, রওশন আরা নীপা ও সামিয়া জামানকে দেখা গেছে সিনেমা পরিচালনায়। তারাও বেশিদূর এগুতো পারেননি। তবে দুয়েক বছর ধরে সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েকজন নারী পরিচালক। যাদের শুরুটা হয় নাটক কিংবা টেলিফিল্ম পরিচালনার মাধ্যমে। এই তালিকায় রয়েছেন রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, চয়নিকা চৌধুরী এবং হৃদি হক। তাদের প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে একটি করে সরকারি অনুদানের সিনেমা। এরই মধ্যে কোনো সিনেমার কাজ শুরু হয়েছে এবং কোনোটার শুটিং পর্ব শেষ হয়েছে। কিন্তু পুরুষের তুলনায় নারী নির্মাতার সংখ্যা এত কম কেন? এ বিষয়ে তারার মেলার পক্ষ থেকে কয়েকজন নবীন ও প্রতিষ্ঠিত নির্মাতার সঙ্গে কথা হয়। তাদের বেশির ভাগেরই একই অভিমত; পরিচালনা একটি দুরূহ কাজ। এক্ষেত্রে নাটক পরিচালনা যতটা কঠিন, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি কঠিন সিনেমা পরিচালনার কাজ। তা ছাড়া দর্শকের কথাও ভাবতে হয়। কারণ, একটি প্রেক্ষাগৃহের দর্শকের সংখ্যা নারীর তুলনায় ছেলেরা আশি থেকে নব্বই ভাগ বেশি। তাদের বেশির ভাগেরই রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এক্ষেত্রে নারীদের কাউকে পরিচালক হতে হলে এ সম্পর্কে তার ব্যাপক পড়াশোনার প্রয়োজনও আছে। অনেক ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই এ কাজে নামতে হয়। বিষয়গুলো নিয়ে যেমনই ধারণা থাকুক- নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণে নারীর সংখ্যা এখন অনেকটা বেড়েছে কিন্তু সিনেমা পরিচালনায় এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্রটিই দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়ে কথা হয় চিত্রপরিচালক নারগিস আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'একটি নাটক বানানো যতটা সহজ, সিনেমা ততটা সহজ নয়; অনেক বড় বাজেট, বড় ক্যানভাস, আরো অনেক দর্শকের অংশগ্রহণেই একটি সিনেমা বানানো হয় আবার একজন নারীর নেতৃত্বে কাজ হবে এটা পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো মানতে চান না। তাই এক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে আছে এসব বাধাগুলো ডিঙিয়েই নারীকে প্রস্তুত হতে হয়। যে বাধাগুলো ছেলেদের ক্ষেত্রে থাকে না।' এ বিষয়ে অভিনেত্রী ও নাট্য পরিচালক হৃদি হক বলেন, 'পরিচালনা একটি কঠিন কাজ অনেক ধরনের প্রস্'তি নিয়ে এ কাজের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয় কিন্' আপনি যদি বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ও পোপট বিবেচনা করেন তাহলে দেখবেন এই পস্ন্যাটফর্মে নারীদের নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে-? চাইলেও অনেক নারী নির্মাতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছেন না।' পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ কম কেন এ প্রশ্নের উত্তরে চয়নিকা চৌধুরীও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'এর কারণ- এক. তারা পরিবারের সহযোগিতা পায় না। দুই, তাদের ধৈর্য অনেক কম এবং কম পরিশ্রমী। অনেকে আছেন যারা খুব মেধাবী কিন্তু পরিবার থেকে সহযোগিতা পান না। আবার অনেকে আছেন যারা কিছুই পারেন না, বোঝেনও না। এ নিয়ে পড়াশোনা বা পূর্ব প্রস্'তিও নেই। অথচ পরিচালনা করতে হলে সব বিষয়ে তাকে জানতে হবে। সবকিছু তার নখদর্পণে থাকতে হবে। কঠোর অনুশীলন ও ধৈর্য লাগবে। দর্শককে বুঝতে হবে, দর্শক তৈরি করার যোগ্যতা থাকতে হবে। এগুলো যাদের থাকবে না, তারাই সরে যাবে।' অনেক নারী নির্মাতা আছেন, তারা যেসব কাজ করছেন তাতে ছেলে নির্মাতার দৃষ্টিতে দেখানো নাটক বা চলচ্চিত্রেরই প্রতিফলন ঘটছে। নারীর চোখে দেখা ও অনুভবের চিত্র উঠে আসছে না। বলা যায়, এই নারী নির্মাতাদের কাজগুলো ছেলে নির্মাতাদের অনুকরণ ছাড়া কিছুই না। এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাতিয়া বানু শুকু বলেন- 'পুরুষ নির্মাতারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সব নারী চরিত্রের উপস্থাপন করেন- যেটা অনেক সময় হয়তো সঠিক হয় না। একজন মেয়ে হিসেবে আমি যখন মেয়েদের চরিত্রটা তুলে ধরি সেটার উপস্থাপনটা কিন্তু ভিন্নই হয়।'