অভিনয়ের জাদুকর চঞ্চল চৌধুরী

প্রকাশ | ১২ মে ২০২২, ০০:০০

ম মাসুদুর রহমান
দেশের আলোচিত ও চাহিদাসম্পন্ন তারকা শিল্পীদের মধ্যে একজন চঞ্চল চৌধুরী। তাকে অনেকে অভিনয়ের জাদুকর বলেও অ্যাখ্যা দেন। বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম কিংবা ওয়েব সিরিজ- সবখানেই যে কোনো চরিত্রেই কারিশমা দেখিয়ে দর্শককে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা আছে তার। টেলিভিশনের গন্ডি পেরিয়ে অভিনয়ের আলোকচ্ছটায় নিজেকে উদ্ভাসিত করেছেন সিনেপর্দাতেও। তার অভিনীত 'মনপুরা' সিনেমার 'সোনাই', 'আয়নাবাজি'র 'আয়না' ও 'দেবী'র 'মিসির আলী' চরিত্রগুলো দর্শকের কাছে দারুণ সাড়া ফেলে। দর্শকদের মন রাঙাতে আবার সিনেপর্দায় আসছেন এই অভিনেতা। আগামী ২০ মে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে চঞ্চল চৌধুরীর নতুন সিনেমা 'পাপ-পুণ্য'। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় এই সিনেমায় তাকে দেখা যাবে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এ সিনেমার শুটিংয়ের মজার সব ঘটনা সম্প্রতি উন্মোচিত হয়েছে। শুটিংকালীন পেছনের প্রায় ২৫ মিনিটের একটি ভিডিও কন্টেন্ট প্রকাশ করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। ২০ মে ছবিটি শুধু দেশে নয়, উত্তর আমেরিকার শতাধিক মাল্টিপেস্নক্সেও প্রদর্শিত হবে 'পাপ-পুণ্য'। ইতোমধ্যে এই ছবির প্রমো- টিজার ও দুটি গান দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। শিগগিরই আসবে পাপ-পুণ্যের ট্রেলার। এই সিনেমায় 'খোরশেদ চেয়ারম্যান' হয়ে রুপালি পর্দায় আসছেন চঞ্চল চৌধুরী। নতুন সিনেমাটি নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা আমার ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই পরিচালকের নতুন সিনেমা 'পাপ-পুণ্য'তে অভিনয় করেছি এবং চাঁদপুরে শুটিং হয়েছে। বারবার পিছিয়ে যাওয়া এই সিনেমাটি অবশেষে আগামী সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে ভেবে খুব ভালো লাগছে। এই সিনেমায় খোরশেদ চেয়ারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। আমার প্রতিটি সিনেমায় নতুন গল্প, নতুন চরিত্র থাকে। আমি মনে করি, আমার কাছের দর্শকের এক ধরনের চাওয়া তৈরি হয়েছে। আমিও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ বলেই যে কোনো ধরনের সিনেমা করতে পারি না। সেদিক থেকে 'পাপ-পুণ্য' সম্পূর্ণ নতুন গল্পের সিনেমা। খোরশেদ চেয়ারম্যান হয়ে উঠতে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করিনি। আমি বিশ্বাস করি দর্শক হলমুখী হবেন এবং তারা নিরাশ হবেন না।' 'হাওয়া' নামের আরও একটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে চলঞ্চল চৌধুরীর। দিন তারিখ ঠিক না হলেও সিনেমাটিও যে কোনো সময় মুক্তি পাবে। এটি পরিচালনা করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন। চঞ্চল বলেন, 'এই সিনেমার শুটিংয়ে অনেক দিন সাগরে ছিলাম। এটিও ভিন্ন ধরনের গল্পের সিনেমা। 'হাওয়া' আমার জন্য নতুন কিছু, দর্শকের জন্যও নতুন কিছু।' সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর চাহিদা থাকলেও কাজ করেন কম। বেছে বেছেই কেবল অভিনয় করেন নতুন চলচ্চিত্রে। বেশি সিনেমা করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভালো অভিনয় করাটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন এই অভিনেতা। 'পাপ-পুণ্য' এবং 'হাওয়া' মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত নতুন সিনেমা করব না বলেও জানান তিনি। চঞ্চল চৌধুরী ওটিটি পস্নাটফর্মেও কাজ করেন। গত বছরটার প্রায় সময় তিনি ওয়েব ফিল্ম নিয়েই সরব ছিলেন। সম্প্রতি চরকিতে প্রচারিত নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত সিরিজ 'ষ'-এর দ্বিতীয় পর্ব 'মিষ্টি কিছু'তে চঞ্চলের অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এই অভিনেতা এখন নাটকের চেয়ে ওয়েব কনটেন্টেই বেশি সিরিয়াস বলে অনেকেই বলাবলি করলেও ভিন্ন মত চঞ্চলের। তিনি বলেন, 'শিল্পীর কাজ অভিনয় করা। আমি একজন শিল্পী, তাই অভিনয়ই আমার সব। তা যে কোনো মাধ্যমে হোক। গত বছর ওয়েব ফিল্ম বেশি করেছি। তার একটাই কারণ- নতুন গল্প, নতুন ভাবনা, নতুন চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওয়েব ফিল্ম নির্মাণ করছেন পরিচালকরা। সেজন্য নাটক কমই করেছি। গল্প ও চরিত্র ভালো পাচ্ছি বলে এখন কিছু নাটক করছি।' চলচ্চিত্র ও ওটিটিতে ব্যস্ততা বাড়ায় আগের তুলনায় নাটকে কম কাজ করছেন চঞ্চল চৌধুরী। এক সময় ঈদের নাটকে প্রচুর কাজ করলেও এখন তেমনটা দেখা যায় না। তবু গেল ঈদে কিছু নাটকে কাজ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় 'হারাধনের একটি বাগান', দীপু হাজরার 'সুশীল ফ্যামেলি', নিয়াজ মাহবুবের পরিচালনায় ৭ পর্বের 'পিকচার ম্যান', হানিফ সংকেতের 'ধন্য জনের অন্য মন'সহ আরও বেশ কিছু নাটকে দেখা গেছে এই অভিনেতাকে। অসংখ্য নাটকের ভিড়ে প্রশংসিত হয়েছে তার অভিনয়। এবারের ঈদে চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত একটি নাটকে দেখা গেছে তার ছেলে শুদ্ধকে। বৃন্দাবন দাসের রচনা ও দীপু হাজরার পরিচালনায় 'সুশীল ফ্যামেলি' নাটকে অভিনয় করেছেন ১২ বছরের শুদ্ধ। শুটিংয়ের সময়ই খবরটি আলোচনায় আসে। ছেলের অভিনয় ইচ্ছে নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'শুদ্ধ'র যথেষ্ট ইচ্ছা আছে অভিনয়ের। শুধু ইচ্ছায় তো আর কাজ হবে না। আগে তো শুটিং দেখতে হবে, তারপর অভিনয়টা শিখতে হবে তারপর তো অভিনয় করতে হবে। চঞ্চল চৌধুরীর ছেলে বলেই যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েই খুব সহজে অভিনেতা হয়ে যাবে, ব্যাপারটা এরকম নয়। তবে ওর দেখাটা শুরু হলো। শুদ্ধকে সবাই আশীর্বাদ করলেই আমি খুশি।' টিভি নাটকের মান নিয়ে অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। দর্শকদের পাশাপাশি অনেক অভিনয়শিল্পীও বিষয়টি স্বীকার করেন। নানা মন্তব্যও করেন। এ নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'ভালো-মন্দ মিলিয়েই সবকিছু। টেলিভিশন নাটকের মান মাঝে একটু পড়ে গেলেও এখন সেখান থেকে উঠে এসেছে। গত তিন বছরে টেলিভিশন নাটকের কোয়ালিটি অনেক ভালো করছে। এ ছাড়া, বড় কথা হচ্ছে- ওটিটিতে এখন ভালো কাজ হচ্ছে। এজন্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও ভালো নাটক চাইছে। ভেতরে ভেতরে এ ধরনের শুরু হয়েছে।'