ভোটের মাঠে গানের রানি

কেউ বলেন গানের কোকিল, কেউ বা ডাকেন কোকিলকণ্ঠী। আর চলচ্চিত্রের বাসিন্দাদের কাছে তিনি গানের রানি। চলচ্চিত্রের বাইরে আধুনিক, নজরুল সংগীত, লোকগীতিসহ সংগীতাঙ্গনের প্রায় সব শাখাতেই অবাধ বিচরণ তার। অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে বাংলা গানের ভাÐারকে সমৃদ্ধ করা এই গায়িকার নাম কনকচঁাপা। তিন হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। প্রকাশিত হয়েছে ৩৫টি একক অ্যালবাম। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশ এবং দেশের বাইরের সংগীতপিপাসু শ্রোতাদের মন জয় করে চলেছেন তিনি। কণ্ঠশিল্পীর খোলস থেকে বেরিয়ে এসে আপাতত তিনি তুমুল ব্যস্ত রাজনীতির মাঠে। কনকচঁাপার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন- মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কনকচঁাপা
হঠাৎ করেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বাংলা সংগীতাঙ্গনের আলোকিত এই কণ্ঠশিল্পী। যদিও ২০১৩ সালের ১৫ আগষ্ট বিএনপি চেয়ারপাসর্ন বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। আসন্ন জাতীয় নিবার্চনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসনে নিবার্চন করছেন। এবারের নিবার্চনে প্রাথীের্দর মনোনয়নপত্র বাতিলের হিড়িক পড়লেও কনকচঁাপার বেলায় ব্যতিক্রম। মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে তিনি নিবার্চনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। হঠাৎ কেন নিবার্চনে আসা? জবাবে কনকচঁাপা বলেন, ‘গান এবং গণমানুষ এ দুটি নিয়ে থাকতে চাই। ছোটবেলা থেকেই সাধারণ মানুষের প্রতি একধরনের ভালো লাগা জন্মেছে। সেই ভালো লাগা থেকেই নিবার্চন করার ইচ্ছা পোষণ করছি। এলাকাবাসী চাইছেন আমি এলাকা থেকে নিবার্চন করি। এজন্য এলাকাবাসীর ভালোবাসায় মানুষের সেবা করতে নিবার্চনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু রাজনীতিকদের অনেকেই বঁাকাচোখে দেখেন। প্রিয় তারকার রাজনীতিতে জড়ানোটাও অনেকে অপছন্দ করেন। এ বিষয়ে কনকচঁাপা বলেন, অনেকে বলেন রাজনীতিতে ভালো মানুষ নেই। ভালো মানুষ আসে না। ভেবে দেখলাম, রাজনীতিতে যদি ভালো মানুষ না আসে তাহলে জনগণের কী হবে? সেই চিন্তা থেকে জনগণের সেবা করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে আসা। আর এখন রাজনীতিতে সৎ, নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিকদের এগিয়ে আসা উচিত। ভোটারদের আগ্রহ নিয়ে কনকচঁাপা বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় এলাকার মানুষের উচ্ছ¡াস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন এটাই প্রত্যাশা। তবে আমার সব কিছু উপরওয়ালার ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তিনি চাইলে আমার এলাকার মানুষ আমাকে অবশ্যই বিজয়ী করবেন। বিজয়ী হলে জনগণের জন্য কি করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা করাই আমার রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। তাদের পাশে দঁাড়ানোই আমার ব্রত এবং এ কাজটি আমি অনেক আগে থেকেই করে আসছি। একাদশ সংসদ নিবার্চনে নিবাির্চত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মা ও শিশু এবং পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। দল এবং আমি যদি জয়ী হই, তাহলে দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে কোনো দায়িত্ব দেন সেটা মাথা পেতে নেব। আমি যেহেতু শোবিজের একজন কমীর্। তাই শিল্প সংস্কৃতির উন্নয়নেও বিশেষ ভ‚মিকা রাখার চেষ্টা করব। কনকচঁাপা জানান, মানব সেবায় এগিয়ে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার মায়ের কাছ থেকে। মায়ের আদশর্ তাকে উৎসাহিত করেছে জনকল্যাণে নিজেকে সোপদর্ করতে। ‘ছোট বেলা থেকেই আমি আমার মাকে সমাজসেবায় নিয়োজিত থাকতে দেখেছি। তার মানবসেবা দেখে দেখে বড় হয়েছি। দুই মুঠ ভাত থেকেও যে আরেকজনকে সহায়তা করা যায় নীরবে তা দেখে বিস্মিত হয়েছি। তার আদশের্ই বড় হয়েছি। বড় হয়ে যখন পেশাদার শিল্পী হয়ে রুটিরুজি শুরু করেছি, তখন থেকেই আমি অসহায়ের পাশে আছি। আমার গ্রাম কাজীপুরের মানুষের পাশে গায়ে গা লাগিয়ে দঁাড়াতে চাই। তাদের জন্য কিছু করতে চাই’Ñবলেন কনকচঁাপা। গানের জগতে তার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। নেই পারিবারিক কিংবা ব্যক্তি জীবনের কোনো অশান্তি। নাতিনাতনি, মেয়েজামাই, ছেলের বৌ নিয়ে সুখের সংসারে বেশ আরাম-আয়েশেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এ আরামদায়ক এই জীবন ছেড়ে ভোটযুদ্ধে নেমে মানুষের মন জয় করার মিশনে নেমেছেন তিনি। কনকচঁাপার আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে নিবার্চন করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। হেবিওয়েট এ প্রাথীর্র বিপরীতে নিবার্চন করাটা অনেক সাহসও বটে। তবে তিনি অবিচল, প্রত্যাশাও অনেক। তিনি বলেন, আমার যে আসন তাতে যে যুদ্ধ হবে তাতে আমি অপঘাতে মরেও যেতে পারি সে আশংকাও আমার আছে। থাকুক আমি সেসব পরোয়া করি না। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি সেই আফসোস থেকেই আমি দেশের জন্য আমার জীবন উৎসগর্ করতে চাই। নিজের শিক্ষার শেকড়ের উপর দঁাড়িয়েই আমি দিনবদলের খেলা খেলতে চাই। দেশের মানু?ষের ভালোবাসা, পরিবারের সমথর্ন আমার আছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি যুদ্ধে নামলাম হারার জন্য নয় কিন্তু হেরে গেলেও লজ্জিত হব না, কারণ আমি নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার।