নিষিদ্ধ প্রত্যাবতর্ন এবং সারিকা

২০১৩ সালের মাঝামাঝি এসে ক্যারিয়ারে যেন অশুভ শক্তি ভর করে। হঠাৎ করেই নাটক ও মডেলিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। নাম ডাক থাকলেও নাটকে খুব বেশি দেখা মেলে না তার। পরের বছর ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী মাহিম করিমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কোলজুড়ে একটা সন্তানও আসে। স্বামী-সন্তান আর সংসার সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সারিকা...

প্রকাশ | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
সারিকা জাহান
শুরুটা মডেলিং দিয়ে। এরপর টিভি নাটকে অভিনয়। তারপর সুগম পথ। খুব সহজেই আলোচনায় আসেন তিনি। ক্রমশ ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। পরিচিতিও পেয়ে যান এক নামে। বলছি, সারিকা জাহানের কথা। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পযর্ন্ত শোবিজ অঙ্গনে আলোড়ন তুললেও ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে তার কাজের পরিধি। আর ২০১৩ সালের মাঝামাঝি এসে ক্যারিয়ারে যেন অশুভ শক্তি ভর করে। হঠাৎ করেই নাটক ও মডেলিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। নাম ডাক থাকলেও নাটকে খুব বেশি দেখা মেলে না তার। এর কারণও অবশ্য আছে। পরের বছর ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী মাহিম করিমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কোল জুড়ে একটা সন্তানও আসে। স্বামী-সন্তান আর সংসার সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সারিকা। ফেসবুক থেকেও দূরে সরিয়ে রাখেন নিজেকে। তাতে বেশ কৌত‚হল সৃষ্টি হয় ভক্তদের মাঝে। প্রশ্ন জাগে, সারিকা কি অভিনয় ছেড়ে দিলেন? অভিনয়ে প্রত্যাবতের্নর মধ্য দিয়ে ভক্তদের এতসব প্রশ্নের জবাব দেন সারিকা। দীঘর্ বিরতির পর নাটকে অভিনয় শুরু করেন। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু নিজের দোষে অভিনয় থেকে ছিটকে পড়েন। অশিল্পীসুলভ আচরণের অভিযোগে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছিল এই মডেল ও অভিনেত্রীকে। গত ১ আগস্ট থেকে তাকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। অভিযোগ ছিলÑ পঁাচটি এক ঘণ্টা ও সাত পবের্র একটি ধারাবাহিকে শুটিংয়ের জন্য গত ২১ মাচর্ নেপাল যাওয়ার কথা ছিল অভিনেত্রী সারিকার। সে অনুযায়ী সারিকা সিডিউল দিয়েছিলেন। অগ্রিম পারিশ্রমিক ৫০ হাজার টাকা, রিটানর্ টিকেট ও নাটকের চিত্রনাট্য দেয়া হয়েছিল তাকে। আগের দিন ২০ মাচর্ সারিকার সঙ্গে শুটিং ইউনিট যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সময়মতো বিমানবন্দর পেঁৗছবেন। যথারীতি ২১ মাচর্ শুটিং ইউনিট নেপালে রওনা দেয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দর গেলে সারিকাকে পাওয়া যায়নি। তখন যোগাযোগ করলে সারিকার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। সারিকা ছাড়াই শুটিং ইউনিট নেপাল পেঁৗছায়। ফলে প্রযোজক বোরহান খান আথির্কভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন। নিষিদ্ধ সময়ের নিদির্ষ্ট দিন পযর্ন্ত যেতে হয়নি সারিকাকে। তিন মাস যেতে না যেতেই ফিরেন অভিনয়ে। এর আগে নিজের ভুল স্বীকার করে আবেদন করলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে সংগঠনটি। ফেসবুকেও নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চান। নিজেকে শুধরিয়ে আবার এগিয়ে যেতে চান সামনে। সারিকা বলেন, ‘আমার কিছু ভুলত্রæটি ছিল, এ জন্যই ক্ষমা চেয়েছি। সংগঠন বরাবর চিঠি দিয়েছি, প্রকাশ্যে ফেসবুকেও ক্ষমা চেয়েছি। সব সময়ই চেষ্টা করেছি সহকমীের্দর মন জোগিয়ে কাজ করতে। তবু কিছু ভুল তো হয়েই যায়।’ এরপর ভুল শুধরিয়ে নতুন উদ্যোমে অভিনয়ে ফিরেন সারিকা। গত ৩ নভেম্বর আবার ক্যামেরার সামনে দঁাড়ান এ অভিনেত্রী। সকাল আহমেদের নাটক ‘ব্রেকিং নিউজ’-এ অভিনয় করেন। ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত হবে এটি। নাটকে সারিকার সহশিল্পী সজল। এরপর ৮ নভেম্বর থেকে টানা তিনদিন শুটিং করেন ‘শূন্যস্থান পূরণ’ নাটকে। ১৩ নভেম্বর শুটিং করেন অন্য আরেকটি নাটকে। সম্প্রতি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ‘ঘাস ফড়িংয়ের প্রেম’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছেন সারিকা। এটি নিমার্ণ করেছেন এস এম তারেক। নাটকটিতে চিত্রনায়ক ইমন ও সারিকা ছাড়াও অভিনয় করেছেন মারজুক রাসেল ও মুনিরা মিঠু। এদিকে ভিন্ন এক চরিত্রে অভিনয় করলেন সারিকা। মাবরুর রশীদ বান্নাহর পরিচালনায় ‘সেলাই দিদিমনি’ টেলিছবিতে গামের্ন্টসকমীর্ চরিত্রে দেখা যাবে তাকে। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ইরফান সাজ্জাদ। এবারই প্রথম একসঙ্গে কাজ করলেন তারা। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ‘সেলাই দিদিমনি’ টেলি ছবিটি ক্লাব ১১ এন্টারটেইনমেন্টের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হবে। শুধু নাটকেই নন, বিজ্ঞাপনও করতে যাচ্ছেন সারিকা। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বড় ব্র্যান্ডের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেও কাজ করার কথা হয়েছে। চ‚ড়ান্ত হলেই জানাতে চাচ্ছি। নতুন করে শুরুর এই সময়ে ভালোই ব্যস্ত হয়ে গেলাম। এখন থেকে এমন ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কাজ করব’। মডেলিং ও অভিনয়ে ১০ বছরের ক্যারিয়ার তার। বরাবরই সারিকার বিরুদ্ধে নিমার্তাদের অভিযোগ, তিনি প্রায়ই শিডিউল ফঁাসান। খুব কমই এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে সারিকা বলেন, ‘এসব শুনলে সত্যিই কষ্ট পাই। এই ১০ বছরে তিনশ’র বেশি কাজ করেছি। এর মধ্যে হয়তো একটা-দুইটা কাজ অ্যাকসিডেন্টলি ঠিকভাবে করতে পারিনি। সেই দু-একটা ঘটনা দিয়ে মানুষ পুরো ক্যারিয়ারটা বিচার করে। বাকি ২৯৮টি কাজ যে ভালোবাসা দিয়ে করলাম, তার কি কোনো মূল্য থাকবে না? সেই দু-একটা কাজের জন্য নিজেকেও কিন্তু কাঠগড়ায় তুলি।’ ভবিষ্যৎ ভাবনা কী? জানতে চাইলে সারিকা বলেন, ‘যতটা পেয়েছি তাতেই খুশি। তবে ভেতরে একটা হতাশা থাকেই, নয়তো আরো ভালো কিছু করতে পারতাম। প্রফেশনাল ও পাসোর্নাল লাইফ ব্যালান্স করতে গিয়ে নিজেকে বঞ্চিত করেছি হয়তো। এখন সব কাটিয়ে উঠেছি। এবার নতুন উদ্যমে কাজ করব। নিশ্চয়ই তার ফল পাব।’