হতাশা দিয়েই শুরু চলচ্চিত্রের বছর

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোটর্
বিসজর্ন সিনেমার দৃশ্যে জয়া আহসান
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ যেন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প। কিছুতেই বিপযর্য় থেকে কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের সবচেয়ে বড় এই বিনোদন মাধ্যমটি। গত কয়েক বছর ধরেই দেশীয় চলচ্চিত্র দশর্ক-খরায় ভুগছে। মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো ছবিই যেন ব্যবসা সফল হতে পারছিল না। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালও বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। বাণিজ্যিক ও বিকল্প ধারার ছবি মিলিয়ে গত বছর মোট ৫৬টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তবে খাতা-কলমে এই ৫৬ ছবির মধ্যে যৌথ প্রযোজনার রয়েছে চারটি। আর আমদানি করা ৪টি। নিরেট দেশি ছবি তাহলে দঁাড়ায় ৪৮টি। এত গেল গত বছরের চিত্র, আর দশর্ক-খরার গল্প। নতুন বছরের চিত্র আরও করুণ। দশর্ক নয়, বছরের শুরুতেই সিনেমা-খরায় পড়তে হলো ঢালিউডকে। এ কারণে নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশায় বুক বঁাধার পরিবতের্ হতাশা আর হাহাকারের পাশাপাশি দীঘর্শ্বাস ফেলতে হচ্ছে ছবি ব্যবসায়ীদের। অবিশ্বাস্য খবর হচ্ছে, মুক্তি দেয়ার মতো কোনো ছবিই নেই ঢালিউডে। যার কারণে বহুল বিতির্কত সেই সাফটা চুক্তির মাধ্যমে আমদানি করা বিদেশি ছবি দিয়েই যাত্রা শুরু করছে চলচ্চিত্রের নতুন বছর। আগামীকাল শুক্রবার নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ। আর প্রথম সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে ভারতের ‘বিসজর্ন’ সিনেমাটি। যদিও ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। তারপরেও এটাকে বাংলাদেশে প্রদশের্ন আপত্তি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। বিষয়টি নিয়ে ‘বিসজর্ন’ সিনেমাটির আমিদানকারক মধুমিতা মুভিজ প্রেক্ষাগৃহের কণর্ধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘আমাদেরও ভালো লাগতো দেশি সিনেমা দিয়ে বছরটা শুরু করতে পারলে। কিন্তু ৪ তারিখ মুক্তি দেয়ার মতো কোনো ছবি তৈরি নেই। তাই ‘বিসজর্ন’ ছবিটি আমদানি করে মুক্তি দিচ্ছি। বিদেশি ছবি হলেও এই ছবিটির ক্ষেত্রে একটা দেশীয় ছেঁায়া রয়েছে। সেটি হলো ছবিটির নায়িকা আমাদের সবার প্রিয় জয়া আহসান। কলকাতার এই ছবিটিতে অভিনয় করে তুমুল প্রশংসিত হয়েছিলেন জয়া। তার অভিনয়ের সুনাম পৌঁছে গিয়েছিল বলিউডেও। আশা করছি, ছবিটি মুক্তি পেলে দশর্ক বেশ উপভোগ করবেন।’ শুধু ‘বিসজর্ন’ নয়, ‘বিসজর্ন’ ছবিটির সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’সহ কলকাতার অনেক ছবিই মুক্তি পাচ্ছে বছরের শুরুতেই। অনেকেই প্রশ্ন করছেন কলকাতার এত পুরনো ছবি এখানে হলে চলবে কিনা! তা ছাড়া এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য নতুন কোনো হুমকি কিনাÑ এ বিষয়ে নওশাদ বলেন, ‘একজন হলের মালিকের কাছে আবেগের চেয়ে ব্যবসাটা মুখ্য। যখন চাহিদা অনুযায়ী জোগানের ঘাটতি দেখা দেয় তখনই বিকল্প পথ ভাবতে হয়। সিনেমাতেও তাই হচ্ছে। আমাদের দেশের ছবি নেই। সেটা তো আর হল মালিকদের দায় নয়। তারা তো হল টিকিয়ে রাখতে নতুন ছবি চালানোর চেষ্টা করবেই। যখন আমরা দেশের ভালো ছবি পাই সেটাও কিন্তু বড় আয়োজন করে মুক্তি দেই। আমদানি করি ভালো ছবির ঘাটতি পূরণ করতে। এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই বলেই মনে করি।’ কলকাতার ছবির পাশাপাশি দেশের বড় বড় মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলোতে বাংলা ছবির পরিবতের্ দেখানো হচ্ছে হলিউডের ছবি। এ সংকটের আশু সমাধান নেই বলেই জানালেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আড়াইশ থেকে এ বছরই দুইশতে নেমে আসবে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বতর্মানে ২৮৩ জন নিমার্তার ভেতর অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় অবস্থানে আছেন। নিমাের্ণ সক্রিয় আছেন কেবল ৩০ থেকে ৩৫ জন। চলচ্চিত্র শিল্পের বতর্মান অবস্থা নিয়ে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘প্রযোজকরা লগ্নি না করলে নিমার্তাদের কী করার আছে! নিমার্তার কাজ নিমার্ণ করা। প্রযোজকরা নিমাের্ণ আগ্রহী হচ্ছেন না, কারণ তারা লগ্নি করে অথর্ ফেরত পাচ্ছেন না। অথর্ ফেরত পাচ্ছেন না কারণ পরিবেশনার জটিলতা। পরিবেশকরা এমন সিস্টেম করে রেখেছে যার ফলে সিনেমা হলে মুক্তি দিলে টিকেটের টাকা ভাগ হতে হতে প্রযোজকের কাছে খুব সীমিত অংশই আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ই টিকিটিং সিস্টেম চালু না করলে এ প্রযোজক কখনোই তার লগ্নিকৃত অথর্ ফেরত পাবেন না। ছবি বানানো এখন যত সহজ, মুক্তি দেয়া তার চেয়েও কঠিন। পরিবেশকদের সৃষ্ট এ জটিলতার কারণে তারা মূলত নিজের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছেন। তাদের আমদানিনিভর্র ছবিও এ জন্য সাফল্য পাচ্ছে না। আমরাতো আমাদের চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কিন্তু কাজটা প্রযোজকদের। দীঘির্দন আইনি জটিলতায় প্রযোজক সমিতির নিবার্চন স্থগিত আছে। সে জটিলতা অতিক্রম করতে পারলে প্রযোজক সমিতির সক্রিয় ভ‚মিকাই এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পারবে। তারা চাপ দিতে পারবেন পরিবেশকদের।’ কিন্তু যে সংগঠনকে বলা হয়, চলচ্চিত্রের মাদার অগার্নাইজেশন, সেই প্রযোজক সমিতিই তো অচল হয়ে পড়ে আছে দীঘির্দন ধরে। দলাদলি আর বিভক্তি হয়ে চলচ্চিত্র সমিতির নেতারা এখন যে যার মতো চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন। নিবার্চনও স্থগিত হয়ে আছে কয়েক বছর ধরে। বিলুপ্তির পথ থেকে চলচ্চিত্র শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে প্রযোজক সমিতিরই সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই।