'এখনকার গানে স্থায়িত্ব কম'

দেশের সংগীতাকাশে উজ্জ্বল এক তারকার নাম ডলি সায়ন্তনী। ১৫টি একক অ্যালবাম, শতাধিক দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবামে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি সাত শতাধিক পেস্ন-ব্যাক করেছেন তিনি।

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
ডলি সায়ন্তনী
আবার সরব সংগীতাঙ্গন... করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরেই সংগীতাঙ্গন অনেকটাই মন্থর ছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবার সরব হয়ে উঠছে সংগীতাঙ্গন। শিল্পীরা আবার পূর্ণ উদ্যমে গান করছেন। আমিও নতুন গান, টিভি অনুষ্ঠান ও স্টেজ শো করছি। বেশ কিছু নতুন গানেও কণ্ঠ দিয়েছি। নাজির মাহমুদ, মীর মাসুমসহ বেশ কয়েকজন সুরকারদের সুরে গান করেছি। চাচ্ছি বেশ কিছু ভালো মানের গান করতে। যেগুলো মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মনে রাখবেন। ছন্দে ফেরা সম্ভব... আসলে কোনো কারণে ছন্দ পতন হলে আগের গতিতে ফিরে আসতে সময় লাগে। করোনার কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি পূরণ সম্ভব নয়। নতুন গান ও স্টেজ শো প্রায় বন্ধ ছিল। এখন শুরু হয়েছে। স্টেজ শো করছি, কিন্তু সেখানে আগের ফ্লেবারটা দেখছি না। এটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে। আমাদের সবারই যার যার কাজে মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই কেবল আগের ছন্দে ফেরা সম্ভব। দোয়া করি করোনা মহামারি যেন সম্পূর্ণ দূর হয়। সব যেন আগের মতো স্বাভাবিক হয়। উপভোগ করি স্টেজ শো... আসলে গানের শিল্পীদের মূল জায়গা হলো স্টেজ। আমি নিজেও স্টেজটাকে খুব উপভোগ করি। করোনার কারণে প্রিয় এই জায়গাটাকে মিস করেছি অনেক। মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে পারফর্ম করা, শ্রোতাদের সরাসরি সাড়া-করতালি-এ সবই অনেক মিস করেছি। এখন ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে শো। আমি নিজেও শো করলাম বেশ কিছু। সামনে আরও কয়েকটি শোর দিন-তারিখ ঠিক হয়ে আছে। খুব ভালো লাগছে। দর্শক-শ্রোতাদের ভালোবাসার জন্যই আমরা শিল্পী। তাদের সামনে গান গাওয়ার চেয়ে বড় আনন্দের অনুভূতি আর কিছুতে নেই। তিন সপ্তাহের জন্য আমেরিকায় যাচ্ছি... আগামী মে মাসে তিন সপ্তাহের জন্য আমেরিকায় যাচ্ছি। সেখানে বেশ কিছু কনসার্ট করব। বিদেশে আরও একাধিক কনসার্ট নিয়ে কথা চলছে চূড়ান্ত না হলে বলতে পারছি না। নানা কারণে এগুতে পারছি না... নিজের ইউটিউব চ্যানেলটা নিয়ে অনেক ভালো পরিকল্পনা থাকলেও নানা কারণে এগুতে পারছি না। তারপরেও চেষ্টা করছি। এখানে আমার গানগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। এর মধ্যে কিছু কাজ শেষ করেছি। আশা করছি, আগামী বছরের বেশ কিছু গান প্রকাশ পাবে। যাচ্ছেতাই হলে চলবে না... সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছু। পরিবেশের পাশাপাশি বদলে গেছে গান প্রকাশের ধরন এবং মাধ্যম। ৮/১০টি গান নিয়ে এখন অ্যালবাম প্রকাশ হয় না। একক গান প্রকাশ পায় ইউটিউবে। এখন গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেখারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিক ভিডিও, ইউটিউবের গুরুত্ব আছে- তবে যাচ্ছেতাই হলে চলবে না। নিজে নিজে গান করে ইউটিউবে ছেড়ে দিচ্ছে আর তাতে প্রচুর ভিউ হচ্ছে। এতে কি পরিতৃপ্ত হচ্ছে ওই শিল্পী। কিন্তু আসলে কী সে শিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছে? এখনকার গানে স্থায়িত্ব নেই... এখন খুব কম গানই স্থায়িত্ব পাচ্ছে। পুরনো গানগুলো এখনো জনপ্রিয় হয়ে আছে। আগের গানে মাদকতা ছিল। কথা, সুর মিলে শিল্পীর কণ্ঠে দারুণ শোভা পেত। সব শ্রেণির শ্রোতার কাছে এসব গান গ্রহণযোগ্য। এখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও আগের গান ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম... প্রথমবারের মতো সংগীত বিষয়ক একটি রিয়েলিটি শোর বিচারক হয়েছি। প্রস্তাব পাওয়ার পর কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও পরে রাজি হয়ে যাই। খুব ভালো লাগছে। নতুন অভিজ্ঞতা। সত্যিই আমাদের দেশে অনেক প্রতিভা আছে। বিভিন্ন জেলার প্রতিযোগী যারা অনেক ভালো গান করে। এখানে ফোকগানের প্রতিযোগী বেশি পেয়েছি। খুব শিগগিরই এটি দেশ টিভিতে প্রচার শুরু হবে। বাণিজ্যিক চিন্তাই বেশি... ভালোলাগার মতো গান এখন খুব কম হচ্ছে। খুব দ্রম্নত গান প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা গানের পেছনে সময় ব্যয় করেছি। গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা প্রতিনিয়ত গান নিয়ে বসেছি। কথা ও সুর নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের পর শিল্পীর কণ্ঠে গান উঠতো। সবার প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর গান তৈরি হতো। সে জন্যই তখনকার গানগুলো এত জনপ্রিয় হয়ে আছে। কেউ একটি গান লিখলে তা দেখতাম, সুর করলে সবাই বলতাম দেখি কেমন হয়েছে, আবার শিল্পীর কণ্ঠে গানটি শুনতাম কেমন লাগছে। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। এখন কোনো গান লেখার পর তাতে হাত বসিয়ে পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। যেটা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক মনে করা হয়। এতে বাণিজ্যিক চিন্তাই বেশি।